ভয়ঙ্কর গতিতে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’


Janobani

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩:২৬ অপরাহ্ন, ১২ই মে ২০২৪


ভয়ঙ্কর গতিতে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’
ছবি: সংগৃহীত

সারাদেশে তীব্র তাপদাহের পর দীর্ঘ একমাস অতিবাহিত হওয়ার পর চলতি মাসের শুরু থেকে বৃষ্টিতে ক্রমশঃ স্বস্তি ফিরেছে সর্বস্তরের মানুষ। প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে। এবার চলতি মে মাসের শেষের দিকে ঘুর্ণিঝড় সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন আবহাওয়া বিশ্লেষকরা। 


আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আবহাওয়ার এই স্বস্তিকর অবস্থা থাকতে পারে অন্তত আরও চার দিন। অতঃপর বৃষ্টিপ্রবণতা শিথিল হয়ে তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে। তবে তাপপ্রবাহ গত মাসের চেয়ে অনেকটা কম থাকবে। ইত্যবসরে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হতে পারে নিম্নচাপের। মাসের শেষদিকে একটি নিম্নচাপ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন আবহাওয়া বিশ্লেষকরা। বিভিন্ন আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল অনুযায়ী সেটি ধারণা করছেন তারা। একই সাথে শুক্রবার আমেরিকা ও ইউরোপিয়ানের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে। সম্ভাব্য এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম রেখেছেন 'রিমাল'। ওমানের দেয়া যার আরবী নামের অর্থ-বালু। আগামী ২০ থেকে ২৭ মে’র মধ্যে শক্তিশালি ঘূর্ণিঝড়টি সরাসরি আঘাত হানতে পারে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী এলাকায়।


আরও পড়ুন: আবার আসছে তাপপ্রবাহ


কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানান, বঙ্গোপসাগরে মূলত ঘূর্নিঝড় সৃষ্টি হয় বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে ও বর্ষা মৌসুম শেষ হয়ে যাওয়ার পরে। বাংলাদেশের ওপর মৌসুমী বায়ু প্রবাহ শুরু হয় সাধারণত ৩০ মে’র পর থেকে ৭ জুনের মধ্যে। বর্ষা মৌসুম শুরুর পূর্বের ঘূর্ণিঝড় মৌসুম মার্চ মাসে শুরু হলেও শুক্রবার (১০ মে) পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে কোন ঘূর্ণিঝড়-নিম্নচাপ কিংবা লঘুচাপও সৃষ্টি হয়নি। তাই বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য বেশি পরিমাণে শক্তি জমা হয়েছে। সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টি যেহেতু ২০ মে’র পরে সৃষ্টি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে, তাই এটি মারাত্নক শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি ও শক্তিশালী হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় চারটি প্রধান উপাদানের মধ্যে ইতোমধ্যে ৩টি উপাদানের উপস্থিতি আছে মধ্য ও দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে।


আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান জানিয়েছেন, চলতি মে মাসে বঙ্গোপসাগরে ১ থেকে ২টি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে যার মধ্যে মাসের দ্বিতীয়ার্ধে একটি নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। তিনি বলেন, দেশের কোথাও কোথাও এক থেকে তিনটি মৃদু ও মাঝারি এবং এক থেকে দুটি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এ মাসে দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকবে। তবে তা এপ্রিলের মতো অবস্থায় যাবে না।


আরও পড়ুন: ৩ দিনের জন্য আবহাওয়া অফিসের নতুন বার্তা 


এই আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন আবহাওয়া মডেল বিশ্লেষণ করে বলেন, আগামী ২০ থেকে ২৭ মে’র মধ্যে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতের প্রবল সম্ভবনা রয়েছে। শুক্রবার (১০ মে) আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে। সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুযায়ী, রিমাল মে মাসের ২৩-২৫ এর মধ্যে উপকূলে আঘাত হানতে পারে। সরাসরি বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উপকূল দিয়ে স্থলভাগে উঠে আঘাত হানতে পারে।


পূর্বাভাস বিশ্লেষণ করে সম্ভাব্য ঘূর্নিঝড় সম্বন্ধে জানা যাচ্ছে যে, ঘূর্নিঝড়টি সৃষ্টির সম্ভাব্য সময় ১৯-২৩ মে। স্থলভাগে আঘাতের সম্ভাব্য সময় ২৩-২৫ মে। স্থলভাগে আঘাতের সম্ভাব্য স্থান ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার উপকূলবর্তী যে কোনো একটি স্থান। আঘাতের সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে বঙ্গোপসাগরের পূর্ব উপকূলে আঘাত করলে ঘণ্টায় ১৭০-২০০ কিলোমিটার আর পশ্চিম উপকূলে আঘাত করলে ঘণ্টায় ১৫০ -১৮০ কিলোমিটার।


জেবি/আজুবা