আবারও লাম্পি’তে আক্রান্ত বেড়ার কয়েক শ’গরু


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


আবারও লাম্পি’তে আক্রান্ত বেড়ার কয়েক শ’গরু

তিন বছর পরে আবারও পাবনার বেড়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে লাম্পি চর্মরোগে (এলএসডি) আক্রান্ত হচ্ছে কৃষক বা খামারির গরু। গরু পালক বা গরুর খামারীরা তাদের গবাদিপশু নিয়ে আতঙ্কিত ও দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন।  

২০১৯ সালে উপজেলার হাটুরিয়া নাকালিয়া ইউনিয়ন,কৈটোলা ইউনিয়ন ও জাতসাকিনী ইউনিয়নে লাম্পি চর্মরোগের প্রর্দূভাব দেখা দেয়। হাটুরিয়া নাকালিয়া ইউনিয়নের চরাঞ্চলের চর সাঁড়াশিয়া গ্রামের খামারী কালু শেখ ও আব্দুল লতিফ, হাটুরিয়া গ্রামের কাশেম ও প্রশান্ত গোস্বামী, জগন্নাখপুর গ্রামের মোমিন প্রামানিক ও কৈটোলা ইউনিয়নের কুটিশ্বর গ্রামের নায়েব ফকির, কৈটোলা গ্রামের রমজান আলী, জাতসাকিনী ইউনিয়নের বকতারপুর গ্রামের আবু সাইদ ও সোলায়মানের একাধিক গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। ২০১৯ সালে বেড়া উপজেলায় লাম্পি স্কিন ডিজিজ-এ কয়েক শ’ গরু আক্রান্ত হয়েছিল। সে সময়ে অজানা অচেনা এই রোগে গরু পালক ও খামারিরা অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। তিন বছর পর আবার বেড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) এ গরু-বাছুর আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। 

গবাদিপশুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ এর বিষয়ে উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা.মিজানুর রহমান জনবাণীকে জানান, “ধারণা করা হয় গবাদিপশুদের মধ্যে লাম্পি চর্মরোগের ভাইরাস ক্যাপ্রিপক্স ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট। এটি আর্থ্রোডভেক্টর, দূষিত খাদ্য, পানি আইট্রোজেনিক ও সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে প্রাণীদের মধ্যে সংক্রামিত হয়। এ ধরনের ভাইরাস মানব দেহে রোগ ছড়ায় না। সহজভাবে বললে, এটা একটি ভাইরাস ডিজিস, এ্যালাজি জাতীয় রোগ, মশা-মাছি, খাদ্য, পানীয় ও সরাসরি সংর্স্পশে এ রোগ ছড়ায়। এ রোগে গবাদি পশু র্দূবল হয়ে পড়ায় সহজে অন্য রোগেও আক্রান্ত হয়। লাম্পি রোগে আক্রান্ত হলে দুধেল গাভীর দুধ উৎপাদন হ্রাস পায় এবং আক্রান্ত গাভীর দুধে এই ভাইরাস থাকায় আক্রান্ত গাভীর দুধ খেলে বাছুরও আক্রান্ত হতে পারে তাই আক্রান্ত গাভীর দুধ বাছুরকে খেতে না দিয়ে মাটিতে গর্ত করে মাটি চাপা দিয়ে দিতে হবে। এ রোগ থেকে গবাদি পশুকে রক্ষা করতে হলে পরিস্কার পরিচ্ছনতার দিকে সব সময় নজর রাখতে হবে। গবাদিপশু রাখা ও থাকার জায়গা পরিস্কার এবং মশা মাছির হাত থেকে রক্ষা করতে হবে এবং আক্রান্ত গরুকে আলাদা ভাবে রেখে পরিচর্যা করতে হবে।” 

তিনি আরো জানান, “রোগটি প্রধানত বর্ষার শেষের দিকে বিস্তার লাভ করে এবং ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। এ রোগের সুনিদিষ্ট কোন চিকিৎসা নেই। রোগের লক্ষণ অনুযায়ী অ্যান্টিপাইরেটি, অ্যান্টিহিস্টামিন ও অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। অন্য কোন রোগে আক্রান্ত না হলে এ জাতীয় ওষুধ প্রয়োগ করলে ২১ দিন পর থেকে সাধারনত আক্রান্ত গরু সুস্থ হতে থাকে।” 

প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা বলেন, “লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) এর লক্ষণ প্রকাশ পেলেই দ্রুত উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার অফিসে চিকিৎসকদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে বা রেজিষ্টার্ড প্রাণি চিকিৎসকের পরামর্শ ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র নিতে হবে। লাম্পি স্কিন ডিজিজ বা লাম্পি চর্মরোগে আক্রান্ত পশুর মৃত্যুহার খুবই নগণ্য। গবাদিপশু ল্যাম্পি স্কীন ডিজিড ভাইরাসে আক্রান্ত হলে গরুর মালিক ও খামারিরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েন। সরকারি ভাবে বর্তমান এর ভ্যাকসিন সরবরাহ নেই। তবে বাজারে বিভিন্ন কোম্পানি এই ল্যাম্পি স্কীন ভ্যাকসিন বাজারজাত করছে। একটি ভ্যাকসিনে প্রায় ৭ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। তাই অনেক গবাদিপশু মালিক বা খামারিরা অনেক সময় পশুকে ভ্যাকসিন প্রয়োগ অনিহা প্রকাশ করে। তবে সময় মতো ভ্যাকসিন ও চিকিৎসা দিলে এ রোগে আক্রান্ত গবাদিপশু দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে।”
 
ডা.মিজানুর রহমানের মতে বেড়া উপজেলায় এ রোগে আক্রান্ত গবাদিপশুর সংখ্যা দেড় থেকে দুই শ’। কিছুটা হলেও গরু পালক ও খামারিরা আগের চেয়ে এখন বেশী সচেতন। এর ফলে এখন এ রোগের প্রার্দূভাব অনেক কম।

ইতিমধ্যে হাটুরিয়া নাকালিয়া ইউনিয়নের চর সাঁড়াশিয়া গ্রামের ৭টি গরু,  চর নাকালিয়া গ্রামের ৪টি গরু, চর বেঙালিয়া গ্রামের ৫টি গরু, পেচাকোলা গ্রামের ৪টি গরু লাম্পি স্কিন ডিজিজে আক্রান্ত হয়েছে। 

উপজেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা জানান, ‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ প্রতিরোধে আমরা গবাদিপশুর মালিক বা খামারিদের পরামর্শ ও নির্দেশনা দেই কিন্তু অনেকে যথাযথ ভাবে মানেন না। তাই এ রোগ অনেকটা ছড়িয়ে পড়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কয়েক শ’ গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে খামারি ও গ্রাম্য পশু চিকিৎসকদের কাছ থেকে জানা গেছে।’

এসএ/