মরার আগে বলে গেলেন খুনির নাম!


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


মরার আগে বলে গেলেন খুনির নাম!

টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে দেউলাবাড়ী ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ছিলেন বাবলু সরকার। বাড়ি উপজেলার চৈথট্র গ্রামে। গত ২৫ আগস্ট ফোন করে বাড়ি থেকে তাকে ডেকে নিয়ে মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে দুর্বৃত্তরা। 

চিকিৎসাধীন অবস্থায়  বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। তবে, মৃত্যুর আগে হামলাকারী খালেকের নাম বলে গেছেন তিনি। খালেকের বাড়ি পাশের গ্রাম পাঞ্জানাতে।

বাবলুর পরিবারের সদস্যরা জানান, ২৫ আগস্ট বিকেলে তার ভাতিজিকে কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা থেকে দেখতে আসে বরপক্ষ। সেখানে ব্যস্ত ছিলেন বাবলু। বারবার কল আসছিল তার মোবাইল ফোনে। কে এত ফোন করে- এমন প্রশ্ন করছিলেন তার বড় ভাই ইয়ার মাহমুদ। জবাবে তিনি বলেন, দুলাল মাস্টার ও রিপন তাকে ফোন করছেন, পাকুটিয়া যেতে বলছেন। দুলাল ও রিপনের সঙ্গে সখ্য ছিল বাবলুর। অনুষ্ঠানের কাজ ফেলে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে পাকুটিয়ার দিকে রওনা দেন তিনি।

যাওয়ার সময় তার বড় ভাইকে বলে যান, দুলাল মাস্টার তার এক জমির বিষয়ে তাকে সঙ্গে নিয়ে উকিলের কাছে যাবেন। বিষয়টি নাকি জরুরি। দুলাল হোসেন স্থানীয় পাঞ্জানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং রিপন মিয়া দেউলাবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান সুজাত আলী খানের ভাগনে। পাকুটিয়া বাসস্ট্যান্ডে রিপনের ডেকোরেটরের ব্যবসা রয়েছে।

ঘটনার দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত বাবলুকে ওই ডেকোরেটরের দোকানে বসে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। রাত ৮টার দিকে ভাতিজির বিয়ের খোঁজখবর নিতে ভাতিজা আবু সাইদের মোবাইল ফোনে কল দেন বাবলু।

আবু সাইদ জানান, বিয়ে ঠিক হয়েছে এমন খবর তার চাচাকে দিলে খুশি হন এবং তিনি গাড়িতে টাঙ্গাইল যাচ্ছেন বলে জানান। এরপর আর যোগাযোগ হয়নি।

ইয়ার মাহমুদ বলেন, রাত ৯টার দিকে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতাল থেকে এক লোক ফোন করেন বাবলুর মেয়ে লাবণীর কাছে। ফোনের ওপাশ থেকে ওই লোক জানান- আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বাবলুকে। খবর পেয়ে সেখানে যান তারা। রাতেই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

বাবলুকে যারা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান তাদের বরাত দিয়ে ইয়ার মাহমুদ জানান, মির্জাপুর উপজেলার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে প্রায় মৃত অবস্থায় পড়ে ছিলেন বাবলু। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান এবং বাবলুর পকেট থেকে ফোন বের করে বাড়ির নম্বরে ফোন করেন তারা।

তার দাবি, বাবলুকে হাতুড়ি ও রড দিয়ে মাথার পেছনে আঘাত করা হয়েছিল। কিছুদিন আগে পাঞ্জানা গ্রামে খালেক, মালেক ও মোতালেবের বাড়িতে এক সালিশ করেছিলেন বাবলু। তখন থেকে তাদের সঙ্গে শত্রুতা তৈরি হয়।

আবু সাইদ জানান, হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কথা বলার চেষ্টা করেন চাচা। পাশে থেকে চাচার সেই কথা মোবাইল ফোনে ভিডিও করেন তিনি। ভিডিওতে দেখা যায়, কষ্টে কাতরাতে কাতরাতে বলছেন- তাকে মেরেছে পাঞ্জানা গ্রামের খালেক। এতটুকু বলার পর মুখ দিয়ে আর কথা বের হচ্ছিল না।

বাবলুর স্ত্রী শাহিনা বেগম জানান, তার স্বামীকে দেখতে ঢাকা হাসপাতালে গিয়েছিলেন দুলাল মাস্টার। সেখানে কল করার কথা বলে কৌশলে দুলাল মাস্টারের মোবাইল ফোন নিয়ে নেন তিনি। ফোন তার হাতে রেখে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যান দুলাল। এরপর থেকেই পলাতক তিনি।

কথা হয় পাঞ্জানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, গত সপ্তাহের সব কর্মদিবসেই প্রধান শিক্ষক দুলাল হোসেনের হাজিরা খাতায় সই রয়েছে, তবে বিদ্যালয়ে বেশি সময় থাকতেন না।

দেউলাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সুজাত আলী খান জানান, বাবলু সরকার তার পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান। ঘটনার রাতেই পুলিশকে বিষয়টি জানান তিনি।

ঘাটাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজহারুল ইসলাম সরকার বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নিচ্ছি।

আরএক্স/