Logo

ভাড়া ঠিক করে এয়ারলাইন্স, দায় কেন ট্রাভেল এজেন্সি: আরেফ

profile picture
বিশেষ প্রতিবেদক
১৫ নভেম্বর, ২০২৫, ২০:১৭
25Shares
ভাড়া ঠিক করে এয়ারলাইন্স, দায় কেন ট্রাভেল এজেন্সি: আরেফ
ছবি প্রতিনিধি।

দেশের ছোট ও মাঝারি ট্রাভেল এজেন্সি শিল্প বন্ধ করে দিতে পারে এমন প্রস্তাবিত আইন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)-এর সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘এই আইনের ফলে সাড়ে চার হাজার ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসা হুমকির মুখে পড়বে। দেড় কোটি যাত্রীকে সেবা দেওয়ার যে বিশাল কাঠামো বহু বছর ধরে গড়ে উঠেছে, তা ধ্বংস হয়ে যাবে। শেষ পর্যন্ত পুরো ব্যবস্থা চলে যাবে কিছু মাফিয়া ও সিন্ডিকেটের হাতে।’

শনিবার (১৫ নভেম্বর) ট্রাভেল এজেন্সি নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ ২০২৫ (খসড়া)এর বিভিন্ন “অযৌক্তিক ও ব্যবসাবান্ধব নয়” এমন ধারা বাতিলের দাবিতে নয়া পল্টনে আটাব আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি বলেন, দেশের সব ট্রাভেল এজেন্সিকে সমানভাবে এয়ারলাইন্সের সঙ্গে ব্যবসা করার সুযোগ দিতে হবে। বর্তমানে সব এজেন্সি সমান টিকিটিং সুবিধা না পাওয়ায় বাজারে বৈষম্য তৈরি হয়।

বিজ্ঞাপন

তিনি অভিযোগ করেন, ‘এয়ারলাইন্স যখন ভাড়া বাড়ায় কিংবা মাত্র ২০/৩০ জনের হাতে মধ্যপ্রাচ্যের টিকিট দিয়ে সিন্ডিকেট তৈরি করে, তখন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। কিন্তু দোষারোপ করা হয় ট্রাভেল এজেন্সিগুলোকে, যাদের হাতে ভাড়া নির্ধারণের ক্ষমতা নেই।’

আবদুস সালাম আরেফ বলেন, কারা টিকিটের দাম বাড়ায়, কারা দেশ থেকে মানুষ পাচার করে, কারা অনলাইন প্ল্যাটফর্মের নামে হাজার কোটি টাকা লুট করে বিদেশে পালিয়ে গেছে, তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনুন। সাধারণ ট্রাভেল এজেন্সির ওপর কঠোরতা চাপিয়ে কোনো লাভ নেই, কারণ ছোট ও সাধারন ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসায়ীরা তো পালিয়ে যায় না।’ অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন।

প্রস্তাবিত আইনে ১০ লাখ টাকা জামানত রাখার যে বিধান যুক্ত করা হচ্ছে, তা বাস্তবসম্মত নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। দেশের অর্থনৈতিক চাপে ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যে বিপদে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “ব্যাংকের সুদ, অফিস ব্যয়, কর্মচারীদের বেতন সব কিছু বেড়েছে। কিন্তু ব্যবসা বাড়েনি। এমন সময় ১০ লাখ টাকার জামানত চাপিয়ে দিলে হাজারো ছোট প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারের উদ্দেশ্য বুঝি এবং বাজারে শৃঙ্খলা আনার প্রয়াসকে স্বাগত জানাই। কিন্তু অনুরোধ, এমন আইন করবেন না যাতে বৈধ ট্রাভেল এজেন্সিগুলো ব্যবসা পরিচালনা করতে না পারে। বরং আইন করুন যাতে সবাই সমানভাবে টিকিটিং সুবিধা পায়, প্যাকেজ ব্যবসা করতে পারে এবং সিন্ডিকেট বন্ধ হয়।’

তিনি উল্লেখ করেন, অনলাইনভিত্তিক কিছু অসাধু প্রতিষ্ঠান হাজার কোটি টাকা লুট করে বিদেশে পালিয়ে গেছে। ‘এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন, মনিটরিং বাড়ান। কিন্তু সব ট্রাভেল এজেন্সির ওপর একসঙ্গে কঠোর আইন চাপিয়ে দিলে পুরো শিল্প খাত সংকটে পড়বে,’ বলেন তিনি। আবদুস সালাম আরেফ আশা প্রকাশ করেন, “সরকার যেভাবে বাজারে শৃঙ্খলা আনার লক্ষ্য নিয়ে আইন করতে চাইছে, আমরা তাতে সহযোগিতা করবো। সরকারও আমাদের সহযোগিতা করবে বলে বিশ্বাস করি।’

