সীমাহীন লোডশেডিং, কষ্টে শিক্ষার্থীরা


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


সীমাহীন লোডশেডিং, কষ্টে শিক্ষার্থীরা

বন্যার কারণে এ বছর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়েছে। নতুন সময় অনুযায়ী নভেম্বর মাসের গোঁড়ার দিকে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা হবার কথা রয়েছে। তার পূর্বে সেপ্টেম্বর মাসে শুরু হবে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। 

সেই হিসেবে শিক্ষার্থীদের হাতে সময় কম, কিন্তু চাপ বেশী। কারণ বন্যার ফলে পড়াশোনা হয়নি শহর থেকে গ্রাম, সিলেটের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। বাসায় বসে পড়ার সুযোগটাও কেড়ে নিয়েছে ঘরের ভেতরের পানি। তবে পরীক্ষার সময় বেঁধে দেয়ার পর শিক্ষার্থীরা মনোযোগ বাড়িয়েছেন পড়ার টেবিলে। কিন্তু এখন বিপত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে গরম আর লোডশেডিং। যাকে বলে চরম লোডশেডিং। ফলে পড়ার টেবিলে ঠিকমতো বসতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। এতে করে উৎকন্ঠা বিরাজ করছে অভিভাবক মহলেও।

তীব্র গরমের মধ্যে ক্লাসে বা রাতে বাসায় বিদ্যুৎ চলে গেলে ছেলে-মেয়েরা পড়ালেখায় অমনোযোগী হয়ে পড়ছে। তাছাড়া রাতে বিদ্যুৎ চলে গেলে ছেলে-মেয়েরা আর পড়তে বসতে চায় না। এদিকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জেনারেটর নেই বলে বিদ্যুৎ চলে গেলে তীব্র গরমের মধ্যেই শিক্ষকদের ক্লাস নিতে হচ্ছে। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মনোযোগ ধরে রাখা যাচ্ছে না। অনেক শিক্ষার্থী গরমের কারণে ক্লাসের বাইরে চলে যাচ্ছে। এতে ক্লাসে পাঠদানে বিঘ্ন ঘটে। 

যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জেনারেটরের সুব্যবস্থা আছে সেখানেও জ্বালানি তেলের খরচ বহন করা হিমশিম পোহাতে হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, প্রচন্ড গরমের কারণে স্কুলে এসে শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এতে কমে গেছে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি। 

শিক্ষার্থীদের ডেকেও বিদ্যালয়ে আনতে পারছেন না শিক্ষকরা। অনেকে বিদ্যালয়ে এসেও গরমের কারণে স্কুল থেকে লুকিয়ে চলে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। এদিকে বেশিরভাগ বেসরকারি শিক্ষার্থীদের মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের মাধ্যমে পড়ানো হয়৷ কিন্তু বারবার লোডশেডিংয়ের প্রভাবে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যহত হচ্ছে। সরকারি–বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা জানান, বারবার বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসে প্রজেক্টর বারবার চালু এবং বন্ধের ফলে পড়ার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। হারিয়ে ফেলছি মনোযোগ।

প্রতিদিন লোডশেডিং হওয়ায় শিক্ষার্থীদের নানাভাবে ভোগান্তি হচ্ছে। তবে এজন্য স্কুল-কলেজের ছুটি বাড়িয়ে দেওয়া বা স্কুল বন্ধ রাখা কোনো সমাধান নয়, বরং দ্রুত সময়ের মধ্যে আগের মতো নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে হবে। বিদ্যুৎ চলে গেলে এক থেকে দেড় ঘণ্টা পর আসছে। সে কারণে মেয়েটার রাতে ঘুমাতে অনেক দেরি হচ্ছে। 

বিদ্যুৎ না থাকলে চার্জার ফ্যান নিয়ে গরমের মধ্যে ঘরে বসে থাকা সম্ভব হয় না। সে কারণে বিদ্যুৎ না থাকলে সময় অপচয় হচ্ছে। নিয়মিত লোডশেডিং শিক্ষার্থীদের জীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে। শহরের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়িতে বিদ্যুৎ না থাকলে জেনারেটর বা বিকল্প ব্যবস্থা নেই বলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এমনিতে করোনার জন্য প্রায় দুই বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল বলে শিক্ষার্থীরা অনেক পিছিয়ে গেছে। নিয়মিত লোডশেডিং হলে তারা আরও পিছিয়ে পড়বে।

বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বৃদ্ধির ফলে গত ১৯ জুলাই থেকে শিডিউল অনুযায়ী এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। শিডিউল অনুযায়ী সারা দেশের মতো সিলেটেও চলছে লোডশেডিং। তবে সেই লোডশেডিং হচ্ছে সরকারের বেধে দেয়া রুটিনের বাইরে। চরম গরমের সাথে সেই লোডশেডিং জনজীবনে চরম বিপর্যয় ডেকে এনেছে।

শিক্ষাবিদের মতে, শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার মূল সময়টা হচ্ছে রাত। স্কুল, প্রাইভেট বা বিকেলের খেলাধুলার পর রাতে শিক্ষার্থীরা পড়ার টেবিলে বসে। এই সময়ে লোডশেডিং হলে অবশ্যই পড়ালেখার ক্ষতি হয়। যে কোনো পরীক্ষার্থীর প্রস্তুতি নিতে বিঘ্ন ঘটবে। যেহেতু এসএসসি পরীক্ষা সন্নিকটে সেহেতু সন্ধ্যার পর লোডশেডিং কমিয়ে আনাটা পরীক্ষার্থীর জন্য অতি জরুরি হয়ে পড়েছে।

আরএক্স/