মৃত্যুর ৪ মাস অতিবাহিত: লাশ ফেরত আনতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


মৃত্যুর ৪ মাস অতিবাহিত: লাশ ফেরত আনতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা

সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের নিকটতম আল হারমোলিয়াহ এলাকার একটি ছাগলের খামারে প্রবাসী বাংলাদেশী আবদুর রহমানের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করেছে সৌদি আরবের পুলিশ। আবদুর রহমান লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চর লরেঞ্চ ইউনিয়নের উত্তর চর লরেঞ্চ গ্রামের হানিফের ছেলে। আবদুর রহমানের বাবা হানিফ ও ভাই আবুল কাশেম তথ্যটি নিশ্চিত করেন। 

এর আগে ১ মে সৌদি আরবের পুলিশ তার রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করলেও পরিবার সে খবর জানতে পারেনি। এদিকে মৃত্যুর চার মাস পার হলেও লাশ ফেরত ও হত্যার বিচার না পেয়ে ভুক্তভোগীর পরিবার লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সরকারের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। সৌদি আরবে অবস্থানরত স্বজনদের বরাত দিয়ে পরিবারের সদস্যরা জানায়, আবদুর রহমানকে খুন করে তার লাশ রাস্তার পাশে ফেলে রেখে গাড়ি চাপায় মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার করে সেখানকার মালিকপক্ষ। 

তবে ঘটনায় পুলিশ এক সৌদি নাগরিক ও একজন সুদানি নাগরিককে আটক করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দিয়েছে বলেও জানান নিহতের পরিবার। পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ছেলেকে হারিয়ে এখন চোখে মুখে অন্ধকার দেখেছে বাবা-মা। অন্যদিকে ছেলের লাশ দেশে আনতে আহাজারি করছে অসহায় পরিবার। নিহতের মা লাকী বেগম জানায়, সৌদি আরবে ঈদের আগের দিন বিকেল বেলায় ছেলের সাথে তার শেষ কথা হচ্ছিল। কথা বলার এক ফাঁকে হঠাৎ করে আবদুর রহমান চিৎকার দিয়ে বলে উঠে মা আজরাইল আসে। এ কথা বলেই ফোন কেটে রেখে দেয়। 

এরপর এদিক থেকে বারবার ফোন দিয়েও আর তাকে পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে বাড়ি থেকে পর পর দুদিন তার ফোনে যোগাযোগ করে যখন কোন উত্তর পাওয়া যায়নি, তখন ঘটনাটি তিনি তার মেয়ের জামাই সৌদি প্রবাসী মো. ইউছুপকে জানায়। পরে ইউছুপ আল হারমোলিয়াহ এলাকায় গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে আবদুর রহমানের সাথে তার সুদানি এক সহকর্মীর ঝগড়া হয়েছিল। ঝগড়ার একদিন পর রহমানের রক্তাক্ত লাশ পাওয়া যায়। ইউছুপকে সেখানকার স্থানীয়রা জানায়, আবদুর রহমানকে খুন করা হয়েছে। পরে ইউছুপ স্থানীয় হাসপাতালের মর্গে গিয়ে তার লাশ দেখে আসে। 

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের দিকে স্থানীয় এক আত্মীয়ের মাধ্যমে ভালো চাকুরীর আশায় সৌদি আরব পাড়ি যায় আবদুর রহমান। কিন্ত সৌদি গিয়ে জানতে পারে তার চাকুরী মরুভূমিতে উট চরানো। এ কাজ করা তারপক্ষে মোটে সম্ভব ছিল না। তবুও বহু কষ্টে তিনি ২ বছর কাটিয়েছেন। করোনার সময়ও তার কোন ছুটি ছিল না। এর মাঝে কারণে অকারণে মালিকপক্ষ তাকে মারধর করতো। পরে অতি নির্যাতনে সে সেখান থেকে একদিন তিনি পালিয়ে অন্যত্র চলে যান। যুক্ত হন নতুন আরেকটি কাজে। 

কিন্ত এখানে গিয়েও সে জানতে পারে তার কাজ মরুভূমিতে ছাগলের খামারের শ্রমিক। নতুন কর্মক্ষেত্রে সুদানি সহকর্মীদের সাথে তার প্রায় ঝগড়া হতো। পরে ১ মে তারিখে রক্তাক্ত অবস্থায় তার লাশ পাওয়া যায়। বিদেশে অবস্থানরত স্বজনদের বরাত দিয়ে পরিবারের সদগস্যরা জানায়, সুদানি কোন একসহকর্মী এবং মালিকের একআত্মীয় রহমান কে খুন করে গাড়ি চাপায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে মিথ্যা প্রচার করে। 

কমলনগর থানার অফিসার্স ইনচার্জ মো. সোলাইমান জানান, এ বিষয়ে কেউ জানায় নি। এখন নিহতের বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়ে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামান জানান, খোঁজ নিয়ে লাশ দেশে আনার বিষয়ে আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিবারকে সহায়তা করার চেষ্টা করবো।

আরএইচ/