আসামীকে খালাস, তদন্ত কর্মকর্তা ও স্বাক্ষীকে তলব করলেন আদালত


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


আসামীকে খালাস, তদন্ত কর্মকর্তা ও স্বাক্ষীকে তলব করলেন আদালত

কক্সবাজারে ইয়াবা পাচার মামলায় আসামীকে খালাসের আদেশ দিয়ে মামলার বাদী, তদন্তকারি কর্মকর্তা ও স্বাক্ষীকে আদালতে স্বশরীরে হাজির হওয়ার নিদের্শ দিয়েছে আদালত।

বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর ) দুপুরে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুল্লাহ আল মামুন এ আদেশে দেন। খালাসপ্রাপ্ত আসামী আবদুর রহমান উখিয়া উপজেলা জালিয়াপালং ইউনিয়নের মনখালি গ্রামের ফরিদের ছেলে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মোজাফ্ফর আহমদ হেলালী জানিয়েছেন, মামলার বাদী, তদন্ত কর্মকর্তা ও মামলার দুই স্বাক্ষীকে শোকজ করা হয়েছে। আদেশে আগামী ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আদালতে স্বশরীরে হাজির হয়ে কেন তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তার ব্যাখা দিতে বলা হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী জানান, ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারী রাতে মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন মনছুর কুলিং কর্নারের সামনে থেকে আবদুর রহমান ও নুরুল আমিনকে ১০ হাজার ইয়াবা সহ আটক করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের কক্সবাজারের পরিদর্শক জীবন বড়ুয়া। ইয়াবাগুলো রহমানের ডানহাতে থাকা শপিংব্যাগে ছিল বলে এজাহারে উল্লেখ রয়েছে। পরে একই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারী মামলা থেকে নুরুল আমিনকে বাদ দেওয়ার আবেদন করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কক্সবাজারের উপ- পরিদর্শক কামরুজ্জামান। এতে ৬ জনকে স্বাক্ষী করা হয়।  এরপর সেই বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর আবদুর রহমান অভিযুক্ত করে চার্জ গঠন করে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত।

চার্জশীট থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে স্বাক্ষীরা হলেন, মামলার বাদী মাদকদ্রব্য  নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কক্সবাজারের পরিদর্শক জীবন বড়ুয়া, তদন্ত কর্মকর্তা উপ- পরিদর্শক কামরুজ্জামান, সহকারী উপ- পরিদর্শক  শহিদুল ইসলাম ও সিপাহি আবুল কালাম  আজাদ। এছাড়া মামলার পাবলিক সাক্ষী হিসেবে রয়েছে এজাহারে দেখানো ঘটনাস্থল শুকনাছড়ি মনছুর কুলিং কর্ণারের মালিক মনছুর আলম ও তার বাবা নুরুল হাকিম।

এবিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী সরকারী কৌঁসুলী মোজাফফর আহমদ হেলালী বলেন, ওই মামলায় আসামী পক্ষে দুইজরে সাফাই সাক্ষ্যগ্রহণ করেছে আদালত। তারা হলেন, উখিয়ার ইনানীর পূর্ব নুরার ডেইলের মৃত নজির আহমদের ছেলে সানাউল্লাহ এবং একই উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের বড় ইনানির ছেলে বাদশা মিয়ার ছেলে নুরুল আমিন রানা।

তিনি আরো বলেন, সাফাই স্বাক্ষীরা আদালতকে জানিয়েছে ঘটনার দিন তারা দুইজন ইনানীর আব্বাসী রেষ্টুরেন্টে চা খাচ্ছিল। সেখান বসে রানা রহমানকে ফোন করে। পরে দুই মিনিটের মধ্যে রহমান সেখানে আসে । এর কিছুক্ষন পর দুটি ওয়াকিটকি কোমড়ে থাকা দুই ব্যক্তি রহমানকে গিয়ে নাম জিজ্ঞেস করে। রহমান তার নাম জানালেই তাকে হ্যান্ডক্যাপ পেরিয়ে নিয়ে আসা হয়। সেখানে রহমানের কাছ থেকে কোন ইয়াবা পায়নি।

মোজাফফর আরো বলেন, জীবন বড়ুয়ার দায়ের করা মামলার ৬ জন স্বাক্ষীর মধ্যে ৪ জনেই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অদিদপ্তরে কর্মরত।  সাফাই স্বাক্ষীর সাক্ষ্য, তদন্ত কর্মকর্তার চার্জশীট, মামলার বাদীর এজাহার ও সাক্ষীদের সাক্ষ্যতে আদালতের মনে হয়েছে মামলাটি সাজানো। এইজন্য রহমানকে খালাস দিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কক্সবাজারের ওই ৪ জন কর্মকর্তা কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা কেন নেয়া হবে না তা জনতে চেয়ে শোকজ করেছে আদালত।

তাদেরকে আগামী ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে স্বশরীরে আদালতে হাজির হয়ে তার ব্যাখা দিতে বলা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আদালত মনে করেছে ইয়াবাগুলো রহমানের কাছে পাওয়া যায়নি। অন্য কারো কাছ থেকে নিয়ে তাকে ফাঁসানো হয়েছে। নতুবা রহমানকে এক জায়গা থেকে আটক করে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মামলাটি লিপিবদ্ধ হয়েছে।  রায় ঘোষণার সময় অভিযুক্ত রহমান আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তিনি জামিন পাওয়ার পর থেকে আর হাজির হননি।

এবিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কক্সবাজারের উপ- পরিদর্শক কামরুজ্জামান বলেন, মাসে দুই তিনটি চার্জশীট আদালতে দিয়ে হয়। কোন মামলার চার্জশীটে কি লেখা রয়েছে মনে নেই। আদালতের আদেশ এখনো পাইনি পেলে  আদেশ অনুযায়ী কাজ করব।

আর মামলার বাদী ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কক্সবাজারের পরিদর্শক জীবন বড়ুয়া বলেন, আদালত যদি আমাদের কাছে ব্যাখা চেয়ে থাকে তবে ব্যাখা দিব।

জেবি/ আরএইচ/