কুড়িগ্রামে তলিয়ে গেছে ৩০০ হেক্টর ফসলি জমি


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৫:১৬ অপরাহ্ন, ২২শে মে ২০২৫


কুড়িগ্রামে তলিয়ে গেছে ৩০০ হেক্টর ফসলি জমি
ছবি: প্রতিনিধি

‘কয়টা দিন পাইলে ধানগুলা মাচাত উঠতো। এতো খরচ করি আবাদ করলোং। খাবারে পাইনা মনে হয়।’ কথাগুলো বলছিলেন রাজারহাট উপজেলার তিস্তাপাড়ের কৃষক মামুনুল ইসলাম। চলতি মৌসুমে চার একর জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। দুই একর জমির ধান ইতোমধ্যে কেটে মারাই করতে পেরেছেন,কিন্তু শুকতে পারেননি বৃষ্টির কারণে।


মামুনুল ইসলাম বলেন,‘বাকি দুই একর তলিয়ে গেছে উজানের ঢলের পানিতে। ঘরের ধান না শুকাতে পারলে এসব ধান কেটে কি করতাম। আগের গুলা তো নষ্ট হয়ে যেইতেছে। এগুলা কাটি কোডাই থুই।’


আরও পড়ুন: সুইপার শুন্য থাকায় কুড়িগ্রামের ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল যেন নিজেই রোগী


কৃষক মামুনুলের মতো কুড়িগ্রামের শত কৃষকের ধান,বাদাম,ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসল এখন পানির নিচে। কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও উজানে বৃষ্টির ফলে তিস্তা ও ধরলাপাড়ের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে হয়েছে এসব ফসল নষ্টের পথে। 


কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (খামারবাড়ি) তথ্য বলছে,জেলায় একশ’ ২১ হেক্টর বোরো আবাদ,৭৫ হেক্টর বাদাম,৪১ হেক্টর পাট,৪৯ হেক্টর বিভিন্ন সবজির ক্ষেত। কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছে,পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে ৭৫ হেক্টর বাদাম ক্ষেতসহ মোট তিনশ’ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল। টানা বৃষ্টি থাকায় নতুন করে ফসলহানির শঙ্কা বাড়ছে। কৃষকরা বলছেন, অন্যবারের থেকে এবার আগাম বৃষ্টি শুরু হওয়ায় বেশি ক্ষতি হচ্ছে। 


বৃহস্পতিবার (২২ মে) সকালে রাজারহাট উপজেলার তিস্তাপাড়ের বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে কৃষকদের দুর্দশা। কেউ কেউ কলাগাছের ভেলা সাজিয়ে পানির নিচে ধান কাটছে। তবে রোদ না থাকায় এসব কাটা ধান ঠিকমতো ঘরে উঠবে কিনা তা নিয়েও শঙ্কায় কৃষকরা। কেউ কেউ ঘুরে দেখছেন ডুবন্ত ধান ক্ষেত। এছাড়াও বাদাম,পাট,তিল,মরিচসহ বিভিন্ন সবজি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। 


ভুট্টা নিয়ে দূর্ভোগে পড়েছেন অনেকে। রাজারহাট উপজেলার চর বিদ্যানন্দ গ্রামের কৃষক মাইদুল ইসলাম বলেন,প্রতিবছর ঠিকঠাক বাদাম তুলে ঘরে নেই। কোন সমস্যা হয়না। কিন্তু এবার এতো তাড়াতাড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে বাদাম তোলার সময়ের আগে তলিয়ে গেল। চরের ছয় একর বাদাম ক্ষেত পানির নিচে আমার। কিছু তুলেছি,শুকাবো কীভাবে বুঝতে পারছিনা। পাশের গ্রামের কৃষক শরিফুল ইসলাম বলেন,দুই একর ভুট্টা পানির নিচ থেকে তুললাম। এখনও বাদাম সেরকম হয় নাই। খরচ উঠবেনা। আগাম এভাবে বৃষ্টি আসবে সব তলায় যাবে জানলে বাদাম লাগাতাম না।


রাজারহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুরন্নাহার সাথী বলেন,অনেক কৃষক পরামর্শ মোতাবেক বাদাম তুলে নিয়েছে। এতে কিছুটা হলেও ক্ষতি থেকে রেহাই পাবে তারা।


উলিপুর উপজেলার কয়েকটি এলাকার কৃষক ফসল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। পানিতে তলিয়ে যাওয়া ধান ও বাদাম তোলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাতেও বড় ক্ষতিতে পড়বেন অনেকে, এমনটা বলছেন কৃষকরা। উলিপুর উপজেলার হোসেন আলী বলেন,বাদাম চাষের দেনার টাকা মানুষে পায়। বাদামও পাবোনা। টাকা শোধ হবে কীভাবে বুঝতে পারছিনা।


এছাড়াও রোদ না থাকায় কাটা মাড়াই করা ধান নিয়ে বিপাকে অনেক কৃষক। ভেজা ধান ঘরে চারা গজাচ্ছে। সদর উপজেলা তালুককালুয়া গ্রামের একরামুল হক বলেন,ছয় বিঘা জমির ধান কেটেছি। মাড়াই করতে পারছিনা। নষ্ট হয়েছে যাচ্ছে। নাগেশ্বরী উপজেলার কালিগঞ্জ এলাকার ইমন বলেন,৬০ মন ধান ঘরে গাজাচ্ছে। আজ একটু রোদ পাইছি। কিন্তু তার আগে ধান নষ্ট হয়ে গেছে।


কুড়িগ্রাম কৃষি আবহাওয়া পর্য়বেক্ষাণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, বৃষ্টি পরিস্থিতি আরও দুই,একদিন স্থায়ী হতে পারে। এরপরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে। তবে সামনে বর্ষার দিন চলে আসছে। তখন বৃষ্টি বাড়বে।


কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ীর উপ পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন,এ অঞ্চলের কৃষকরা স্বাভাবিকভাবে জৈষ্ঠ্যের শেষ থেকে বৃষ্টি মাথায় রেখে চাষাবাদ করেন। কিন্তু এবারে আগেভাগে বৃষ্টি এসে পড়েছে। ফলে কৃষকরা কিছুটা ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। সেপ্টেম্বর মাস থেকে একদম বৃষ্টি ছিলনা। ফলে এ সময়ে এসে বৃষ্টির পরিমাণ বেড়েছে। কিছু জাগায় বৃষ্টির পানি নামতে না পারার কারণে এমনটা হয়েছে।


তিনি বলেন, পরবর্তীতে ওইসব জমিতে কম জীবনকাল জাতের ধান বা আগাম ধান লাগানো গেলে হয়তো এটা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। কৃষকদের জলবায়ুর পরিবর্তনের সাথে খাপ খেয়ে চাষাবাদের জন্য সচেতন করা হচ্ছে। একইসাথে মাড়াই করা ধান ঘরের ভেতর বেশি পরিচর্যা দিলে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে পারে কৃষক। পরিপক্ক বাদাম আগাম ওঠালেও তেমন ক্ষতি হবেনা বলেও জানান এ কর্মকর্তা।


আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে চাঁদার টাকা না পেয়ে বাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ


কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে,জেলার ধরলা,তিস্তা,ব্রহ্মপুত্র,দুধকুমার,গঙ্গাধরসহ ছোটবড় নদনদীর পানি বেড়েছে। তবে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ধরলা ছাড়া অন্য নদনদীর পানি কিছুটা হ্রাস পাচ্ছে। এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আগামী তিনদিন নদনদীর পানি কিছুটা হ্রাস পেতে পেরে।


কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাফিকুল হাসান বলেন,কয়েকদিনের ভারী ও মাঝারি বৃষ্টিতে নদ-নদীর পানি কিছুটা বেড়েছে। এবার বৃষ্টি একটু আগাম দেখা যাচ্ছে। তবে এখনি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হবার সম্ভাবনা নেই। 


এসডি/