ডিগ্রি নেই তবুও তিনি সর্বরোগের ডাক্তার!


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


ডিগ্রি নেই তবুও তিনি সর্বরোগের ডাক্তার!

চিকিৎসা সেবা দেয়ার মত  ডিগ্রি নেই তবুও সর্বরোগের ডাক্তার সেজে চিকিৎসা দিচ্ছে আল আমিন নামের কতিপয় ডাক্তার। মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার বাল্লা বাজারে ফিজিও থেরাপি সেন্টার খুলে সর্বরোগের চিকিৎসক বনে গেছে তিনি। সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষের উদাসিনতায় দীর্ঘদিন যাবত সাধারণ মানুষের সাথে চিকিৎসা সেবার নামে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে এই কতিপয় নামধারী ডাক্তার আল আমিন। অথচ এই ডাক্তারের বিরুদ্বে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মানিকগঞ্জ পল্লীস্বাস্থ্য মেডিটেক ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠান থেকে নাম মাত্র ফিজিও থেরাপি কোর্স করে সর্বরোগের বিষেশজ্ঞ ডাক্তার সেজে হরিরামপুর উপজেলার বাল্লা বাজারে সুজ্জিত চেম্বার খুলে ২শ” টাকা ভিজিটে রোগী দেখছে ডাক্তার আল আমিন। এই ডাক্তার পুর্বে উপজেলার ঝিটকা বাজারে চেম্বার খুলে রোগী দেখতেন । সেই সময় সিভিল সার্জন অফিস থেকে অভিযান চালিয়ে তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। এরপর তিনি তার এক মামার মাধ্যমে সিভিল সার্জন অফিস ম্যানেজ করে ফিজিও থেরাপি সেন্টার খোলার অনুমোদন নেয়। সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে ৬ টি শর্তে তাকে ফিজিও থেরাপি সেন্টার চালাতে অনমোদন দেন। তিনি কোন রোগীকে এন্টিবায়টিক ব্যবহারে পরামর্শ দিতে পারিবে না। নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে কোন রোগীর সাথে প্রতারণা করতে পারিবে না। লাইসেন্স ব্যতিত ওষধ ব্যবসা করিতে পারবে না। নিজ নামের আগে ডাক্তার শব্দ ব্যবহার করিতে পারিবে না। শুধু মাত্র প্রয়োজনের তাগিদে রোগীকে থেরাপি দিতে পারিবে এই ডাক্তার আল আমিন। অথচ এসব শর্ত তোয়াক্কা না করেই তিনি রোগীদের সর্বরোগের জটিল জটিল সমস্যার চিকিৎসা দিয়ে চলছে। এতে প্রতারণার শিকার হচ্ছে সাধারণ রোগীরা।

টাংগাইল থেকে আসা বৃদ্বা এক মহলিা রোগীর সাথে কথা হলে তিনি জানান, ‍“তিনি ৬ মাস ধরে ডাক্তার আল আমিনের কাছে ব্যথার জন্য চিকিৎসা নিতে আসে। তাকে ৬ টাকা দামের তিনটি ইনজেকশন দেয়া হয় এবং ৪”শ টাকা দামের ৩টি ইনজেকশন দেন আল আমিন। কিন্তু ইনজেকশন নিলে ব্যথা কমে । ইনজেকশন না নিলেই ব্যথা বাড়ে। এ অবস্থায় আছি।”

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার দেড়গ্রাম এলাকার রোগী মমতা বলেন, “আমি ব্যথার জন্য ৬ মাস ধরে এখানে চিকিৎসা নিচ্ছি। ৬ মাসে আমাকে ৪ টি ইনজেকশন দিয়েছে। এবং মুখে খাওয়ার জন্য ওষধ দিয়েছে। একেকটা ইনজেকশন ৬ টাকা এবং সাথে একশো টাকা ভিজিট দিতে হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নামধারী ডাক্তার আল আমিন নিজেই তার চেম্বারে আসা রোগীদের সেবা দিচ্ছে। প্রতিটি রোগীর কাছ থেকে ভিজিট নিচ্ছেন ১শ”  থেকে ২শ” টাকা। চিকিৎসা শেষে নিজের প্যাডে লিখে দিচ্ছেন প্রেসক্রিপশন। 

এ প্রসঙ্গে ডাক্তার আল আমিনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “রোগীদের যে ইনজেকশন দেয়া হয় সেগুলো ফিজিও থেরাপি চিকিৎসার জন্য দেয়া হয়। ওই ইনজেকশন তো ভিটামি আর ক্যালসিয়ামের কাজ করে। যাদের বাতের সমস্যা তাদের এই ইনজেকশন ভালো কাজ করে। ভিটামিন আর ক্যালসিয়াম এই দুইটি ইনজেকশনের দাম ৬শ” টাকা।”

এ ব্যাপারে হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার ইসরাত জাহান জনবাণীকে বলেন, “আল আমিন তো ডাক্তার না। উনি ফিজিও থেরাপিস্ট। কিন্তু আল আমিন আমাকে ফিজিও থেরাপি কোর্স এর কাগজ পত্র দেখাতে পারেনি। ইউএনও মহোদয়ের সাথে কথা হয়েছে। খুব শ্রীগ্রই তার বিরুদ্বে মোবাইল কোর্ট করা হবে।”

এবিষয়ে মানিকগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. মো: মোয়াজ্জেম আলী খান চৌধুরী জনবাণীকে বলেন, এসব কতপিয় ডাক্তারের বিরুদ্বে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। আশা করি খুব দ্রুত তার বিরুদ্বে আইননুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এসএ/