চট্টগ্রামে বড় বিপদ ৪০০ রেলক্রসিংয়ে, ঘাটতি জনবলে


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


চট্টগ্রামে বড় বিপদ ৪০০ রেলক্রসিংয়ে, ঘাটতি জনবলে

গেল ডিসেম্বরে চট্টগ্রাম নগরের খুলশী ঝাউতলা রেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণহানির বিষয়টি বেশ আলোচনায় ছিল। তবে ‘ছাইচাপা’ এ ইস্যুটি নতুন করে উত্তাপ ছড়াচ্ছে মিরসরাই রেলক্রসিংয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর। এভাবে চট্টগ্রামের নগর থেকে লোকালয়ে রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায় একের পর এক প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও ‘তদন্ত, মামলা ও ফের দুর্ঘটনা’ এ চক্র থেকে যেন বেরুতে পারছে না রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল। 

চট্টগ্রামের রেলপথে ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গড়িমসির অভিযোগ আছে। সবকয়টি ঘটনায় ‘আগ বাড়িয়ে’ মামলা দেয় পুলিশ। তবে ঘটনার রেশ কেটে গেলে সেই মামলা চলে যায় হিমঘরে। এরই ধারাবাহিকতায় গেল ডিসেম্বরে খুলশীর রেলক্রসিংয়ে ৩ জন নিহতের ঘটনার ৮ মাস পরও কূল-কিনারা হয়নি। তবে তার জন্য বিভিন্ন পক্ষের অসহযোগিতাসহ নিজেদের সীমাবদ্ধতাকে দায়ী করছে পুলিশ। 

রেলওয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‍“রেলক্রসিংয়ের দুর্ঘটনার পর রেল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতার পাওয়া যায় না। এতে মামলায় অনুমান নির্ভর ক্ষতিপূরণ উল্লেখ হয়। পাশাপাশি মেডিকেল রিপোর্ট সময়মতো পাওয়া যায়না। একইভাবে ঝাউতলা রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার রিপোর্ট জমা দেওয়া যায়নি এখনও।”

এদিকে, চট্টগ্রামের বিভাগের অধীনে থাকা অবৈধ রেলক্রসিংয়ের মোট সংখ্যা কত তা অফিসিয়ালি জানাতে পারেনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে- চট্টগ্রাম বিভাগের অধীনে অবৈধ রেলক্রসিং আছে তিনশতের অধিক। বৈধ রেলক্রসিং ১৩৭টি। বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে প্রায় চারশতের বেশি রেলক্রসিং আছে। গাড়ি চালকের অসচেতনা, গেটম্যানদের অবহেলা, পুরনো পদ্ধতির সংকেত সিস্টেমসহ বিভিন্ন কারণে এসব গেটে প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা। শুধুমাত্র ভয়াবহ দুর্ঘটনায় প্রাণহানির পরে রেল ক্রসিংয়ের দুর্ঘটনার বিষয়টি সামনে উঠে আসে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন গেটে দায়িত্বে থাকা গেটম্যান, লাইনম্যান, চালকসহ সংশ্লিষ্টরা। 

সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, গেল ডিসেম্বরে চট্টগ্রামের ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে খুলশী ঝাউতলা রেলগেটে বাস, অটোরিকশা ও ট্রেনের ত্রিমুখী সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনজন। পরে গেল ২৯ জুলাই মিরসরাইয়ে রেলক্রসিংয়ে মাইক্রোবাসে ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ হারান ১১ তরুণ। একইভাবে সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামের শহর থেকে গ্রামের বিভিন্ন রেলক্রসিংয়ে অন্তত ৮টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গেল বছরের ৩০ আগস্ট সীতাকুণ্ডের এয়াকুব নগরের অবৈধ রেলক্রসিংয়ে ট্রেন-পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে, ৫ সেপ্টেম্বর কদমতলী রেলক্রসিংয়ে ট্রেন-সিএনজির সংঘর্ষ, ২০ সেপ্টেম্বর পটিয়ার আউটার সিগন্যাল এলাকায় পিডিবির তেলবাহী ট্রেনের সাথে নসিমনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, ৩০ নভেম্বর ফৌজদার হাটে সংঘর্ষের হাত থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে যাত্রীবাহী ট্রেন মেঘনা এক্সপ্রেস। নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে কদমতলী রেলক্রসিংয়ে ট্রেন-প্রাইভেটকার ও ট্রেন-সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষের পৃথক দুটি ঘটনা ঘটেছে।

যদিও পরিবহন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রাম বিভাগে মোট বৈধ ক্রসিং রয়েছে প্রায় ১৩৭টি। এর মধ্যে স্পেশাল লেভেল ক্রসিং রয়েছে ১৭টি। এছাড়া আটটি ‘এ’ শ্রেণির, ৩২টি ‘বি’ শ্রেণির, ৭৩টি ‘সি’ শ্রেণির ও সাতটি ‘ডি’ শ্রেণির ক্রসিং রয়েছে। পূর্বাঞ্চলের মোট ৫৭টি স্পেশাল শ্রেণির লেভেল ক্রসিং প্রধানত ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বড় জেলা শহরভিত্তিক। নড়বড়ে ক্রসিং অবকাঠামো ও লোকবলের অভাবে এসব ক্রসিংয়ে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছেন রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা। জুলাই-২০২১ পর্যন্ত হালনাগাদ করা একটি তালিকায় দেখা গেছে, ঢাকা ও চট্টগ্রামে গেটকিপারের মঞ্জুরীকৃত পদ ২৪২টি। এর মধ্যে কর্মরত আছে ১৫৭ পদে, বাকি ৮৫টি শূন্যপদ। রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যমান রেলক্রসিংয়ে সংকট কাটাতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে অস্থায়ী গেটম্যান। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জনবাণীকে জানান, “দুর্ঘটনা রোধে আইন মেনে চলার ব্যাপারে বেশি জোর দিচ্ছে রেলওয়ে। তাছাড়া দায়িত্বে কারও গাফেলতি দেখা গেলে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এসএ/