রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলতি মাসে ৯ খুন
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪:৩৭ পূর্বাহ্ন, ২৮শে অক্টোবর ২০২২
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলতি মাসে ৯ জন খুনের ঘটনায় চরম আতংকিত হয়ে উঠেছে সাধারণ রোহিঙ্গারা। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) ভোরে দিকে কুতুপালং ১৭ নম্বার ক্যাম্পের সি ব্লকে ২ রোহিঙ্গাকে গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
নিহতরা হলেন, কুতুপালং ১৭ নম্বার ক্যাম্পের সি ব্লকের বাসিন্দা কেফায়েত উল্লাহর পুত্র আয়াত উল্লাহ (৪০) এবং মোহাম্মদ কাসিমের পুত্র ইয়াছিন (৩০)।
১৪ এপিবিএনএর অধিনায়ক এডিআইজি সৈয়দ হারুনুর রশিদ জানিয়েছেন, ভোরে ১৫/২০ জনের একদল সন্ত্রাসী ১৭ নাম্বার ক্যাম্পের সি ব্লকে হামলা চালায়। এ সময় সন্ত্রাসীরা আয়াত উল্লাহ এবং ইয়াছিনকে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে এসে গুলি করে পালিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই ইয়াছিনের মৃত্যু হয় এবং আয়াত উল্লাহকে এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি জানান, খুনের কারণ এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। এ ঘটনায় একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে বৃহস্পতিবার বিকালে মৃতদেহ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে আনা হলে কথা হয় নিহতের স্বজনদের সাথে।
নিহত আয়াত উল্লাহ’র ভাই সালামত উল্লাহ জানান, তার ভাই ক্যাম্প-৫ ডিতে চাকরি করে। দুর্বৃত্তরা সবাই মুখোশধারী, কাউকে চেনা যায়নি। সবার হাতে অস্ত্র ছিল। দুর্বৃত্তরা এক ঘন্টা পর্যন্ত গুলি করতে তার ঘরের চারদিকে ঘিরে দরজা কেটে এবং বেঁড়া ভেঙ্গে রাত সাড়ে ৩ টার দিকে গুলি করে ভাইকে হত্যা করেছে।
তিনি জানান, তার ভাই অপরাধিদের নানা তৎপরতার বিরুদ্ধে কথা বলতো, বিভিন্ন সময় প্রশাসনকে সহযোগিতা করতো। তাই এ হত্যার ঘটনা। নিহত মোহাম্মদ ইয়াছিনের ভাই মোহাম্মদ হাছন বলেন, “আয়াত উল্লাহর এক ভাইয়ের হাত ও পা কেটে ফেলেছিলো দুর্বৃত্তরা। তখন মাঝি ও পুলিশকে আমার ভাই সহযোগিতা করত। এজন্য দুর্বৃত্তরা টার্গেট করেছে আমার ভাই ইয়াছিনকে মেরে ফেলেছে। তারা ইয়াছিনকে মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন অংশে কুপিয়েছে। তারা আমাকেও ধরতে চেয়েছে, কিন্তু আমি অন্যদিকে পালিয়ে যাওয়ায় আমাকে ধরতে পারেনি। এখন তো যা হবারটা হয়ে গেছে, সামনে এ ধরণের ঘটনা যাতে না ঘটে এজন্য ক্যাম্পে র্যাব ও সেনা বাহিনী দিয়ে নিরাপত্তার দেয়ার দাবি করছি।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের দেয়া তথ্য মতে, গত ৫ মাসে ২৫ টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে শুধু মাত্র অক্টোবরে ৯ টি খুনের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে বুধবার (২৬ অক্টোবর) ক্যাম্প ১০ এ খুন হন মোহাম্মদ জসিম, একই দিন মো. সালাম নামের এক রোহিঙ্গা গুলিবিদ্ধ হন। ১৮ অক্টোবর ক্যাম্প ১৯ এ খুন হন সৈয়দ হোসেন। সৈয়দ হোসেন এর পিতা জামাল হোসেন গত ১০ অক্টোবর খুন হয়। এ মামলার বাদি এবং আসামিদের ধরতে তৎপর থাকায় সৈয়দ হোসেনকে খুন করা হয় বলে জানিয়েছেন ৮ এপিবিএন এর সহকারি পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদ।
১৫ অক্টোবর ক্যাম্প ১৩ এর মাঝি মোহাম্মদ আনোয়ার ও সাব মাঝি মোহাম্মদ ইউনুছকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ১২ অক্টোবর হত্যা করা হয় ৯ এর সাব মাঝি মোহাম্মদ হোসেনকে। ৪ অক্টোবর এবিপিএনর সাথে সন্ত্রাসীদের গোলাগুলিতে নিহত হন তাসদিয়া আকতার (১১) নামের এক শিশু।
৮ এপিবিএন এর সহকারি পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদ জানিয়েছেন, ক্যাম্পে মাদকসহ অন্যান্য অপরাধ নিয়ন্ত্রণের বিরোধ সহ নানা কারণে খুনের ঘটনা হয়। এর পাশাপাশি অপরাধিদের তথ্য প্রদান বা বাঁধা প্রদান করলে প্রতিপক্ষ হিসেবে টার্গেট করেও খুন সহ হামলার ঘটনা ঘটে। চলতি মাসে তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ৫ খুনের ঘটনায় ১৯ আসামি আটক হয়েছে।
উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী জানিয়েছেন, ক্যাম্পে প্রতিটি খুনের ঘটনায় মামলা হয়েছে। এপিবিএন ও পুলিশ যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেফতারে তৎপর রয়েছে। একই সঙ্গে মামলার তদন্ত চলছে।
জেবি/ আরএইচ/