কক্সবাজারের সাবেক ডিসি ও জেলা জজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলা
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪:৪৮ পিএম, ১১ই সেপ্টেম্বর ২০২৫

কক্সবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. রুহুল আমিন ও সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মো. সাদিকুল ইসলাম তালুকদারসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলায় অভিযোগ গঠন পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছে আসামি পক্ষের আইনজীবী। এর প্রেক্ষিতে অভিযোগের গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর প্রথম ধার্য দিন বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বাদির অসমাপ্ত সাক্ষ্য গ্রহণের কথা থাকলেও তা হয়নি। আগামী ২০ অক্টোবর পরবর্তী ধার্য দিনে এই সাক্ষ্য গ্রহণ করবে বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কক্সবাজারে পরিচালিত চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মিজানুর রহমানের ‘সার্কিট কোর্ট’ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মোকাররম হোসেন।
তিনি জানান, মাতারবাড়ীতে কায়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের ২৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলা থেকে ডিসির নাম বাদ দিতে নথি জালিয়াতি হয় বলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে উঠে আসে। এ সংক্রান্ত মামলায় গত ১ জুলাই চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মিজানুর রহমান অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছিলেন। এরপর বাদির সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। কিন্তু বাদির অসমাপ্ত সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) মামলার ধার্য দিন ছিল। এর মধ্যে আসামি পক্ষ অভিযোগ গ্রহণের বিষয়টি যথাযথ প্রক্রিয়ায় হয়নি বলে আপত্তি তোলে অভিযোগ গঠন পুনর্বিবেচনার জন্য একটি আবেদন করেছেন। ফলে বাদির অসমাপ্ত সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। তার জন্য আগামি ২০ অক্টোবর দিন ধার্য করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: চার দাবিতে ইডেন কলেজ শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ
দুদক আইনজীবী বলেন, মামলার এই পর্যায়ে এসে এ ধরণের আবেদনের কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। মূলত মামলার সময় ক্ষেপনের জন্য এমন আবেদন। এটা করতে চাইলে উচ্চ আদালতে করতে পারে। উচ্চ আদালতই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবে। যে আদালতে অভিযোগ গঠন হয়েছে ওই আদালতে অভিযোগ গঠন পুনর্বিবেচনার আবেদন করা যায় না।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে মাতারবাড়ীর বাসিন্দা এ কে এম কায়সারুল ইসলাম চৌধুরী এই দুর্নীতির ঘটনায় তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিনকে প্রধান আসামি করে ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেন দুদককে। তবে মামলার পরপরই তৎকালীন জেলা ও দায়রা জজ সাদিকুল ইসলাম তালুকদার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো কাগজপত্র থেকে ১ নম্বর আসামি রুহুল আমিনের নাম বাদ দিয়ে তা পাঠান। বিষয়টি জানাজানির পর বাদী কায়সারুল একই আদালতে রুহুল আমিন, সাদিকুল ইসলামসহ সাতজনের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগে আরেকটি মামলা করেন। সেই মামলার তদন্ত শেষে দুদকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপপরিচালক রিয়াজ উদ্দিন ২০২৪ সালের ১ জুলাই পাঁচজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর বাদীপক্ষের আইনজীবী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী মামলার সব নথিপত্র আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ফরিদ আহমদের কাছে দাখিল করেন। পরদিন (২০ নভেম্বর) সকালে আদালতের কর্মচারী সৈয়দ আকবর নথিপত্র কক্সবাজার ডাকঘরে জমা দেওয়ার জন্য রওনা দিলে তাঁকে আবার আদালতে ফিরিয়ে এনে খামটি স্টেনোগ্রাফার জাফর আহমদের মাধ্যমে জেলা ও দায়রা জজের কাছে পাঠানো হয়। পরে নানা কৌশলে আবেদন থেকে জেলা প্রশাসকের নাম বাদ দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: বিশেষ ফ্লাইটে দেশে ফিরছেন জামালরা
তদন্তে আরও উঠে আসে, ফৌজদারি দরখাস্ত রেজিস্ট্রারে ২৮ জন আসামির নাম থাকলেও পরে ৩টি পৃষ্ঠা পাল্টে ১ নম্বর আসামি হিসেবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. জাফর আলমের নাম বসানো হয় এবং বাদীর স্বাক্ষর জাল করে ২৮ জনের জায়গায় ২৭ জনকে আসামি দেখিয়ে দুদকে নথি পাঠানো হয়। এই জাল স্বাক্ষরের বিষয়টি সিআইডির হস্তলিপি বিশারদের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে।
দুদক ও আদালত সূত্র জানায়, মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ১ হাজার ৪১৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ক্ষতিপূরণ বাবদ বরাদ্দ ছিল ২৩৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে চিংড়িঘের বাবদ ৪৬ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। ওই অর্থের মধ্যে মনগড়া ২৫টি ঘের দেখিয়ে ১৯ কোটি ৮২ লাখ টাকার বেশি তুলে আত্মসাৎ করা হয়। আরও বিভিন্ন উপায়ে আত্মসাৎ করা হয় টাকা।
কক্সবাজারের সাবেক ডিসি রুহুল আমিন ২০১৭ সালে দুর্নীতির মামলায় কারাগারে যান। পরে তিনি জামিনে বের হন। এর আগে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। সাবেক জেলা ও দায়রা জজ সাদিকুল ইসলাম বর্তমানে অবসরে রয়েছেন। অন্য তিন আসামি হলেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নাজির স্বপন কান্তি পাল এবং আদালতের স্টেনোগ্রাফার জাফর আহমদ। বৃহস্পতিবার আদালতের কাঠগড়ায় পাঁচ আসামি উপস্থিত ছিলেন।
এসএ/