পাটের ভালো দাম পেয়ে কৃষক খুশি


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


পাটের ভালো দাম পেয়ে কৃষক খুশি

এস আর শাহ আলম, বেড়া (পাবনা) : চলতি মৌসুমে সোনালী আঁশ পাটের ভালো দাম পাওয়ায় স্বস্তি ও খুশি  পাবনার বেড়ার পাট চাষিরা। গত বছরের তুলনায় এ বছরে পাটের দাম ও চাহিদা বেশি হওয়ায় চাষের খরচ মিটিয়ে লাভের বাড়তি টাকা ঘরে তুলে নিতে পারছে এ অঞ্চলের পাট চাষিরা। ছোট ও মাঝারি পাট চাষির ঘরে পাট না থাকায় প্রতি হাটেই পাটের আমদানি কমে যাচ্ছে। কৃষক তার উৎপাদিত পাট বিক্রির শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। কৃষকের ঘরের পাট চলে যাচ্ছে মজুতদারের গোডাউনে। কৃষকের উৎপাদিত পাটের সিংহ ভাগ মুনাফা নিয়ে নেয় পাট মজুতদার।

গত কয়েক বছর দেশীয় ও বিশ্ববাজারে পাটের চাহিদা ও দাম বেশি পাওয়ায় বেড়া উপজেলার পাট চাষিরা এ মৌসুমে গত মৌসুমের চেয়ে বেশী জমিতে পাট চাষ করেছে। বেড়া উপজেলায় পাটের বাম্পার ফলন ও কাঙ্খিত মূল্য পেয়ে উৎসাহিত ও স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে পাট চাষিদের ঘরে।  বিক্রেতার চেয়ে ক্রেতা সংখ্যা বেশি থাকায় হাট-বাজারে পাটের চাহিদা ও মুল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাট চাষের অনুকুল পরিবেশ,চাহিদা,আশানুরুপ বাজার মূল্য ও রোগ-বালাই এর প্রার্দূভাব না থাকায় বেড়া পৌর এলাকার পায়না, চকপাড়া ,বাঙ্গাবাড়িয়া, বরশিলা এবং উপজেলার চাকলা, পাঁচুরিয়া, খানপুর, আমিনপুর, বাঁধেরহাট, ত্রিমোহনী এবং চরাঞ্চলের ঢালারচর, বেঙ্গালিয়াচর,চরনাকালিয়া সহ কয়েকটি চর এলাকায় পাটের চাষ হয়ে থাকে।

বেড়া সিএন্ডবি হাটে পাট বিক্রি করতে আসা আমিনপুর ইউনিয়নের পাট চাষি মোনতেজ আলী প্রামানিকের সাথে কথা হলে তিনি জানান, পাটের চাহিদা ও পাটের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কয়েক বছর ধরে পাট চাষ করে আসছি, চার বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন, পাট চাষে সার,কীট নাশক ও পাট গাছের পরিচর্যা অন্যান্য ফসলের চেয়ে কম হওয়ায় এবং রোগ-বালাইয়ের প্রাদুর্ভাব না থাকায় তিনি গত তিন বছর ধরে পাট চাষ করে যাচ্ছে কিন্তু এ মৌসুমে সময়মত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় খাল-বিলে নালায় পাট জাঁগ দেওয়ার মত পানি না থাকায় পাট গাছ শুকিয়ে যাওয়ায় ভালো মানের পাট (আঁশ) পাওয়া যায়নি তবে প্রথম থেকেই পাটের চাহিদা ও দাম বেশী পাওয়ায় লাভ ছাড়া ক্ষতি হয়নি বলে তিনি জানান। হাটে পাট বিক্রি করতে আসা চাকলা ইউনিয়নের পাঁচুরিয়া গ্রামের সিদ্দিক আলীর সাথে কথা বলে জানা যায়,তিনি তার ২ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন,পাট গাছের বাড়তি এবং গাছ বেশ মোটা হয়েছিল কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় পাট পঁচানোর পানি খাল বিলে না থাকায় পাট কাঁটতে দেরী হয়ে গেছে। অবশেষে কাঙ্খিত বৃষ্টিপাত ও পাট পঁচানোর জন্য যথেষ্ঠ পানি পাওয়ায় পাট গাছ থেকে উন্নত মানের আঁশ বা তন্তু পাওয়া সম্ভব হয়েছে। বাড়ীর কাজের জন্য কিছু পাট রেখে ১ মন ২০ সের পাট হাটে নিয়ে এসেছি।

