ইসরায়েলের অর্থনীতি একাধিক সংঘাতের চাপ সহ্য করতে পারবে?
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪:২৪ অপরাহ্ন, ২১শে জুন ২০২৫

দখলদার ইসরায়েল গাজার পাশাপাশি এখন ইরানের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়িয়েছে। এর কী ধরনের প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে?
যুদ্ধ ব্যয়বহুল। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রাণহানির বিষয়টি বাদ দিলেও, যুদ্ধ চালাতে, অস্ত্র কিনতেও অনেক অর্থ লাগে। এর পাশাপাশি প্রয়োজন হয় দক্ষ জনশক্তির। ইসরায়েল এখন সেই প্রয়োজনগুলি টের পাচ্ছে। ২০২৩-এর ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালানোর পর থেকে শুরু হয়েছে সংঘাত। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ইসরায়েলসহ একাধিক দেশ হামাসকে জঙ্গি সংগঠন হিসাবে চিহ্নিত করেছে। এই হামলার পর হেজবুল্লাহ ও হুতির সঙ্গেও সংঘাতে জড়িয়েছে ইসরায়েল। গত সপ্তাহে ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রে আক্রমণ চালায় ইসরায়েল। তারপর ইসরায়েল-ইরান সংঘাত প্রবল আকার নিয়েছে। এর ফলে কতটা চাপে পড়েছে ইসরায়েলের অর্থনীতি?
অতিরিক্ত শূন্যপদ এই সংঘাতের কারণে চাপ বাড়ছে ইসরায়েলের অর্থনীতিতে। মিলিটারি রিজার্ভ ফোর্সে থাকা অনেককে যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। রিজার্ভ ফোর্সে থাকা এই কর্মীরা অন্যসময়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করেন, তারা যুদ্ধে যাওয়ায় ওইসব ক্ষেত্রগুলিতে কর্মীসংখ্যা কমছে। এর মধ্যেই ফিলিস্তিনিদের ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করা হচ্ছে। ফলে কর্মক্ষেত্রে শূন্যপদ বাড়ছে। এর মধ্যে সামরিক খাতে খরচ অনেকটাই বেড়েছে।
আরও পড়ুন: ইরান নিয়ে ‘ভুল তথ্য’ দিয়েছেন গ্যাবার্ড: ডোনাল্ড ট্রাম্প
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউটে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট জানাচ্ছে, ২০২৪-এ ইসরায়েলের সামরিক খাতে খরচ ৬৫ শতাংশ বেড়ে প্রায় চার হাজার ৬৫০ কোটি মার্কিন ডলার ছুঁয়েছে। ইসরায়েল জিডিপির আট দশমিক আট শতাংশ খরচ করছে সামরিক খাতে। সামরিক খাতে এর থেকেও বেশি খরচ করে একমাত্র ইউক্রেন। ইসরায়েলের একটি পত্রিকায় জানানো হয়েছে এই বছর সরকারের খরচ সবমিলিয়ে প্রায় ২১ শতাংশ বাড়বে। এটি ইসরায়েলের ইতিহাসে সবথেকে বেশি বরাদ্দ বলে মনে করা হচ্ছে।
একের পর এক সংঘাত ক্রমেই চাপ সৃষ্টি করছে ইসরায়েলের অর্থনীতিতে। তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ইতাই আতের জানান, এই মুহূর্তে সামরিক ক্ষেত্রে আক্রমণ এবং রক্ষণ দুইই খুব ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে। এর প্রভাব পড়বে ইসরায়েলের বাজেটে। ঘাটতি, জিডিপি ও দেশের ঋণের মাত্রার উপরও তা প্রভাব ফেলবে।
তিনি জানান, শুক্রবার (১৩ জুন) ইরানের সঙ্গে সংঘাত শুরু হওয়ার পরে উৎপাদন শিল্প, বাণিজ্য ক্ষেত্র, তথ্যপ্রযুক্তি এবং শিক্ষা ক্ষেত্রেও কাজে অনুপস্থিত থেকেছেন বহু মানুষ। বাড়ছে কর অর্থনীতিতে চাপ কমাতে করও বাড়াচ্ছে দেশের সরকার। দেশের পণ্যের উপর ভ্যালু এডেড ট্যাক্স (ভ্যাট) এই বছরের শুরুতেই ১৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৮ শতাংশ হয়েছে। কর্মীদের বেতন থেকে কাটা হচ্ছে স্বাস্থ্য কর। বেড়েছে জাতীয় বিমার অর্থও।
হাইফা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক বেনিয়ামিন বেনতাল জানান, ব্যয় দেড় বছরে অনেক বেড়ে গেলেও ইসরায়েলের অর্থনীতি স্থিতিশীল থেকেছে। পর্যটন, উৎপাদন শিল্প, নির্মাণ শিল্প বা কৃষি ক্ষেত্র, প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা, এবং খুচরো খাদ্য শিল্প স্থিতিশীল থেকেছে। ২০২৪-এ দেশের অর্থনীতি প্রায় ৫৪ হাজার কোটি মার্কিন ডলারে ঠেকেছে যা বিগত দুই বছরের তুলনায় বেশি। প্রযুক্তি ক্ষেত্রের উপর নির্ভরশীল অর্থনীতি ইসরায়েলের অর্থনীতি হাইটেক প্রযুক্তি শিল্পের উপর নির্ভরশীল।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলের সিসি ক্যামেরা হ্যাক করছে ইরান, শহরজুড়ে আতঙ্ক
আমেরিকার একটি বিনিয়োগ ব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী, ইসরায়েলের প্রায় ১২ শতাংশ কর্মী এই শিল্পে কর্মরত। মোট আয়করের ২৫ শতাংশ আসে এই ক্ষেত্র থেকে। দেশের মোট রপ্তানির ৬৪ শতাংশ হাইটেক প্রযুক্তি ক্ষেত্র থেকে হয়। মোট জিডিপির ২০ শতাংশ আসে এই ক্ষেত্র থেকে।
তবে ইসরায়েল ইনোভেশান ইন্ডাস্ট্রির রিপোর্ট বলছে, ২০২২ থেকে এই ক্ষেত্রে কর্মী সংখ্যা স্থির আছে। বিগত এক দশকের মধ্যে ২০২৪-এ প্রথমবার এই ক্ষেত্রে কর্মী সংখ্যা কমেছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা কর বাড়ার কারণে এই ক্ষেত্রে কর্মী সংখ্যা আরো কমতে পারে।
তবে আতেরের মতে, বিনিয়োগকারীরা এখনো আস্থা হারাননি। তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীরা হয়তো ভাবছেন এই সংঘাতের দ্রুত নিষ্পত্তি হবে, ইরানের পারমাণবিক কাঠামো ধ্বংস হবে এবং অর্থনীতি নিজের জায়গায় ফিরে আসবে। তবে এই সংঘাত যদি দ্রুত না থামে, তাহলে ইসরায়েলের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল নয়।
এমএল/