নগদ অ্যাকাউন্ট থেকে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা উধাও


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


নগদ অ্যাকাউন্ট থেকে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা উধাও

উত্তোলনের সময় শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও। টাকা গেল কোথায়? এমনই ঘটনা ঘটেছে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায়। উপবৃত্তির টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে নগদ অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা না পেয়ে এমন অভিযোগ করেছেন অভিভাবকরা।

তাদের দাবি, এর সাথে মোবাইল ব্যাংকিং সংশ্লিষ্ট লোকজন জড়িত। 

জানা গেছে, ২০২১ অর্থ বছরে মোবাইল ব্যাংকিং নগদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেয় সরকার। শিক্ষার্থীদের কিট অ্যালাউন্স হিসেবে ১ হাজার টাকা এবং প্রতি মাসে বৃত্তির ১৫০ টাকা করে ৬ মাসের ৯০০ টাকা অভিভাবকদের স্ব-স্ব নগদ অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছে। 

এরই ধারাবাহিকতায় রাঙ্গাবালী উপজেলার ৭১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৪ হাজার ৯৩৭ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১০ হাজার ১৮ জন শিক্ষার্থী উপবৃত্তির আওতায় রয়েছে। আর ওইসব শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে বিপত্তির মধ্যে পড়ছেন কিছু কিছু অভিভাবকরা। 

একাধিক অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপবৃত্তির টাকা মোবাইল ব্যাংকিং নগদে আসার পর সেই টাকা তুলতে গিয়ে দেখেন অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা ক্যাশ আউট হয়ে গেছে অজানা একটি এজেন্ট নম্বরে। 

ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের চরইমারশনের ভুক্তভোগী অভিভাবক মোঃ বাচ্চু কাজী বলেন, “আমার পাঁচটা মাইয়া (মেয়ে), অনেক কষ্টে পড়াল্যাহা করাই। ভাই দেয়ালে পিঠ ঠেকে গ্যাছে। মেয়ে রুবিনা কোড়ালিয়া এ রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফোরে (চতুর্থ শ্রেণি) পড়ে। উপবৃত্তির ৯৫০ টাকা নগদে আসে, সেই টাকা উঠাইতে দোকানে গেলে দোকানদার কয় (বলে) টাকা অন্য নম্বরে ক্যাশ আউট হইছে। অথচ ওই নম্বর আমার অচেনা। এর আগেও উপবৃত্তির ১৯শ’ টাকা নিয়া গেছে।”

একই প্রতিষ্ঠানের আরেক অভিভাবক আব্দুস সাত্তার প্যাদা তিনি বলেন, “আমার দুই নাতি জান্নাতুল ও বাইজিদ একজন  প্রথম শ্রেণিতে আরেকজন পড়ে পঞ্চম শ্রেণিতে। মোবাইলে নগদে টাকা আসে জেনে স্থানীয় বাজারের দোকানির কাছে গেলে, দোকানদার জানায় আপনার টাকা ক্যাশ আউট হয়ে গেছে। শুধু নাতিদেরই নয় অনেক বাচ্চাদের উপবৃত্তির টাকা তুলতে পারে নাই।”

টুঙ্গিবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক শামিম সিকদার বলেন, “মোবাইলে মেয়ের উপবৃত্তির টাকা আসছে দেখেছি, কিন্তু দুইদিন পর দোকানে টাকা উঠাতে গেলে দেখি টাকা নাই। এর আগেও পোশাকের জন্য টাকা এসেছিল তাও নিয়ে গেছে। শিক্ষকরদের কাছে গিয়াও কোন ধরনের ফয়সালা হয় নাই।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, ‘গত জুলাই মাসের ১৯ তারিখের আগে যারা টাকা উত্তোলন করেছেন তারা টাকা পেয়েছে। তবে ১৯ তারিখের পর যারা টাকা উত্তোলন করেননি তাদের টাকা উধাও হয়ে গেছে। অনেক অভিভাবক আমাদের কাছে টাকা তুলতে এসে আবার খালি হাতে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।’

এ বিষয়ে কাউখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ সালাম মিয়া জনবাণীকে বলেন, “মূলত টাকা ক্যাশ ইন হলে কোন এসএমএস আসে না। যার কারণে অধিকাংশ অভিভাবকগণ জানেন না যে তাদের ফোনে টাকা এসেছে। গত জুলাই মাসের ১৯ তারিখের আগে টাকা উত্তোলন করতে গেলে পিন নম্বর ম্যাস করেনি, এরপরে উঠাতে গেলে ক্যাশ আউট দেখায়। অধিকাংশ অভিভাবক অভিযোগ জানিয়েছে, তবে আমাদের তো কিছু করার নেই।”

রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আতিকুল ইসলাম জনবাণীকে বলেন, “শিক্ষার্থীদের চাহিদা দাখিল করেছি। এরপরে নগদ থেকে যে টাকাটা ছাড় করা হয়েছে এরকম কোন ম্যাসেজ আমরা পাইনি। অভিভাবকদের কাছ থেকে শুনছি, যারা ১৯ জুলাইয়ের পর টাকা তুলতে গেছেন অনেকেরই টাকা ক্যাশ আউট হয়ে গেছে। তবে আমাদের কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। বিষয়টি অধিদপ্তরের উপবৃত্তির সেলে জানানো হয়েছে।”

এসএ/