চোখ উঠলে যা করবেন এ সময়


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৮:৩০ অপরাহ্ন, ২৩শে অক্টোবর ২০২২


চোখ উঠলে যা করবেন এ সময়
চিকিৎসক

কিছুদিন ধরেই চোখ ওঠা রোগের প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া দুই কারণেই হয়ে থাকে রোগটি। অনেক সময় ঘুম থেকে উঠলে চোখে একটা পড়েছে এমন অনুভূতি, চুলকানো এবং জ্বালাপোড়া করে। আবার সবকিছু ঘোলাটে দেখা, পানি পড়া, চোখের কোণায় ময়লাও জমে। কোনো ব্যক্তির এমন হলে চোখ ওঠা রোগে আক্রান্ত বলা হয়।


চোখের পাতার নিচে ঝিল্লির মতো পাতলা স্বচ্ছ পর্দার নাম ‘কনজাঙ্কটিভা’। এটি চোখের সাদা অংশ ও চক্ষুপল্লবের ভেতর অংশকে ঢেকে রাখে। ভাইরাসের সংক্রমণে কনজাঙ্কটিভায় তৈরি হয় প্রদাহ, ফুলে যায় চোখের ছোট ছোট রক্তনালি। তখন চোখের রং লালচে হয়ে চোখে ব্যাথা হয়, যাকে আমরা ‘চোখ ওঠা’ বলি। মেডিকেলের ভাষায় একে বলে ‘কনজাঙ্কটিভাইটিস’।


কনজাঙ্কটিভাইটিস বা চোখ ওঠা রোগটি ইদানিং বেশ হচ্ছে। এটি একটি চোখের ছোঁয়াচে রোগ যা একজনের হলে অন্য জনের হতে পারে। শিশুদের বেশি দেখা গেলেও এই রোগ সবার মাঝে ছড়ায়। চোখ ওঠা রোগের সমস্যা সাধারণত কয়েকদিন থেকে চার সপ্তাহের মতো থাকে। এ বিষয়ে ব্যাপক সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়া দরকার।  


উপসর্গ চোখ ওঠা রোগের ক্ষেত্রে সাধারণত যেসব উপসর্গ  দেখা যায় সেগুলি হল:


সংক্রমিত চোখের সাদা অংশটি গোলাপি বা লালচে বর্ণের হয়। চোখ দিয়ে পানি পড়া, জ্বালা এবং চুলকানির ভাব থাকে। চোখে অতিরিক্ত পিঁচুটি আসে। চোখের পাতা ফুলে ওঠে ও কনজাঙ্কটিভা ফুলে ওঠে। চোখে অস্বস্তিবোধ বা দেখতে অসুবিধা হয়। চোখের ভেতরে কিছু একটা রয়েছে বলে মনে হয়। আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা দেখা দেয়। সকালে ঘুম থেকে ওঠার সময় চোখের পাতায় চটচটে পদার্থ লেগে থাকে ইত্যাদি।



কনজাঙ্কটিভাইটিস বা চোখ ওঠার মূল কারণই হলো সংক্রমণ। অ্যালার্জি ও পরিবেশের যন্ত্রণা সৃষ্টিকারী পদার্থগুলির সংষ্পর্ষে এই রোগটি দেখা দেয়। সাধারণত স্ট্যাফাইলোকক্কাস, ক্ল্যামাইডিয়া ও গোনোকক্কাসের মতো ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের কারণে এই সংক্রমণ হয়। সংক্রমিত ব্যক্তির চোখ, সংক্রমিত কসমেটিক, ব্যবহৃদ পদার্থ বা প্রসাধন সামগ্রী থেকেও ছড়াতে পারে। ফুলের রেণু, ধুলোর কণা, পশুপাখির লোম/পালক, দীর্ঘক্ষণ ধরে শক্ত বা নরম কন্ট্যাক্ট লেন্স একনাগাড়ে ব্যবহার করলে চোখের অ্যালার্জি হতে পারে। পরিবেশ দূষণ, ধোঁয়া, বাষ্প, প্রভৃতি সহ পানিতে থাকা ক্লোরিন ও বিষাক্ত রাসায়নিকের কারনে হতে পারে।


করণীয় লক্ষণ ও উপসর্গ জেনে চক্ষু পরীক্ষার মাধ্যমে চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞরা নির্ণয় করেন যে, কারো কনজাঙ্কটিভাইটিস হয়েছে কি না। এজন্য কিছু করণীয় হলো :


বারবার চোখে হাত দেবেন বা চুলকাবেন না। হাত দিলেও ধুয়ে ফেলুন। টিস্যু দিয়ে অতি সাবধানে চোখের পানি বা ময়লা মুছে নিন। ব্যবহার করা সেই টিস্যু নিরপদ স্থানে ফেলুন। বেশিক্ষণ পিসি বা সেলফোনে কাজ করবেন না। করলেও কালো চশমা ব্যবহার করুন। বাইরে গেলে রোদচশমা ব্যবহার করুন। নিজের ব্যবহৃত গামছা, রুমাল, প্রসাধনসামগ্রী অন্যদের ব্যবহার করতে দেবেন না। আই ড্রপ অন্যের সঙ্গে শেয়ার করবেন না। হ্যান্ডশেকের মাধ্যমেও এই রোগ ছড়াতে পারে। তাই বারবার পরিষ্কার করে হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে।


চিকিৎসা কনজাঙ্কটিভাইটিস বা চোখ ওঠা রোগের ক্ষেত্রে সংক্রমণের কারণ অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়া হয়। ব্যাকটেরিয়া ঘটিত সংক্রমণের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহার করতে হয়। আবার ভাইরাস-ঘটিত সংক্রমণ সারাতে একটু সময় লাগতে পারে।   উপসর্গ অনুযায়ী ঠান্ডা সেঁক দিলে এবং আর্টিফিশিয়াল টিয়ার্স বা কৃত্রিম চোখের পানি ব্যবহার করলে উপশম মেলে।  তবে এক সপ্তাহের মধ্যে ভালো না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিৎ।


আরএক্স/