অদম্য পাঠশালাতে স্বপ্ন বুনে মুরাদরা
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
অদম্য পাঠশালা'র হাত ধরে আলোর পথে হতদরিদ্র পরিবারের, মুরাদ, আনিস, হামজালা, আরিফরা। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে চট্টগ্রামের টাইগারপাস রেললাইনের পাশ ঘেঁষে খোলা আকাশের নীচে চলে পাঠদান। নেই কোন টুল-টেবিল, ঘর। ছালার চটই বসার স্থলে। আর আছে খুটিতে ঝুলানো ‘অদম্য পাঠশালা-১’ লেখা সাইনবোর্ড। পাশ দিয়ে যেতেই শোনা যায় কচি কন্ঠে ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ কিছু উদ্যামী ছাত্র-যুবকের অদম্য মানসিকতা, মানবিকতা আর দেশ প্রেমের অপর নাম ‘অদম্য পাঠশালা’।
এটি নগরীর টাইগারপাস রেললাইনের পাশে, ডগইয়ার্ডের একটু আগে এলাকায় অবস্হিত। অপরটি অক্সিজেনের বটতলা এলাকায় ‘অদম্য পাঠশালা-২ নামে স্থাপন করা হয়। বর্তমানে এই ‘অদম্য পাঠশালা’ পরিচালিত হয় পথশিশু সহায়তায় ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ'র উদ্যাগে এই ফাউন্ডেশনের দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় শাখা রয়েছে ৭ টি। যেগুলো চট্টগ্রাম, ঢাকা, কক্সবাজার, বান্দরবান, লোহাগাড়া, বাঁশখালী ও চকরিয়াতে অবস্থিত। এই অদম্য পাঠশালা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরের ১২ তারিখে।
গত ২৯ জুলাই শুক্রবার সরেজমিনে টাইগারপাসের রেললাইনে ‘অদম্য পাঠশালা-১ গিয়ে দেখা যায়, ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা ঘাসের উপর চট বিছিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে শিক্ষকের সাথে গাইছে জাতীয় সঙ্গীত। এই স্কুল থেকে তারা শিখছে দেশের প্রতি ভালবাসা আর রক্তস্নাত বর্ণমালা অ,আ,ই,ঈ,ক,খ’ সাথে গননা। এই শাখায় ছাত্র- ছাত্রীর সংখ্যা ৩৫ জনের মাঝে দাড়িয়ে শিক্ষক আফরোজ মাহমুদ। হাতে- কলমে শেখাতে দেখা যায় আমাদের জাতীয় ফুল শাপলা, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর, স্বাধীনতা দিবস ২৬ শে মার্চ, জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইত্যাদি। সকলের মনোযোগ পড়াশোনার দিকে। এদিক ওদিক যেন তাকানোর সময় নেই। যেতে হবে অনেক দূর, চোখে ভাসচে নানান স্বপ্ন। হঠাৎ মুরাদ( ৫) উঠে দাঁড়িয়ে বলল ভাইয়া লেখা শেষ। তারপর হামজালা (৬),আরিফ (৫), লাকি(৬), শান্তা (৫), রেশমা(৬) এদের মত সবাই একে একে উঠে দাঁড়িয়ে বলল ভাইয়া লেখা শেষ।‘
পথশিশু সহায়তা ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’র উদ্যাগে চট্টগ্রাম মহানগরের ২টি সহ দেশের বিভিন্ন থানা, জেলাতে ‘অদম্য পাঠশালা’ নামে স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সংগঠন ও পাঠশালা কার্যক্রম সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা আছে তাদের।
দৈনিক জনবাণীকে ‘অদম্য পাঠশালা’ প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে পথশিশু সহায়তায় ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন রনি বলেন, “আমাদের পথশিশু সহায়তায় ফাউন্ডেশনের একজন সদস্যের জন্মদিন উপলক্ষে পথশিশুদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়। তৎক্ষনাৎ সিনিয়রদের মাথায় আসে এই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের একটি অবৈতনিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। তখন থেকেই এই পাঠশালার পথচলা শুরু।
তিনি জানান, অদম্য পাঠশালার চট্টগ্রাম টাইগারপাস শাখায় ২ জন বেতন ভুক্ত শিক্ষক আছে এর বাহিরেও তাদের সংগঠনের সদস্য ভাইয়েরা ক্লাস নিয়ে থাকেন। স্কুলে বাংলা, ইংরেজি, ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা, সংস্কৃতি সহ বিভিন্ন বিষয়ে ধারণা দেওয়া হয়ে থাকে।”
তিনি বলেন, “এখানে যারা পড়াশোনা করে তারা সবাই হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান। বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা তিনি আরো বলেন, স্কুলের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পাঠ্যবই, খাতা ও টিফিনের ব্যবস্হা করা হয়। প্রতি বছর এই পাঠশালা থেকে ১০/১৫ জন শিক্ষার্থীকে পথশিশু সহায়তায় ফাউন্ডেশনর বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনায়, এই সংগঠনের সদস্যদের আর্থিক সহযোগিতায় চট্টগ্রাম নগরের এই দুটি স্কুল সহ সংঘটনের বিভিন্ন স্কুল পরিচালিত হয়।”
কেন্দ্রীয় সভাপতি নেজাদ ই দ্বীন দৈনিক জনবাণীকে বলেন, “দেশের বর্তমানে প্রায় ১২ লক্ষ পথশিশু রয়েছে। তাদের কথা চিন্তা করে প্রতিটি জেলায় অন্তত একটা করে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের জন্য একটি অবৈতনিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করা, তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং সংগঠনে পক্ষে যতটুকু সম্ভব আবাসনের ব্যবস্হা করা, তাই দেশে সকল বিত্তবানদের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহবান জানাচ্ছি। আশা করি সকলের প্রচেষ্টার ফলে দারিদ্র ও নিরক্ষতার হার কমে আসবে দেশে। ”
রংপুরের তাজহাটের আরিফ বলেন, “বড় হলে আমি ট্রেন চালাব। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের হামজালা বলেন, আমি শিক্ষক হব। গাইবান্ধার মুরাদ বলেন, আমি ডাক্তার হব। ফেনীর জান্নাত বলেন আমি প্লেন চালাব। ”
এই সম্পর্কে সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষা বিভাগের পরিচালক ড. সৌরভ সাখাওয়াত জনবাণীকে বলেন, “এটি খুবই ভালো কাজ, দেশ স্বাধীন করতে সবার আগে ছাত্ররা এগিয়ে এসেছিল,তেমনি প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীকে এগিয়ে আসতে হবে তবেই দেশ নিরক্ষর মুক্ত হবে।”
এসএ/