অর্থাভাবে চিকিৎসা বন্ধ একই পরিবারের ৩ শিশুর


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১২:১৪ পূর্বাহ্ন, ২৫শে নভেম্বর ২০২২


অর্থাভাবে চিকিৎসা বন্ধ একই পরিবারের ৩ শিশুর
ছবি: জনবাণী

রফিকুল ইসলাম। পেশায় দিন মজুর। দিন মজুরীর কাজ করেই কোন রকমেই স্ত্রী-অসুস্থ সন্তানদের নিয়ে দিন পার করছেন। যেদিন কাজ জোটে সেদিন স্ত্রী-সন্তানদের মুখে খাবার জোটে। কাজ না জুঁটলে কোন রকমেই এক বেলা খেয়েই দিন পার। রফিকুল ইসলামের চার ছেলে। প্রথম ছেলে আবু হাসান (২৩), দ্বিতীয় ছেলে আবু হোসেন (২০), তৃতীয় ছেলে হাসু মিয়া (১৬)। এই তিন ছেলে জন্ম থেকেই থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত। শুধুমাত্র সব ছোট ছেলে (১০) সুস্থ আছে। 


বয়স অনেক হলেও চেহারা ও আকৃতিতে তিন ছেলেকেই শিশুর মত দেখা যায়। এক মাস আগে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট- বাজারসহ মানুষের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বড় ছেলে আবু হাসানের অপারেশন করা হয়েছে। অপারেশনে খরচ হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। এক সপ্তাহ হলো সে হাসপাতাল থেকে বাড়ীতে এসেছে। এখনও পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। 


মেজ ছেলে আবু হোসেন অসুস্থ শরীর নিয়ে পাশ্ববর্তী বটতলা বাজারে অন্যের দোকানে মাসিক দুই হাজার টাকা বেতনে কাজ করে। প্রতি মাসে দ্বিতীয় ছেলে আবু হোসেন ও তৃতীয় ছেলে হাসু মিয়ার শরীরে এক ব্যাগ করে রক্ত দিতে হয়। ডাক্তার বলেছে, অতি দ্রুত সময়ে দুজনেরও অপারেশন করা খুবই জরুরী। এতো টাকা কিভাবে জোগার করবেন তা নিয়ে চরম দুচিন্তায় পড়েছেন দিন মজুর বাবা রফিকুল ইসলাম। অভাব-দারিদ্রতা তাদের নিত্য সঙ্গী। রফিকুল ইসলাম অসুস্থ তিন সন্তানের জন্য জীবনে অনেক কষ্টে জমানো টাকা-পয়সা,গরু-ছাগল বিক্রিসহ ধার-দেনা করে বড় ছেলে অপারেশন করে পথে বসেছেন। 

ঘরে এক কানা কড়িও নেই। তিনি কি ভাবে দুই সন্তানের অপারেশন করাবেন এই ভাবনায় ধীরে ধীরে ধুসর হয়ে যাচ্ছে তার চারদিক। এক দিকে সংসারের ৬ সদস্যের পেটের ক্ষুধা মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অন্য দিকে অসুস্থ সন্তানের চিকিৎসা খরচ কি ভাবে জোগার করবেন এ চিন্তায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন বাবা রফিকুল ইসলামসহ তার পরিবার। 


সব মিলিয়ে চরম দুর্দশা ও দুর্দিনে জীবন কাটাতে হচ্ছে তাকে। আর্থিক সংগতি না থাকায় অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে তিন ছেলের পড়ালেখা। আক্রান্ত তিন সন্তানের সুচিকিৎসার জন্য সরকারসহ সমাজে বিত্তবানদের প্রতি আর্থিক সহায়তার চেয়েছেন এক অসহায় হতদরিদ্র বাবা রফিকুল ইসলাম। কোন আবাদী জমি নেই। মাত্র দেড় শতাংশ জমির বসত ভিটায় একটি চালা ঘর ছাড়া সহায় সম্বল কিছুই নেই তার। দিন মজুরী কাজ করে স্ত্রী-চার সন্তানকে নিয়ে অতিকষ্টে দিন পাড় করছেন। এক মাত্র মজুরী বিক্রির টাকা ও মানুষের কাছে ধার-দেনা করেই অসুস্থ তিন সন্তানকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে মানবেত জীবন-যাপন করছেন ওই অসহায় পরিবারটি। পরিবারটির করুণ পরিনিতি দেখে স্থানীয়দের সহায়তায় পনের টাকা কেজির চালের রেশন কার্ডটি পেয়েছেন। এ ছাড়া আর নেই কোন সরকারী সুযোগ সুবিধা। ছেলেদের চিকিৎসার টাকা তিনি পাবেন কোথায় ? তাই চোখের সামনে এক রকম বিনা চিকিৎসায় সন্তানরা ধুকে ধুকে মরতে বসলেও টাকার অভাবে হচ্ছে না চিকিৎসা। হতদরিদ্র ওই দিনমজুর রফিকুল ইসলাম কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের মধ্য রাবাইতারী গ্রামের বাসিন্দা। জন্মের পর থেকে এ পর্যন্ত নিজের কিছু জমানো অর্থসহ আত্মীয়-স্বজন, পাড়া প্রতিবেশিসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ছেলের চিকিৎসার জন্য ভিক্ষা করে প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা খরচ করেছেন।


অনেকটা অশ্রুভেজা কন্ঠে দিনমজুর রফিকুল ইসলাম বলেন, ঘরে এক কানা কড়িও নেই বাহে! চোখের সামনে সন্তানদের এ করুন পরণতি আর সইতে পারছিন না,আমার সন্তানকে বাঁচান বাহে! অর্থাভাবে ছেলেদের চিকিৎসা এখন প্রায় বন্ধের পথে। টাকার অভাবে প্রতিমাসে দুই ছেলের রক্ত দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই সন্তনদের বাঁচাতে তিনি সহৃদয়বান ব্যক্তিসহ সরকারের কাছে সন্তানদের সু-চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা চেয়েছেন। সাহায্য পাঠানোর বিকাশ নম্বর (আবু হাসান ০১৩২৪১৩২৩১৪)।


রফিকুল ইসলামের স্ত্রী হাজরা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, বিক্রি করার মত কিছুই নেই আমাদের। টাকার অভাবে ছেলেদের চিকিৎসা বন্ধের পথে। চোখের সামনে সন্তানদের এ করুন পরিণতি আর সহ্য হয়না। তাই সন্তানদের বাঁচাতে সমাজের দানশীল হৃদয়বান ব্যক্তি ও সরকারের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন তারা।


এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সুমন কান্তি সাহা বলেন, থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তের রোগ। এ রোগে আক্রান্তদের শরীরে রক্ত দিতে হয়। নিরাময় না হলেও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চিকিৎসায় এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।


এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুমন দাস জানান, ওই পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে সর্বাত্বক সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন।