কুষ্টিয়ায় গোপনে নিলাম করে মিল মালিককে পথে বসালেন ব্র্যাক ব্যাংক


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


কুষ্টিয়ায় গোপনে নিলাম করে মিল মালিককে পথে বসালেন ব্র্যাক ব্যাংক

কুষ্টিয়ায় মিল মালিককে না জানিয়ে গোপনে ৯২ কোটি টাকার সম্পত্তি মাত্র ১৯ কোটি টাকায় স্থানীয় প্রভাবশালী অন্য মিল মালিকের কাছে নিলামের মাধ্যমে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে ব্র্যাক ব্যাংক পোরাদহ শাখার বিরুদ্ধে।

সুত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার আইলচারায় অবস্থিত মেসার্স বিশ্বাস ট্রেডার্স এন্ড ভিআইপি রাইচ মিল ব্র্যাক ব্যাংক পোরাদহ শাখার নিকট থেকে ঋণ চাইলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জমির ভ্যালুয়েশন করে ৯২ কোটি টাকা।

ব্র্যাক ব্যাংক পোরাদহ শাখা সকল কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে ৪৩ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করে। ঋণ নেওয়ার পর মিলটি সম্পূর্ণ প্রস্তুত করার পর কার্যক্রম শুরু করার জন্য মিল মালিকের আরও টাকার প্রয়োজন হয়৷ তখন মিল মালিক আবারও টাকা ঋণ নেওয়ার জন্য ব্যাংকে আবেদন করলে ব্যাংক তাকে আর ঋণ দেয়নি। 

তারপর থেকে একটানা ৩ বছর মহামারী করোনা ভাইরাস সারাদেশে সংক্রমন শুরু  হলে মিলটি সরকারের নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী বন্ধ হয়ে যায়। যারফলে ভিআইপি রাইচ মিল সময় মতো ঋণের কিস্তি দিতে ব্যর্থ হয়।  ঠিক এই সুযোগে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অতি গোপনে অখ্যাত কাগজে নিলাম বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কুষ্টিয়ার চাউল রশিদের মালিকানাধীন রশিদ এন্টারপ্রাইজের নামে মাত্র ১৯ কোটি টাকায় নিলামে বিক্রি করে দেয়। ব্যাংক যেখানে ৪৩ কোটি টাকা পাবে। 

ব্যাংকের হিসাবে ঐ সম্পত্তির মূল্য ৯২ কোটি টাকা।  সেখানে মাত্র ১৯ কোটি টাকায় নিলামের রহস্য কি ? এ নিয়ে কুষ্টিয়ার সমস্ত সচেতন মহলের মিল মালিকদের মাঝে নানা ধরনের গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে।  বিষয়টি জানতে পেরে মেসার্স বিশ্বাস ট্রেডার্স, ভিআইপি রাইচ মিল ও ভিআইপি ফ্লাওয়ার মিলের প্রোপাইটার শফিকুল ইসলাম উচ্চ আদালতে রিট করেন। এ ছাড়াও যেই পত্রিকাতে নিলাম বিজ্ঞপ্তি ছাপা হয়েছে সেটি সরকারি মিডিয়া তালিকাভুক্ত নেই এবং তার প্রচার সংখ্য সিমিত বলেও অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী মিল মালিক। 

রিটে হাইকোর্ট নিলামের সকল কার্যক্রম স্থগিত করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক শফিকুল ইসলামকে মালিকানা বহাল করে কিস্তি করে দিয়েছে আদালত ।

হাইকোর্টের আদেশ সুত্রে জানা যায়, মেসার্স বিশ্বাস ট্রেডার্স এন্ড ভিআইপি রাইচ মিলের মালিক ব্র্যাক ব্যাংকের কিস্তি দিতে না পারায় চলতি বছরের গত ২৪/০৩/২০২২ ইং তারিখে মিলটি নিলাম করে দেয় ব্র্যাক ব্যাংক কতৃপক্ষ। নিলামকৃত প্রতিষ্ঠানের মূল্য ৯২ কোটি টাকা হলেও ব্যাংক কতৃপক্ষ ৪৩ কোটি টাকা পান মিল মালিকের কাছে। 

কিন্তু স্থানীয় এক প্রভাবশালী রাইস মিল রশিদ এন্টারপ্রাইজের মালিক রশিদের কাছে গোপন যোগ সাজসে মাত্র ১৯ কোটি টকায় নিলামে বিক্রি করে দেয়। পরে নিলামের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত ২ আগস্ট হাইকোর্টে রিট পিটিশন করেন প্রতিষ্ঠানের মালিক শফিকুল ইসলাম। যার রিট পিটিশন নং-৯১০১/২০২২,। রিটটি করেন ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী।

