শেখ হাসিনার বিবাহ বার্ষিকীর দিনেই রায় দিচ্ছে ট্রাইব্যুনাল

আজ ১৭ নভেম্বর—সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রয়াত পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম. এ. ওয়াজেদ মিয়ার বিবাহ বার্ষিকী। ১৯৬৭ সালের এই দিনে তারা বৈবাহিক জীবন শুরু করেন। ২০০৯ সালের ৯ মে ড. ওয়াজেদ মিয়া মৃত্যুবরণ করেন।
বিজ্ঞাপন
ঠিক এই দিনেই ঘোষিত হতে যাচ্ছে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো সরকারপ্রধানের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়। চব্বিশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে সংঘটিত নৃশংস ঘটনার দায়ে শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে রায় দেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। দেশের আইন ও বিচারব্যবস্থায় এটি এক অভূতপূর্ব অধ্যায় তৈরি করতে যাচ্ছে।
মামলাটিতে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। পাঁচটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচারকার্য শুরু হয়, যার মূল বিষয়- নির্দেশ, উসকানি, পরিকল্পনা, সহায়তা, সম্পৃক্ততা ও অপরাধ ঠেকাতে ব্যর্থতা।
আরও পড়ুন:
বিজ্ঞাপন
তিন আসামির বিরুদ্ধে আনা পাঁচ অভিযোগ হলো-
১. গণভবনের সংবাদ সম্মেলনে উসকানিমূলক বক্তব্য
১৪ জুলাই দেওয়া বক্তব্যের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও রাজনৈতিক কর্মীদের মাধ্যমে দমন-পীড়ন, হামলা ও হত্যার অভিযোগ—যা আসামিদের প্ররোচনা ও নির্দেশের ফল বলে দাবি রাষ্ট্রপক্ষের।
বিজ্ঞাপন
২. হেলিকপ্টার–ড্রোন থেকে গুলি চালানোর নির্দেশ
অভিযোগ রয়েছে, আন্দোলন দমনে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা, যা বাস্তবায়নে কামাল ও মামুন সংশ্লিষ্ট বাহিনীকে নির্দেশনা দেন।
৩. রংপুরে ছাত্র আবু সাঈদ হত্যা
বিজ্ঞাপন
১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ছাত্র আবু সাঈদের মৃত্যু—প্রসিকিউশনের দাবি, এটি পরিকল্পিত এবং তিনজন আসামির জ্ঞাতসারে সংঘটিত।
৪. চাঁনখারপুলে ছয় ছাত্র হত্যাকাণ্ড
৫ আগস্ট চাঁনখারপুলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে ছয় শিক্ষার্থীর মৃত্যু; প্রসিকিউশন বলছে, এই ঘটনায়ও নির্দেশ ও সহায়তার ভূমিকা ছিল তিন আসামির।
বিজ্ঞাপন
৫. আশুলিয়ায় হত্যা ও লাশ পোড়ানো
একই দিনে আশুলিয়ায় ছয়জনকে হত্যা, লাশ পোড়ানো এবং গুরুতর আহত আরও একজনকে আগুনে নিক্ষেপের অভিযোগ রয়েছে—যা প্রসিকিউশনের মতে পরিকল্পিত অপরাধ।
আরও পড়ুন:
বিজ্ঞাপন
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম দাবি করেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যেসব প্রমাণ পেশ করা হয়েছে, তা যেকোনো আদালতেই অপরাধ প্রমাণে যথেষ্ট।
অন্যদিকে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন সম্পূর্ণ ভিন্ন মত প্রকাশ করেন। তার বক্তব্য, ১৪ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত শেখ হাসিনা কোনো হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন—এ রকম কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। বরং তিনি নিহত আবু সাঈদের পরিবারকে সহায়তা করেছিলেন। তিনি তিন আসামিরই খালাস প্রত্যাশা করেন।
আজকের রায়কে দেশের বিচার ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে। এখন সবার দৃষ্টি নিবদ্ধ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চূড়ান্ত রায়ের দিকে, যা দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।








