নিষ্প্রাণ পঞ্চগড়ের ৩৩ নদী


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬:৩২ পূর্বাহ্ন, ১৫ই নভেম্বর ২০২২


নিষ্প্রাণ পঞ্চগড়ের ৩৩ নদী
ছবি: সংগৃহীত

দেশের সর্ব উত্তরের সীমান্ত ঘেঁষা জেলা পঞ্চগড়ের নদী গুলো নিষ্প্রাণ হয়ে পড়েছে। জেলার করতোয়া ,ডাহুক , বেরং, ভেরসা ,নাগর, ছেতনাই ও তালমাসহ সব নদী এখন তার জীববৈচিত্র্য হারিয়ে ফেলেছে। আবহমান বাংলার নদীগুলোতে  পানিতে থৈ থৈ করতো। প্রাচীণ ঐতিহ্যের রুপ নিয়ে শত শত বছর ধরে বহমান ছিল এ সব নদী।


পঞ্চগড়ের প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নের কোল ঘেঁষে নদীর অববাহিকা ছিল বিদ্যমান। নদী মাতৃক দেশের সবুজ ভূমির বনানী জুড়ে ছিল র্উবরতা। কৃষক তার ফসলের জমিতে সহসা পলির বহতায় জমি চাষ করতো। সার কীটনাশকের ব্যবহার  ছিল সীমিত মাত্রায়। নদীতে বর্ষা মৌসুম ছাড়া এখন আর পানির তেমন দেখা মিলেনা। একটু আধটু বৃষ্টি হলে হয়তো কিছুটা সময় এসব নদীতে পানির ধারা বহমান থাকে। তবে ছোট নদীগুলোতে দুই চারদিনেই সেই পানি শুকিয়ে যায়। ছোট নদীর অধিকাংশ এখন  আবাদী জমি হিসেবে পরিণত হয়েছে। আমন বা বোরো মৌসুমে বেরা ছাড়াৗ গমের মৌসুমে গম সহ নানা ফসল চাষ করা হয়। যুগ যুগ ধরে এসব নদীতে পানির বহমান স্তর না থাকায় মাটিতে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। জমির আর নদীর জায়গা প্রায় সমতল হওয়ার কাছাকাছি হয়ে গেছে।


পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার সীমান্ত নদী নাগর, তেতুঁলিয়া উপজেলার ডাহুক, ভেরসা, বেরং, বোদা উপজেলার পাথরাজ, সদর উপজেলার ডাহুক, চাওয়াই, তালমা, টাঙ্গন ,করুম দেবীগঞ্জ উপজেলার বুড়ি তিস্তা খুটামারা পাথরাজ,  ডারা,ছেতনাই সহ জেলার করতোয়া সহ ৩৩ টি নদীর অববাহিকা হারিয়ে যাওয়া সহ এসব নদীর মূল চিহ্ন হারিয়ে যেতে বসেছে প্রায়। সাম্প্রতিক সময় পঞ্চগড় জেলার  করতোয়া নদী সহ  হাতে গোনা কয়েকটি নদীর নব্যতা ও পানির স্তর ধরে রাখতে নদী খনন বা পূনঃ খনন করা হয়।


পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের অভ্যন্তরে করুম নদীর কোন চিহ্ন  খুঁজে পাওয়া মুসকিল। সেখানে গিয়ে দেখা যায় মানুষের বাড়ি ভিটা ও আবাদি জমির সাথে প্রায় সমতল হয়ে গেছে করুর নদী। আবাদ হচ্ছে ফসলাদির। এদিকে দেবীগঞ্জ উপজেলার ডারা ও দেবীডুবা ইউনিয়ন পরিষদের পাশ দিয়ে খুটামারা পাথরাজ নদীরও একই অবস্থা।   


পনি উন্ন্য়ন বোর্ড, এলজিইডি  বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন র্কর্তৃপক্ষ পঞ্চগড় জেলার এসব হাতে গোনা কয়েকটি নদী খনন করে বলে জানা যায়। যেমন, করতোয়ার কিছু অংশ, টাঙ্গন, পাথরাজ ,ভেরসা ও বুড়ি তিস্তা সহ অন্যান্য নদী সমূহ। এসব নদীর বেশীর ভাগ অংশ খননে বাদ পড়েছে। ফলে নদীর পুরো অংশ খনন না করায় তেমন সুবিধা আসছেনা। ফলে বৃষ্টির সময় উচুঁ-নীচু জমি ও নানা জায়গায় জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায় মানুষের ঘর-বাড়ি সহ ফসলাদি।


পঞ্চগড় পানির উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (এস ডি ই) মো. রেজাউল করিম রেজা বলেন ‘এসব নদী সীমান্ত নদী। ভারতের অভ্যন্তরে বাঁধ নির্মাণ করায় নদীগুলির এমন অবস্থা। যেমন নদী খনন করা হয়েছে সেখানে পানি থাকছে। তবে শুষ্ক মৌসুমে পানি কম থাকে। নদী গুলিতে পানি না থাকায় পরিবেশগত ক্ষতিগ্রস্থ হলেও কৃষির ক্ষতি হচ্ছেনা। কারণ সেচ সুবিধা পাচ্ছেন কৃষকরা।


বরেন্দ্র’র নিবার্হী প্রকৌশলী ফরিদুল ইসলাম বলেন ‘এবছর সদর উপজেলার টাঙ্গন নদীর ৪ কিলোমিটার এলাকা খনন করা হয়েছে। এই নদীতে দশ বছর আগেও পানি ছিল কৃষকরা জমিতে আবাদ করতে গিয়ে এই নদীর অংশে আবাদ করায় নদীর চিহ্ন হারিয়ে যায়। এখন খনন করার পর এই নদীতে পানি থাকে। সবচেয়ে ভালো খবর টাঙ্গন নদী খনন করতে গিয়ে দুটি জলাধার (মনি) পাওয়া গেছে। আশা রাখি জলাধার ও খননকৃত জায়গায় শুষ্ক মৌসুমেও পানি থাকবে। তাছাড়া এভাবে খনন প্রক্রিয়া চালু থাকলে নদীর পুরনো চিত্র ফিরে আসবে।