সহকারি পরিচালকের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


সহকারি পরিচালকের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ

ওজনে কম দেয়ার অভিযোগ এনে জরিমানা নেওয়া হয় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। আর প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের হাতে রশিদ দেয়া হয় ২০ হাজার টাকার।

এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারি পরিচালক মো. ইমরান হোসাইনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ইমরানের নিজস্ব দালাল হিসেবে পরিচিত মো. রিদুয়ানকে পুলিশের কাছে সোর্পদ করেছে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান।

জানা গেছে, অভিযানকারি কর্মকর্তা এবং তার নিজস্ব দালাল ভাগ করে নিয়েছেন ১ লাখ টাকা। এ বিষয়ে জানাজানি হওয়ার পর উর্ধ্বতন কর্মকর্তার উপস্থিতিতে ওই কর্মকর্তা ভুক্তভোগীকে ১ লাখ টাকা ফেরত দেয়।

তিনি জানিয়েছেন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারি পরিচালক মো. ইমরান হোসাইনের বিরুদ্ধে জরিমানার নামে দালালের মাধ্যমে টাকা আদায় করে আত্মাসাৎ করার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। বিষয়টি আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মহাপরিচালককে লিখিতভাবে জানানো হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কক্সবাজার প্রেস ক্লাব কার্যালয়ে এসে জরিমানার টাকা আত্মসাতের বিষয়টি জানান ভুক্তভোগী রামুর নাহার ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ। এ সময় তিনি জরিমানা টাকা আত্মসাতের বিষয়ে প্রমানাদি হিসেবে মুঠোফোনের কল রেকর্ড এবং ভিডিও চিত্রও দেন।

নাহার ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, গত মঙ্গলবার সহকারি পরিচালক মো. ইমরান হোসাইন নেতৃত্বে একটি দল নাহার ফিলিং স্টেশনে আসে। এ সময় তার সঙ্গে কিছু আনসার সদস্য আর রিদুয়ান নামের এক ব্যক্তি ছিলেন। এছাড়া আর কেউ ছিলেন। পরে সহকারি পরিচালক মো. ইমরান হোসাইন একটি জ্বালানি তেলের পরিমাপ যন্ত্র নিয়ে পরিমাপ করেন এবং সামান্য ক্রটি রয়েছে বলে ফিলিং স্টেশন বন্ধ করে দেয়। পরে অফিসে যোগাযোগের জন্য বলা হয়।

পরবর্তীতে মুঠোফোনে কল করলে সহকারি পরিচালক মো. ইমরান হোসাইন ১ লাখ টাকা রিদুয়ানকে এবং ২০ হাজার টাকা অফিসে জমা দিতে বলেন। তারপর রিদুয়ানকে ডেকে তার হাতে ১ লাখ টাকা জমা দেওয়া হয়। আর বাকি ২০ হাজার টাকা অফিসের ভেতরে গিয়ে এক কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়ে একটি রশিদ সংগ্রহ করি। পরবর্তীতে অফিসের কর্মকর্তা ২০ হাজার রশিদ দেয়ায় সন্দেহ লাগে। তাই এর পরদিন বুধবার পুনরায় রিদুয়ানকে ১ লাখ টাকা দেয়ার বিষয়টি মুঠোফোনে কথোপকথনের মাধ্যমে রেকর্ড করি আর সহকারি পরিচালক মো. ইমরান হোসাইনের সঙ্গে কথা বলে তারও কল রেকর্ড করি। এ ঘটনার পর পর বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্ত জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক মো. ইমরান হোসাইনের সাথে নানাভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কোনভাবেই কোন রিসিভ করেননি।

দালাল হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ রিদুয়ানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ে আসলে সহকারি পরিচালক মো. ইমরান হোসাইনের সাথে ক্যাব প্রতিনিধি হিসেবে তিনি অভিযানে যান। ওখানে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। পরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি শুনেছেন। বিষয়টি নিয়ে অভিযোগকারি, কর্মকর্তার সাথে সরাসরি আলাপ করার জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

নাহার ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আরও বলেন, বৃহস্পতিবার অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট (এডিএম) আবু সুফিয়ানের কক্ষে আমি ও সহকারি পরিচালক মো. ইমরান হোসাইন যাই। এ সময় প্রথমে মো. ইমরান হোসাইন বিষয়টি অস্বীকার করার চেষ্টা করে। কিন্তু পরবর্তীতে কল রেকর্ড শুনার পর ১ লাখ টাকা নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তার মধ্যে রিদুয়ানকে ১০ হাজার টাকা এবং মো. ইমরান হোসাইন ৯০ হাজার টাকা নেন বলেও স্বীকার করেন। একই সঙ্গে ১ লাখ টাকাও ফেরত দেয়া হয়।

অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান বলেন, অভিযোগকারি দালাল এবং মো. ইমরান হোসাইনের উপস্থিতিতে অভিযোগটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এ ঘটনায় দালাল রিদুয়ানকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারি পরিচালক মো. ইমরান হোসাইনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে লিখিতভাবে জানানো হচ্ছে।

আরএইচ/