রিটের আবেদনের শুনানির পর তাদের লর্ডশিপ বিচারপতি আবু তাহের মোঃ সাইফুর রহমান এবং  বিচারপতি এ.কে.এম রবিউল হাসান এর সমন্বয়ে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একটি ডিভিশন বেঞ্চ চার সপ্তাহের জন্য রুল নিসি জারি করে সন্তুষ্ট হয়ে উত্তর দাতাদেরকে কারণ দর্শানোর আহ্বান জানিয়ে দৈনিক সংবাদপত্রে গত ২৪/০৩/২০২২ ইং তারিখে কেনো নিলাম প্রক্রিয়া  প্রকাশিত হয়েছিল এবং গত  ২৪/০৩/২০২২ ইং তারিখে অনুষ্ঠিত নিলামের সকল কার্যক্রম স্থগিত করে।এর ফলে শফিকুল ইসলাম মেসার্স বিশ্বাস ট্রেডার্স, ভিআইপি রাইচ মিল ও ভিআইপি ফ্লাওয়ার মিলের মালিকানা বহাল থাকে।তারপরের রশিদ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাতের আধারে শফিকুল ইসলামের সম্পত্তি জবর দখল করে সাইন বোর্ড লাগিয়েছে।  

এদিকে চাল রশিদের ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সাথে গোপন যোগসাজসে পানির দরে কোটি টাকার সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার পাঁয়তারা রুখে দিয়েছে উচ্চ আদালত। একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীকে রাতারাতি পথে বসিয়ে চাল রশিদের এহেন আচরণে ক্ষুব্ধ আইলচারা, খাজানগর সহ
কুষ্টিয়ার ব্যবসায়ী সমাজ। শুধু তাই নয় এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রশিদ ব্যাংকে মর্গেজ বাদেও শফিকুল ইসলামের আরও অন্যান্য সম্পত্তি দখল করে চলেছে। ভিআইপি রাইস মিলের সামনে জিকে ক্যানেলের একটি সরকারি জমিও দখল করেছে রশিদ। 

স্থানীয় আল মদিনা রাইস মিলের মালিক বাবু বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ভিআইপি রাইস মিল মালিকের চাচা মোতালেব হোসেন নৌকা প্রতিকের নির্বাচন করেছেন এবং শফিকুল ইসলাম তার জন্য অনেক অর্থ ব্যায় করেছেন। আর রশিদ বিএনপি দল করে। শফিকুল ইসলাম আওয়ামীলীগের পক্ষে এভাবে মাঠে কাজ করার কারনেই ব্যাংক কতৃপক্ষের সাথে যোগসাজসে রশিদ এই অবৈধভাবে নিলাম করেছে। এর আগে আমরা কখনো এভাবে রাতারাতি নিলাম হতে দেখিনি। 

এ ব্যাপারে মেসার্স বিশ্বাস ট্রেডার্স এন্ড ভিআইপি রাইচ মিলের প্রোপাইটার শফিকুল ইসলাম বলেন, পোরাদহ শাখার ব্র্যাক ব্যাংক থেকে আমার ঋণ নেওয়া ছিলো। করোনা আসার পর আমি ঋণ দিতে না পারায় আমার মিলটি আমাকে না জানিয়েই নিলামে রশিদের কাছে বিক্রয় করে দিয়েছে ব্যাংক কতৃপক্ষ। নিলাম বিজ্ঞপ্তি যেই পত্রিকায় ছাপা হয়েছে সেটির প্রচার সংখ্যা অনেক কম এবং সরকারি মিডিয়া তালিকাভুক্ত কিনা তারও ঠিক নেই। 

এ ছাড়াও নিলামের আগে বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করে এবং ঢোল পিটিয়ে সবাইকে অবগত করতে হয়। কিন্তু ব্যাংক কতৃপক্ষ গোপনে রশিদের সাথে যোগসাজসে আমার ৯২ কোটি টাকার সম্পত্তি মাত্র ১৯ কোটি টাকায় নিলামে বিক্রি করে দিয়েছে। আমি নৌকার পক্ষে নির্বাচন করার কারনে রশিদের সাথে আমাদের খারাপ সম্পর্ক তৈরি হয়। কারন রঅশিদ ২০০১ সালে আইলচারা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারন সম্পাদক ছিলেন। আমি এর বিচার চাই। 

আরএক্স/