মৌলভীবাজারে ফেলে দেওয়া আঁশ বিক্রি করে স্বাবলম্বী শত শত পরিবার
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২:৪৯ অপরাহ্ন, ৮ই জুলাই ২০২৫

মৌলভীবাজারে দিন দিন বাড়ছে মাছের আঁশ প্রক্রিয়াকরণের কাজ। আগে যেসব মাছের আঁশ ফেলে দেওয়া হতো, এখন সেগুলো প্রক্রিয়াজাত করে বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে অসংখ্য পরিবার। এসব আঁশ স্থানীয় বাজার থেকে সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন শহরে সরবরাহ করা হচ্ছে, সেখান থেকে তা রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও।
আরও পড়ুন: পরিবেশ রক্ষায় মৌলভীবাজারে এক লাখ গাছের চারা বিতরণ কর্মসূচি
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মৌলভীবাজার শহরের বিভিন্ন বাজার ও গ্রামীণ এলাকায় অনেক পরিবার এই আঁশ প্রক্রিয়াকরণে ব্যস্ত। কেউ মাছ কাটছেন, কেউ আঁশ ধুচ্ছেন, কেউ বা রোদে শুকাচ্ছেন। শুকনো মাছের আঁশ শক্ত ও কর্কশ হয়ে যায়, যা পরে শিল্পকারখানায় নানা কাজে ব্যবহৃত হয়।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মাছ কাটার সময় আঁশ সংগ্রহ করা হয়। প্রথমে ধুয়ে তা রোদে ২-৩ ঘণ্টা শুকানো হয়। পরে প্রতিমাসে ৩০ কেজির মতো শুকনো আঁশ বিক্রি করা হয়। প্রতি ৩-৪ মাস পর ৫০০ থেকে ৬০০ কেজি আঁশ পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন তারা।
এক আঁশ সংগ্রাহক মনসুর মিয়া জানান, “আমি পশ্চিম বাজার থেকে প্রতিদিন আঁশ সংগ্রহ করি। এই আয়ের মাধ্যমেই আমার পরিবারের ভরণপোষণ ও সন্তানের পড়ালেখার খরচ চালাই।”
একই এলাকার আঁশ বিক্রেতা একলাস মিয়া বলেন, “আগে এগুলো ফেলেই দিতাম। এখন জানতে পেরেছি এই আঁশ দিয়ে ওষুধ, প্রসাধনীসহ অনেক কিছু তৈরি হয়। বিদেশেও যায়। এখন নিয়মিত সংগ্রহ করি।”
আঁশ বিক্রেতা কুলসুমা জানান, “করোনার আগে এক কেজি আঁশ ১০০ টাকায় বিক্রি হতো। এখন ৬০-৭০ টাকা পাই। দাম কম থাকায় অনেক আঁশ জমিয়ে রেখেছি, দাম বাড়লে বিক্রি করব।”
জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১ কেজি মাছ থেকে গড়ে ৮০ থেকে ১০০ গ্রাম আঁশ পাওয়া যায়। যদি প্রতিদিন একটি বাজারে ১ টন মাছ কাটা হয়, তাহলে ৮০-১০০ কেজি পর্যন্ত আঁশ সংগ্রহ সম্ভব। মৌলভীবাজারে প্রতিদিন কয়েক টন মাছ কাটায় শত শত কেজি আঁশ সংগ্রহ করা হচ্ছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মো. আরিফ হোসেন বলেন, “মাছের আঁশ প্রক্রিয়াকরণে অনেক মানুষ জড়িত। এটি তাদের জীবনের মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। আমরা তাদের সুবিধা-অসুবিধা যাচাই করছি। সরকারিভাবে সহযোগিতার ব্যবস্থা নেয়ার চিন্তা আছে।”
পশ্চিম বাজার মৎস্য আড়তের সভাপতি মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, “আঁশ শুকানোর জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই। সরকার যদি উদ্যোগ নেয়, আমরাও পাশে থাকব।”
আরও পড়ুন: মৌলভীবাজার জেলখানার ফুটবল টুর্নামেন্টে উদ্বোধনী খেলায় আওয়ামী লীগের নেতা
বর্তমানে মৌলভীবাজার থেকে সংগ্রহ করা আঁশ শ্রীমঙ্গল হয়ে চট্টগ্রামে যায়। সেখান থেকে বিদেশে রপ্তানি হয়—জাপান, চীন, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স, থাইল্যান্ড ও দক্ষিণ কোরিয়ায়।
এই শিল্পে যুক্ত মানুষদের আশা, সরকার সহায়তা করলে মাছের আঁশ প্রক্রিয়াকরণ মৌলভীবাজারের নতুন আয়ের খাতে পরিণত হবে।
এসডি/