প্রতি বছর পাট কেটে একই জমিতে আমোন ধান রোপন করা হয় কিন্ত এ বছর প্রায় ১ মাস পিছিয়ে যাওয়ায় আমন ধানেরও ভালো ফলোন পাওয়া যাবেনা। তবে অতিরিক্ত বন্যা না হওয়ায় আমন ধানের ফলন হবে বলে আশা করেন নাকালিয়া হাটে পাট বিক্রি করতে আসা চরপেচাকোলা গ্রামের পাট চাষি চাঁন মিয়া। একই জমিতে পাট কাটার পর পরই আমন ধান রোপন করে বিগত বছরগুলোতে লাভবান হয়েছি কিন্তু এ বছর যথা সময়ে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় আমন ধান রোপন করতে দেরি হয়ে গেছে,এতে ভালো ফলন পাওয়া যাবে না বলে জানান বাঁধেরহাটের পাট চাষি মাজেদ মোল্লা। পাটের আঁশ কেমন হয়েছে জানতে চাইলে হাটে পাট বিক্রি করতে আসা শাহজাদপুর উপজেলার আন্ধারমানিক গ্রামের মোজাম্মেল হক বলেন, ডোবা খালে পানি না থাকায় জমি থেকে পাট কাঁটার পর পাট পঁচানোর জন্য সময় মতো জাঁগ দিতে না পারায় পাট গাছ শুকিয়ে যাওয়ায় পাটের উন্নত মানের আঁশ পাওয়া যায়নি, যে আঁশ সংগ্রহ করেছি তা সব এস এম আর গ্রেডের।

বেড়ার বিশিষ্ট পাট ব্যবসায়ি গোলাম সরোয়ার জানান, উত্তারাঞ্চলের মধ্যে পাবনা তথা বেড়া-সাঁথিয়া অঞ্চলের পাট আঁশ উন্নত মানের। এ অঞ্চলে তোষা পাটের আবাদ সর্বাধিক এবং গুনগত মানের আঁশ হিসেবে সি বটম বেশী হয়ে থাকে। বিদেশে কাঁচা পাট (আঁশ) রপ্তানিতে বেড়ার পাটের সুনাম রয়েছে। এবছরে সময়মত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পাট গাছ খরায় শুকিয়ে যাওয়া এবং পাটের ভালো মানের আঁশ পাওয়ার পরিমান খুবই কম। গত বছরের চেয়ে এ বছর পাটের দাম ও ফলন বেশি হয়েছে। ফলে লাভবান হচ্ছেন পাট চাষিরা। বিদেশে রপ্তানী যোগ্য উন্নত মানের সি বটম আঁশের পরিমান তুলনামূলক কম।

বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে পাট কাঁটা ও পাট জাঁগ এবং পাটগাছ থেকে পাট ছাড়ানোর কাজ প্রায় ৯৫ শতাংশ শেষ হয়ে গেছে। কৃষাণ-কৃষাণীরা এখন পাট কাঠি রোদে শুকানো ও ঘরে তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। অন্য বছরের তুলনায় এবার পাটের দাম বেশি পাওয়ায় কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসির ঝিলিক।

বেড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূসরাত কবীর জানান,লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে এ মৌসুমে প্রায় ১শ’৫০ হেক্টর জমিতে অতিরিক্ত পাটের চাষ হয়েছে। এ বছর আমাদের পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৩শ’হেক্টর জমিতে। বিগত সময়ে পাটের চাহিদা ও বাজার মূল্য বেশী পাওয়ায় বেড়ার পাট চাষিরা এ মৌসুমে ৩ হাজার ৪শ’৫০ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ করেছেন। এ মৌসুমে পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ৭শ’৭১ মেট্রিক টন,বাম্পার উৎপাদনের ফলে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।

এ অঞ্চলে পাট চাষ উপযোগি মাটি, রোগ-বালাই না হওয়ায় এবং আবহাওয়া পাট চাষের অনুকুলে থাকায় বেড়া উপজেলায় এ মৌসুমে পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। সময় মত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ডোবা নালায় পর্যাপ্ত পরিমান পানি  না থাকায় পাট জাঁগ মৌসুমের প্রথম দিকে চাষিরা পাট জাঁগে সমস্যার সম্মুখিন হয় তবে কৃষি অধিদপ্তর অধুনিক পদ্ধতিতে পাট জাঁগ দেওয়ার জন্য পাট চাষিদের পরার্মশ দেওয়া হয়েছে। খরার জন্য কৃষকে জমি থেকে পাট দেরিতে কাঁটতে হয়েছে।

পাটের আঁশের মান খারাপ হয়েছে,এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, আঁশের গ্রেডিং-এ এসএম আর সব সময়েই হয়ে থাকে,অতিরিক্ত যা হয়েছে এর পরিমান খুবই কম।

জেবি/ আরএইচ/