জয়পুরহাটে মাদ্রাসায় নিয়োগে জালিয়াতি: ৯ লাখ ১৪ হাজার ১৫০ টাকা বেতন–ভাতা ফেরতের নির্দেশ
উপজেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২:২৪ পিএম, ৯ই সেপ্টেম্বর ২০২৫

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পনুট ইউনিয়নের পাঁচগ্রাম জান্নাতুল নুরী দাখিল মাদ্রাসায় এমপিও নীতিমালা উপেক্ষা করে শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এ ঘটনায় ওই শিক্ষকের প্রাপ্ত সব বেতন-ভাতা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
মাদ্রাসার ইবতেদায়ী শাখার ক্বারী শিক্ষক মো. আব্দুল গফুর ১৯৯৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর যোগদান করেন। তবে ক্বারী পদের জন্য আবশ্যকীয় মুজাব্বিদ সনদ ছাড়াই তিনি আলিম পাসের যোগ্যতায় নিয়োগ পান। শর্ত ছিল দুই বছরের মধ্যে মুজাব্বিদ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সনদ জমা দিতে হবে। কিন্তু তিনি সেই শর্ত পূরণ করেননি।
গত ৯/৯/২৩১৭৫ নম্বর স্মারকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০০২, ২০০৬ ও ২০১৮ সালের বিভিন্ন পরিদর্শন ও অডিটে নিয়োগ জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০০২ সালের ১ মে থেকে ২০১৮ সালের ৩০ মে পর্যন্ত তিনি সরকারি কোষাগার থেকে ৯ লাখ ১৪ হাজার ১৫০ টাকা বেতন-ভাতা গ্রহণ করেছেন। এ অর্থসহ পরবর্তী সময়ে প্রাপ্ত সব টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে ২০২২ সালের ১৮ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর আদেশ জারি করে।
এছাড়া নির্দেশে বলা হয়, আব্দুল গফুর যদি আরও আর্থিক সুবিধা ভোগ করতে থাকেন তবে মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট মো. আনোয়ার হোসেন দায়ী থাকবেন এবং তার বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ নিয়ে অভিযোগের জবাব দিলেন ভিপি প্রার্থী আবিদুল
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে এই মাদ্রাসায় কোনো উন্নয়ন হয়নি। শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগেও অনিয়ম হয়েছে একাধিকবার। সম্প্রতি ক্বারী শিক্ষক আব্দুল গফুর পদত্যাগ করেছেন। পরে জানা যায়, তার নিয়োগই ছিল ভুয়া। তারা এ ঘটনায় তদন্তপূর্বক আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
অনুসন্ধানে আব্দুল গফুর সরাসরি মন্তব্য না করলেও তার স্ত্রী কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। তবে গোপন ক্যামেরায় ধারণকৃত বক্তব্যে আব্দুল গফুর দম্পতি দাবি করেন, “শিক্ষা মন্ত্রণালয় একাধিকবার মুজাব্বিদ পাসের সুযোগ দিলেও তাকে জানানো হয়নি।” তিনি আরও জানান, “গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যর্থনার পর ১৮ আগস্ট ২০২৪ সালে আমি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছি।”
মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, “আমার প্রতিষ্ঠানে এ বছর দাখিল পরীক্ষায় কেউ পাস করতে না পারায় আমি প্রচণ্ড চাপে আছি। ওই শিক্ষক (আব্দুল গফুর) বয়সজনিত কারণে দেখতে-শুনতে না পারায় পদত্যাগ করেছেন। শিক্ষা অফিসার, ইউএনও সবাই এসেছিলেন এবং তাদের সিদ্ধান্তেই পদত্যাগ করা হয়েছে।” তবে বেতন-ভাতা ফেরত প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তর না দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান।
কালাই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কাজী মোনারুল হাসান বলেন, “একসঙ্গে ওই মাদ্রাসার দুইজন পদত্যাগ করেছে। বিস্তারিত যাচাই করে এক সপ্তাহ পরে এ বিষয়ে জানাতে পারব।”
কালাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীমা জাহান বলেন, “বিষয়টি আমি জেনেছি। মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে আলোচনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এসএ/