ময়মনসিংহে ৩২ মণের ‘সাদাময়না’, স্বপ্নের দাম ১৫ লাখ


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:০৭ অপরাহ্ন, ২৮শে মে ২০২৫


ময়মনসিংহে ৩২ মণের ‘সাদাময়না’, স্বপ্নের দাম ১৫ লাখ
‘সাদাময়না’, স্বপ্নের দাম ১৫ লাখ। ছীব: প্রতিনিধি

চারদিকে ঈদের আমেজ। গরুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাক শুরু হয়ে গেছে। এরই মধ্যে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার এক গ্রামে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে একটি গরু নাম তার ‘সাদাময়না’। বিশালদেহী, নজরকাড়া, সাদা-কালো রঙের এই ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড় গরুটি যেন এলাকার অঘোষিত সেলিব্রিটি।


আরও পড়ুন: গণহত্যা দিবস উপলক্ষে ময়মনসিংহে আলোচনা


গরুটির মালিক মো. নুরুল কাইয়ুম স্বপন। পেশায় একজন পল্লী চিকিৎসক হলেও পশু লালনে তাঁর মনটা পড়ে থাকে অন্যরকম মায়ায়। তাঁর বাড়ি ফুলবাড়িয়া উপজেলার কুশমাইল ইউনিয়নের চকরাধাকানাই গ্রামে। তাঁর বাড়ির উঠোনে থাকা বিশালদেহী গরু ‘সাদাময়না’ এখন এলাকাজুড়ে চমক হয়ে দাঁড়িয়েছে।


চার বছর ধরে নিজ হাতে লালন-পালন করা এই ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড় গরুটি দেখতে প্রতিদিনই ভিড় জমাচ্ছেন আশপাশের মানুষ। সাদাময়নার ওজন প্রায় ১৩ শ কেজি বা প্রায় ৩২ মণ। লম্বায় ৯ ফুট, উচ্চতা সাড়ে ৫ ফুট, আর রাউন্ড প্রায় ৮ ফুটের বেশি। গায়ের রং সাদা-কালো মেশানো বলে গরুটিকে আদর করে নাম রাখা হয়েছে ‘সাদাময়না’।


স্বপন জানান, সংকরায়নে জন্ম নেওয়ার পর থেকে একেবারে প্রাকৃতিক উপায়ে গরুটিকে লালন-পালন করেছেন। কোনো ইনজেকশন বা কৃত্রিম খাদ্য ব্যবহার করা হয়নি। গরুটির যত্নে প্রতিদিন দুইবার গোসল করানো হয়। খাওয়ানো হয় ১০ কেজি গুড়াভূষি, ৫ কেজি খড় ও ৫ কেজি কচি ঘাস। মাসে গরুটির খাবারের পেছনে খরচ পড়ে ২০ হাজার টাকার মতো।


‘এই গরুটা আমাদের পরিবারের একজন সদস্যের মতো,’ বলেন স্বপনের ছেলে ঈমাম মেহেদী। তিনি জানান, গরুটিকে ছোটবেলা থেকেই তারা পরিবারের সদস্যের মতো যত্নে রেখেছেন। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় মতো খাওয়ানো, গোসল করানো, হাঁটানো এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে বাড়তি নজর দেওয়া হয়। গরমের জন্য গোয়ালঘরে ২৪ ঘন্টা সিলিং ফ্যান চালু রাখা হয়।


চকরাধাকানাই গ্রামের বাসিন্দা মো. ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আমি এমন গরু আগে কোনো দিন দেখিনি। শুধু বড় গরুই না, ওর শরীরে এক ধরনের ঝলমলে সৌন্দর্য আছে। স্বপন ভাই খুবই ভালোভাবে গরুটিকে দেখাশোনা করেন।’


গত বছরের কোরবানির ঈদের সময় গরুটির দাম উঠেছিল সাড়ে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত। তবে স্বপনের প্রত্যাশা ছিল ১০ লাখ টাকা। সেই কারণে শেষ পর্যন্ত গরুটি বিক্রি করেননি। এবার ঈদ সামনে রেখে গরুটিকে আরও যত্ন করে প্রস্তুত করছেন তিনি।


‘এটা শুধু একটা গরু না, আমার শ্রম, ভালোবাসা, আর বিশ্বাসের ফল,’ বলেন স্বপন। তিনি আশা করছেন, এবার কেউ হয়তো তাঁর এই মেহনতের মূল্য ১৫ লাখ টাকা দিতে রাজি হবেন।


প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অনেকেই গরুটি দেখতে আসছেন স্বপনের বাড়িতে। কেউ কেউ ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও শেয়ার করছেন। এলাকার মানুষের ভাষায়, এটা যেন ঈদের আগে এক নতুন ধরনের উৎসব হয়ে দাঁড়িয়েছে।


আরও পড়ুন: অটো চলাচলে নিষেধাজ্ঞা, ময়মনসিংহে সিটি করপোরেশন ঘেরাও


সাদাময়নাকে এবার কোরবানির হাটে নেওয়া হবে কি না এমন প্রশ্নে স্বপন বলেন, ‘যদি আশানুরূপ দাম পাই, তাহলে এখান থেকেই বিক্রি করব। নইলে আবার কোরবানির পর রেখে দেব। এটা শুধু গরু না, এটা আমাদের আবেগ।’


গরু দেখেই ঈদের আনন্দ, আর যদি দাম মেলে, তবেই স্বপ্নপূরণ এই ভাবনাই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে স্বপনের মনে। ঈদের বাজারে সাদাময়না কেমন দাম পায়, সেটিই এখন দেখার অপেক্ষা।



এসডি/