নারায়ণগঞ্জে কুকুরের মৃত্যুর শোকে দুই বোনের আত্মহত্যার চেষ্টা


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


নারায়ণগঞ্জে কুকুরের মৃত্যুর শোকে দুই বোনের আত্মহত্যার চেষ্টা

সঙ্গ ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারেনা। তাই কড়াকড়ি পর্দানশীলতার কারণে বাসায় বাইরের লোকের প্রবেশে ছিল কড়া নিষেধাজ্ঞা। এ নিঃসঙ্গতা কাটাতে বিয়ের উপযুক্ত দুই বোন সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন পোষা কুকুর “টাইগার”কে। দুই বোন কুকুরকে জড়িয়ে ধরেই শুয়ে থাকতেন। কিন্তু সেই টাইগার নামের কুকুরটি অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়ার শোক সইতে না পেরে দুই বোন এক সঙ্গে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। তারা মাত্রাতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খেয়ে এবং নিজেদের হাতের রগ নিজেরা কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। 

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় দুই বোন চিরকুটে লিখে যান, আমাদের মৃত্যুর জন্য বাবা কিংবা দাদী দায়ি নয়। আমাদের সাথে যেন টাইগারকেও কবরে রাখা হয়। হ্যাঁ, এমনি একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার সদর পৌরসভার মুকুন্দী গ্রামে। তবে সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পর তারা প্রাণে বেঁচে গেলেও এখনো শংকা কাটেনি। আত্মহনন চেষ্টা কারী দুই বোন হচ্ছেন ওই গ্রামের গোলাম মোস্তফার দুই মেয়ে যথাক্রমে শাহানা (১৭) ও পারুল(১৬)। ঘটনার পর থেকে পাকা ওই বাড়ীর বাইরে এলাকার নারী পুরুষ নির্বিশেষে শত শত জনতা ভীড় জমিয়েছেন।

জানা গেছে, অতিরিক্ত পর্দানশীলতা দেখাতে গিয়ে আপন ভাগিনার সাথে কথা বলার অপরাধে শাহানা ও পারুলের বাবা গোলাম মোস্তফা তার প্রথম স্ত্রী কোহিনুর আক্তারকে তালাক দেন। পরে অন্যত্র বিয়ে করলে তাদের ঘরে দুটি মেয়ে জন্ম নেয়। তারাই হলেন শাহানা ও পারুল। কিন্তু মেয়ে দুটি জন্ম নেয়ার পর পরই দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথেও বনিবনা না হওয়ায় তাদের মধ্যে ডিভোর্স হয়ে যায়। শাহানা ও পারুলকে বাধা ধরা গন্ডির মধ্যে আটকে রেখে গোলাম মোস্তফা তাদেরকে বড় করেন। তার বাড়ীতে বাইরের কোন লোকজন যেতে পারতোনা। মেয়েদেরকে কারো সাথে কথা বলতে দিতেননা। তাই নিঃসঙ্গতা কাটাতে তারা দুই বোন বেছে নেন পোষা কুকুর ”টাইগার“কে। কুকুরটিই তখন থেকে হয়ে উঠে শাহানা ও পারুলের সারাক্ষণের সঙ্গী। এমন ও জানা গেছে যে, তারা কুকুরটিকে জড়িয়ে ধরেই শুয়ে থাকতেন। কিন্তু গত ৩/৪ দিন আগে টাইগার নামের কুকুরটি অসুস্থ হয়ে মারা যায়। তখন এক বোন মৃত কুকুরটিকে বাইরে ফেলে দিয়ে আসতে বললেও অপর বোন তা করতে দেননি।

শনিবার সন্ধ্যায় কুকুরের মৃত্যু শোক সহ্য করতে না পেরে দুইবোন এক সঙ্গে উল্লেখিত চিরকুট লিখে রেখে অতিরিক্ত ঘুমের বড়ি সেবন করে এবং তারা নিজেরাই নিজেদের হাতের রগ কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তাদেরকে উদ্ধার করে প্রথমে আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। কিন্তু অতিরিক্ত রক্ত শুন্যতার কারণে তাদের অবস্থা গুরুতর বিধায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। পুলিশ ঘটনার তদন্ত করে মৃত কুকুরটি নিয়ে আসতে গেলে তাদের লিখা চিরকুটটি পান।
আড়াইহাজার থানার ওসি আজিজুল হক হাওলাদার জানান, নিঃসঙ্গতা থেকেই তারা এ কাজটি করেছেন বলে পুলিশের ধারণা।