সাফ ফুটবলের ফাইনাল: ৬ জনই এক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


সাফ ফুটবলের ফাইনাল: ৬ জনই এক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশেরা মেয়েরা দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে সেরা হয়েছে। এই জয় শুধু আমরা না, দেশের আপামর জনতা গর্বিত। এই মেয়েরা জয়ের ধারা অব্যাহত রেখে একদিন বিশ্বকাপ জয় করে আনবে।

নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা জিতেছেন মেয়েরা। ফাইনাল খেলায় ১১ জনের ৬ জনই ছিল ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুর স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী। তবে, ওই দলে খেলেছেন মোট ৮ জন।

এই কথাগুলো বলছিলেন ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুর স্কুল এন্ড কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও কলসিন্দুর নারী ফুটবল টিমের ম্যানেজার মালা রানী সরকার। প্রথমবারের মতো সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে দক্ষিণ এশিয়ায় ফুটবলে সেরা হয়েছেন বাংলাদেশ মেয়েরা। এই মেয়েরাই একদিন ফুটবল বিশ্বকাপ জিতবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। 

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে কলসিন্দুর স্কুল এন্ড কলেজ থেকে দলে খেলেছেন ৮ জন। এর মধ্যে মার্জিয়া, সাজিদা খাতুন, শিউলি আজিম, মারিয়া মান্ডা, শামসুন্নাহার সিনিয়র ও শামসুন্নাহার জুনিয়র মোট ৬ জন নেপালের বিপক্ষে ফাইনাল খেলায় অংশ নিয়েছে।

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী বাংলাদেশের নারী দলের ফুটবলার মার্জিয়ার বাবা আব্দুল মোতালেব বলেন, আমার মেয়ে শুরুতে এলাকায় যখন ফুটবল খেলত, তখন অনেকে বাঁকা চোখে দেখত। বলত মেয়েদের ফুটবল খেলতে নেই। এখন মেয়ের সাফল্যে এলাকার ওই লোকজনই সম্মান দিয়ে কথা বলেছে। মার্জিয়াসহ সব নারী ফুটবলারের জন্য দোয়া রইল।

জয়ে উচ্ছ্বসিত ফুটবল তারকা সানজিদা আক্তারের বাবা লিয়াকত আলী। জয়ের প্রতিক্রিয়া জানতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন তিনি। তিনি বলেন, আমার আনন্দের শেষ নেই আজ। বাবা হিসেবে আমি গর্বিত। দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে মেয়েগুলো। এই আনন্দ প্রকাশের ভাষা জানা নেই।

একই গ্রামের ফুটবল তারকা শামসুন্নাহার জুনিয়রের বাবা নেকবর আলী বলেন, সকাল থেকেই আমরা পরিবারের সদস্যসহ কলসিন্দুরের ফুটবল ভক্তরা শামসুন্নাহার জুনিয়রসহ সব খেলোয়াড়ের জন্য দোয়া করেছি। যোগ্যতার প্রমাণ রেখে বাংলাদেশের মেয়েরা সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এই জয়ে গ্রামের সবাই আনন্দিত।

একই গ্রামের মারিয়া মান্ডার মা এনোতা মান্ডা বলেন, চ্যাম্পিয়ন হয়ে মেয়েগুলো বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে। ভবিষ্যতে মারিয়াসহ ফুটবল দলের এসব খেলোয়াড় আরও বড় জয় বাংলাদেশের জন্য এনে দেবে-এটাই প্রত্যাশা।

এসব ফুটবল তারকার স্থানীয় কোচ জুয়েল মিয়া বলেন, কলসিন্দুরের অগ্রযাত্রাকে ধরে রাখতে ক্ষুদে ফুটবলারদের নিয়মিত অনুশীলন চলছে। আজকের এই জয় নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড়দের উৎসাহ জোগাবে।

১১ বছর আগে অপ্রতিরোধ্য এই ফুটবল কন্যাদের শুরুটা ২০১১ সালে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ফুটবল টুর্নামেন্ট দিয়ে। জেলার সীমান্তবর্তী এলাকার গারো পাহাড়ের পাদদেশ থেকে ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুরসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রাম থেকে উঠে আসে একদল কিশোরী ফুটবলার। যাদের পায়ের জাদুতে ধুঁকতে থাকা নারী ফুটবল ফিরে পায় আলো। প্রথম দিকে যদিও এলাকার কিছু মানুষ তাদের ভিন্ন চোখে দেখতো, এখন আর সেই অবস্থা নেই।

জেবি/ আরএইচ/