কর্মসূচিতে উপস্থিত বক্তারা বলেন, প্রস্তাবিত খসড়া আইন বাস্তবায়িত হলে দেশের অফলাইন ট্রাভেল এজেন্সিগুলো চরম সংকটে পড়বে এবং পর্যটন খাতের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হবে। মানববন্ধনে বক্তারা উল্লেখ করেন, অফলাইন এজেন্সির জন্য ১০ লাখ টাকা জামানত, এজেন্সি টু এজেন্সি টিকেট ক্রয় বিক্রয় নিষিদ্ধকরণ, এবং জেল জরিমানার অযৌক্তিক বৃদ্ধি এসব ধারা ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবে।

বিজ্ঞাপন

আটাবের সাবেক মহাসচিব আফসিয়া জান্নাত সালেহ বলেন,ট্রাভেল ও ট্যুরিজম খাত দীর্ঘদিন ধরেই নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে কঠোর শর্ত আরোপ করলে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে, কর্মসংস্থান কমবে এবং সাধারণ যাত্রী সেবা থেকেও বঞ্চিত হবেন।

দাবিগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন ১০ লাখ টাকা জামানতের প্রস্তাব বাতিল করতে হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ট্রাভেল এজেন্সির জন্য এ পরিমাণ জামানত অযৌক্তিক এবং বাস্তবসম্মত নয়। এতে বিপুল সংখ্যক উদ্যোক্তা ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারবেন না। এজেন্সি-টু-এজেন্সি টিকেট ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধের বিধান প্রত্যাহার এটি পুরো ট্রাভেল শিল্পকে অচল করে দেবে। এতে যাত্রী সেবা ব্যাহত হবে, বেকারত্ব বাড়বে এবং ছোট উদ্যোক্তারা ধ্বংস হবে। জেল-জরিমানার বৃদ্ধি বাতিল করে পূর্বের বিধান বহাল রাখতে হবে।

কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, অতিরিক্ত শাস্তির বিধান অযৌক্তিক হয়রানি বাড়াবে। নীতিগত ত্রুটির কারণে কোনো সৎ ব্যবসায়ী যেন বিপদে না পড়েন। এমন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা। সংগঠনকে দুর্বল করার অভিযোগ মানববন্ধনে বক্তারা আরও অভিযোগ করেন যে, আটাব কমিটি বাতিল করে সংগঠনকে দুর্বল করার একটি পরিকল্পিত সিন্ডিকেট তৎপর রয়েছে। তাদের মতে, সংগঠন দুর্বল হলে দেশের পুরো ট্রাভেল ট্রেডই বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।

বিজ্ঞাপন

অনলাইন ট্রাভেল এজেন্টদের বিষয়ে সতর্কতা বক্তারা বলেন, অনলাইন ট্রাভেল এজেন্টদের অনিয়ম রোধে কঠোর আইন থাকতে পারে, তবে এতে যেন কোনো নিরপরাধ উদ্যোক্তা হয়রানির শিকার না হন, এটি নিশ্চিত করতে হবে।

সরকারের উদ্দেশে চূড়ান্ত আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, “খসড়া আইনের বিতর্কিত ধারা সংশোধন করে একটি অংশগ্রহণমূলক, ব্যবসাবান্ধব ও বাস্তবসম্মত আইন প্রণয়ন এখন সময়ের দাবি। দেশের পর্যটন শিল্প ও কর্মসংস্থান রক্ষার স্বার্থে ন্যায্য সিদ্ধান্ত গ্রহণে সরকার এগিয়ে আসবে বলে আমরা আশা করি।’

বিজ্ঞাপন

কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন আটাবের সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ, সাবেক মহাসচিব আফসিয়া জান্নাত সালেহ, সাবেক সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান হিরু, সাবেক উপ-মহাসচিব দোহা চৌধুরী, মিসের আলী, ইমাম উদ্দিন, সবুজ ফরাজী, মাহমুদুল আলম সিদ্দিকী, মঈনুল হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, মোজাফফর হোসেন ও আশরাফ প্রমুখ।

জেবি/এসডি
Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD