জান্নাতি মেহমানদের ফেরেশতারা যেভাবে বরণ করবেন


Janobani

জনবাণী ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬:৫১ পূর্বাহ্ন, ১০ই নভেম্বর ২০২২


জান্নাতি মেহমানদের ফেরেশতারা যেভাবে বরণ করবেন
ছবি: ইন্টারনেট

সালাম অর্থ শান্তি। এর মাধ্যমে পরস্পরের শান্তি কামনা করা হয়, সম্প্রীতির পরিচয় ঘটে। সালাম আদান-প্রদান করা ইসলামের সামাজিক রীতি-সংস্কৃতিও।


শান্তি ও নিরাপত্তার পয়গাম


সালামের মাধ্যমে শান্তি ও নিরাপত্তার পয়গাম দেওয়া হয়। একজন মুসলমান যখন সালাম পেশ করে তখন সে অপর মুসলমানের কাছে নিরাপদ হয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজিদে বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন আল্লাহর পথে সফর করো, তখন যাচাই করে নিও এবং যে তোমাদেরকে সালাম করে তাকে বোলো না যে তুমি মুসলমান নও’ (সুরা নিসা : ৯৪)। এই আয়াতে সালামদাতাকে অবিশ্বাস করতে নিষেধ করা হয়েছে এবং তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।


আল্লাহ তায়ালা নবীজিকে আদেশ করেছেন তিনি যেন সাহাবিদের সালাম করেন। কুরআন মাজিদে ইরশাদ হচ্ছে, যখন তারা আপনার কাছে আসবে যারা আমার নিদর্শনগুলো বিশ্বাস করে, তখন আপনি বলে দিন-‘তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক’ (সুরা আনআম : ৫৪)। এই আদেশ সালামের গুরুত্বকেই ফুটিয়ে তোলে।


সালামের প্রতিদান জান্নাত


সালামের প্রতিদান অনেক বড়। সালামের প্রচার-প্রসারের প্রতিদান হলো জান্নাত। হাদিসে এসেছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হে লোক সব! তোমরা সালামের প্রসারতা বাড়াও, আত্মীয়তার বন্ধনকে দৃঢ় করো, খাদ্য দান করো, মানুষের প্রগাঢ় ঘুমের সময় রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ো, ফলে তোমরা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (মুসনাদে আহমাদ : ২৩৭৮৪; তিরমিজি : ২৪৮৫)


সালামে সম্প্রীতি


সালাম বিনিময়ের মাধ্যমে হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়ে পারস্পরিক ভালোবাসা ও মহব্বত সৃষ্টি হয়। হাদিস শরিফে আছে, আবু বকর ইবনে আবু শায়বা (রা.) হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ না ঈমান আনবে আর তোমরা ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ না একে অন্যকে ভালোবাসবে। আমি কি তোমাদের তা বলে দেব না যা করলে তোমাদের পারস্পরিক ভালোবাসা সৃষ্টি হবে? তা হলো, তোমরা পরস্পরে বেশি সালাম বিনিময় করবে।’ (মুসলিম : ১০০)


মৃত্যুর ফেরেশতার সালাম


ফেরেশতারা মানুষের প্রাণ হরণ করতে এসে ঈমানদার বান্দাকে সালাম করেন। তারপর খুব যত্নের সঙ্গে তার প্রাণ হরণ করেন। কুরআন মাজিদে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘ফেরেশতা যাদের জান কবজ করেন তাদের পবিত্র থাকা অবস্থায়, ফেরেশতারা বলেন তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষণ হোক। তোমরা যা করতে, তার প্রতিদানে জান্নাতে প্রবেশ করো।’ (সুরা নাহল : ৩২)


জান্নাতিদের বরণ


জান্নাতিরা যখন হিসাব-নিকাশ চুকে জান্নাতের পথে রওনা হবেন এবং জান্নাতের দরজায় পৌঁছবেন তখন জান্নাতের পাহারাদার ফেরেশতারা তাদের অভ্যর্থনা জানাবেন সালামের মাধ্যমে। কুরআন মাজিদে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা তাদের পালনকর্তাকে ভয় করত তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। যখন তারা উন্মুক্ত দরজা দিয়ে জান্নাতে পৌঁছাবে এবং জান্নাতের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, তোমাদের প্রতি সালাম, তোমরা সুখে থাকো, অতঃপর সদাসর্বদা বসবাসের জন্য তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করো।’ (সুরা জুমার : ৭৩)


জান্নাতিদের সম্ভাষণ


জান্নাতিরা পরস্পরে দেখা-সাক্ষাতে সালাম বিনিময় করবেন। তাদের সম্ভাষণ হবে সালাম। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন, ‘সেখানে তাদের প্রার্থনা হলো-পবিত্র তোমার সত্তা হে আল্লাহ, আর শুভেচ্ছা হলো সালাম’ (সুরা ইউনুস : ১০)। জান্নাতের অপর নাম দারুস সালাম বা শান্তির নীড়। সেখানে শান্তি ছাড়া থাকবে না কোনো অশান্তি। জান্নাতিরা সালাম ব্যতীত অযাচিত কোনো কথাও শুনবে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তারা তথায় অবান্তর ও কোনো খারাপ কথা শুনবে না। তবে শুধু শুনবে সালাম আর সালাম।’ (সুরা ওয়াকিয়াহ : ২৫-২৬)


বর্তমান অশান্তির সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে সালামের প্রচার-প্রসার জরুরি। আসুন, আমরা সালামে অভ্যস্ত হই।


লেখক : মাদরাসা শিক্ষক, আলেম লেখক ও গবেষক


জেবি/ আরএইচ/