বিএনপির এই হাকডাকে কোনো লাভ হবে না: তথ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
বিএনপির এই হাকডাকে কোনো লাভ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
সোমবার (৮ আগস্ট) তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে শহীদ শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এবং সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি করায় বিএনপি ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। বিএনপি বলেছে, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করবে, সরকারবিরোধী দলগুলোকেও ঐক্যবদ্ধ করবে এবং তাদের নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপির তো হাকডাক বহুদিন ধরে শুনছি আমরা। এই সরকার পতন আমরা ২০০৯ সালে যখন সরকার গঠন করেছি তখন থেকেই শুনে আসছি। বিএনপিকে অনুরোধ জানাবো বিশ্ব পরিস্থিতির দিকে তাকাতে। মানুষকে বিভ্রান্ত করা রাজনীতি পরিহার করার জন্য। তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য রাজনীতি করে। হয়তো কোনো কোনো সাময়িক বিভ্রান্ত সময় করতে পেরেছে। মানুষ তাদের আসল উদ্দেশ্য জানতে পারে, বুঝতে পারে। বিএনপির এই হাকডাকে কোনো লাভ হবে না।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতিতে এত ভর্তুকি দেওয়া সম্ভব নয়, প্রতিদিন ১০০ ডলার করে গত তিন মাসে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। তখন সরকার দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছে। বিশ্ববাজারে দাম কমে আসলে তার প্রভাব আমাদের দেশে পড়তে দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগে। তখন আমাদের দেশে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হবে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘জ্বালানি সংকটের জন্য ইউরোপের সবচাইতে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ হচ্ছে জার্মানি। সেখানে জ্বালানি সংকটের জন্য সাশ্রয়ী উদ্যোগ নিয়েছে। বিদ্যুতে রেশনিং করা হচ্ছে। ফ্রান্সেও জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য নানা বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে। বিধিনিষেধের ব্যত্যয় ঘটলে ৭৫০ ইউরো জরিমানা ঘোষণা করেছে।’
‘গ্রিস ও ইতালিতেও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের ঘোষণা দিয়েছে। হাঙ্গেরিতে এনার্জি ইমারজেন্সি ঘোষণা করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যেক নাগরিককে বার্তা দিয়ে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। বিশ্বজুড়ে এই সংকটের প্রেক্ষাপটে আমাদের সরকার জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করতে বাধ্য হয়েছে। আমি জনগণের কাছে অনুরোধ জানাবো বিশ্ব বাজারে যখন তেলের মূল্য কমে আসবে সেটি যখন বাংলাদেশের বাজারে প্রভাব পড়তে শুরু করবে তখন জ্বালানি তেলের মূল্য তখন আবার সমন্বয় করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি জানি এ বিষয়টি নিয়ে অনেক রাজনৈতিক দল মাঠ গরম করার চেষ্টা করছে। তাদের আমি অনুরোধ জানাবো বিশ্ব পরিস্থিতির দিকে তাকাতে। সরকার যে গত বছর ৫৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে। এ বছরও কি ৫৩ হাজার কোটি টাকা বা বিপিসির পক্ষে প্রতিদিন ১০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া সম্ভব? সেটি কোনো দেশের পক্ষে সম্ভব নয়। সেটি সম্ভব নয় বিধায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপের অনেক শক্তিশালী দেশ ও জাপানও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী নীতি নিয়ে চলছে। সংকটময় পরিস্থিতির জন্যই বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ানো হয়েছে। তবে বিশ্ববাজারে দাম কমে আসলে তার প্রভাব আমাদের দেশে পড়তে দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগে। তখন আমাদের দেশে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হবে।’
একলাফে একদিনে এত টাকা বাড়ানো হলো এটা মানুষের জন্য বোঝা কি-না ও ইউরোপ আমেরিকার মতো দেশের সঙ্গে তুলনা করা কতটা যৌক্তিক এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ব পরিস্থিতি তুলে ধরার জন্য আপনাদের সামনে ডাটা তুলে ধরেছি। আর আমাদের পরিস্থিতি আশপাশের দেশগুলোর সঙ্গে তুলনীয়। ভারতের অর্থনীতি আমাদের থেকে অনেক বেশি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে। যদিও মাথাপিছু আয়ে তাদের আমরা ছাড়িয়ে গেছি। ভারতে জ্বালানি তেলের যে মূল্য আমাদের দেশেও একই মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। নেপালসহ অন্যান্য দেশে মূল্য কিন্তু আরও অনেক বেশি।এছাড়া তেলের দাম আরও আগেই বাড়ানো উচিৎ ছিল। তাহলে আমাদের এত ভর্তুকি দিতে হতো না। হঠাৎ করে বাড়ানোর প্রেক্ষিতে মানুষ একটু হতচকিত হয়ে গেছে। এটা আমি জানি বা বুঝি। তবে বিশ্ব প্রেক্ষাপটে মূল্য সমন্বয় না করে উপায় ছিলো না।’
বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বাজারে দাম বেড়ে যায়, আর দাম কমলে সেটা দুই মাস পরে প্রভাব পড়ে এটা কি আপনার কাছে মনে হয় না ব্যালেন্সে বৈষম্য হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, এটা একটা বাস্তবসম্মত পদ্ধতি। যখন বিশ্ব বাজারে দাম কমে তখন এর প্রভাব পড়তে দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগে। এজন্য যে দাম কমলে আজকেই বাংলাদেশে চলে আসে না। আসতে সময় লাগে দেড় থেকে দুই মাস। আর বিশ্ব বাজারে দাম বাড়ার সাথে সাথে আমাদের দেশে দাম বাড়ে এটা ঠিক নয়।
ওআ/