ট্রমা সেন্টার হাসপাতাল এখন ভুতের বাড়িতে পরিণত


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


ট্রমা সেন্টার হাসপাতাল এখন ভুতের বাড়িতে পরিণত

মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর পাশে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের চিকিৎসায় নির্মান করা হয় ট্রমা সেন্টার। গত ২০১৫ সালে কাজ শুরু করে ৪ বছর সময় ব্যয়ে ২০১৮ সালে শেষ হয় হাসপাতাল ভবনটির নির্মাণ কাজ। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় ৫ বছর অতিবাহিত হলেও এখনও চালু হয়নি ট্রমা সেন্টারটি। ফলে ভবনটি এখন নেশাখোরদের আড্ডারস্থল ও ভুতের বাড়িতে পরিনত হয়েছে। 

দুইবারে ট্রমা সেন্টারের ভবন নির্মাণে মোট সময় হয় ৯ বছরেরও অধিক সময়।  নির্মিত হওয়ার পর গত ৫ বছর ধরে পড়ে আছে অব্যবহৃত ও অকার্যকর অবস্থায়। ২ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে সেন্টারটি নির্মিত হলেও কেউ কোন সুফল পাচ্ছেন না।  বরং পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে কার্যক্রমহীন হয়ে পরেছে ভবনটি। গত কয়েক বছর ধরে চোরেরা রাতে ও দিনের বেলায় কয়েকটি কক্ষের ফ্যান, বিদুৎতের বাল্বসহ অনেক যন্ত্রাংশ অংশ চুরি করে নিয়ে গেছে।

জানা যায়, বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ে, শ্রীনগর-দোহার, শ্রীনগর-মুন্সীগঞ্জ আন্তঃ সড়কসহ অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে নানা সময়ে দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের চিকিৎসার জন্য শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘরে নির্মাণ করা হয় এই ৩ তলার ২০ শয্যা বিশিষ্ট ট্রমা সেন্টার ভবনটি। সরজমিনে দেখা যায়, চিকিৎসা সেবা দূরে থাক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভবনটির অবস্থা বেহাল দশা হয়ে পড়েছে। দেওয়ালের বিভিন্ন অংশে উঠে গেছে আস্তরণ, মেঝেতে জমেছে শেওলা ও আগাছা আর লোহার কাঠামোগুলোতে ধরেছে মরিচা। 

চর্তুদিকে ঝোপ জঙ্গলে ভরে গিয়ে দেখতে অনেকদিনের পরিত্যক্ত ভবনের মত মনে হয়। মাদক সেবনের বিভিন্ন সরঞ্জামও ছড়িয়ে ছিটেয়ে আছে এখানে ওখানে। নষ্ট হতে থাকা অবকাঠামো, বন্য গাছ লতায় ভরে ওঠা ভবনটির অভ্যন্তরে বসে মাদক সেবীদের আড্ডা। এসব সমস্যা নিরসনের মাধ্যমে ভবনের কার্যক্রম চালু করে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতের দাবি স্থানীয়দের। স্থানীয় মাকসুদা বেগম নামে এক বাসিন্দা বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় মাথায় আঘাতসহ হাত  পা ভাঙ্গা রোগী আসে। কিন্তু ট্রমা সেন্টারটি চালু না হওয়ায় তাদেরকে ঢাকা নিয়া যাইতে হয়, ঢাকা পঙ্গুতে যেতে যেতে রোগী গুলোর অবস্থা আরো অবনতি হয়ে পড়ে ও অনেক রোগী মারাও যায়। ট্রমা সেন্টারসহ একটি নিউরো হাসপাতাল চালু থাকলে সকল রোগীই চিকিৎসা পাইত।

জসিম উদ্দিন বলেন বলেন, হাসপাতালটি চালু না হওয়ায় গত কয়েক বছর ধরে চোরেরা হাসপাতালের রুমের সবকিছু চুরি করে নিয়ে গেছে। এইতো কয়েকদিন আগে পুলাপাইনরা দিনেরবেলায় এক চোরকে ধরে মারপিট করতেছে আমি না গেলে মেরেই ফেলতো। পরে পুলিশ এসে চোরকে নিয়ে যায়। ট্রমা সেন্টারে পাশে মোটর পার্টস বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম জানান, গত ৪/৫ বছর যাবৎ এই হাসপাতালটি তৈরী হলেও এখনও চালু না হওয়ায় ঝোপ জঙ্গলে হাসপাতালটি ভুতের বাড়িতে পরিনত হয়েছে। রাতের বেলায় এখানে এলাকার নেশাখোরদের আড্ডার জায়গা হয়েছে। স্থানীয় চেয়ারম্যান ও এমপি মহোদয় নজর দিয়ে হাসপাতালটি চালু করা খুবই দরকার।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা আবু তোহা আদনান শাকিল বলেন, এটা ব্যাপারে আমার কোন বক্তব্য নাই। আমি নিজে এর আগে ইউএনও,এমপি মহোদয়সহ অতিরিক্ত সচিব স্যারের সাথে কথা বলেছি এটা চালু হওয়ার ব্যাপারে। এটা নির্মান করেছে গণপূর্ত মন্ত্রনালয় লোকবল দিবে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এখন এত পরিমান দুর্ঘটনার রোগী আসছে যে এ গুলো আমার হাসপাতালের লোক দিয়ে সামলা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আমি খুবই হতাশ।

আপনারা এলাকার লোকজন নিয়ে মানববন্ধন করে বা যেভাবে পারেন একটু প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করান। এ বিষয়ে শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ হোসেন পাটওয়ারী বলেন, এই বিষয়ে আমি টিএস এর সাথে আলোচনা করে পরবর্তীতে আপনাদের জানাতে পারবো। আপনি একটু গনপূর্তের সাথে কথা বলেন। গণপূর্ত বিভাগ মুন্সীগঞ্জের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নাজমুল হাসান হিরা বলেন, এখনও ভবনটি হস্তান্তর করা হয়নি। হস্তান্তরের জন্য জেলা সিভিল সাজর্ন বরাবরে চিঠি দিয়েছি। অতিসত্তর আমরা ভবনটি হস্তাস্তর করবো।

আরএক্স/