ফুলবাড়ীতে চাতরার বিলে মাছ ধরা বাওয়া উৎসবে মানুষের ঢল


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১১:৪৬ অপরাহ্ন, ২৭শে নভেম্বর ২০২২


ফুলবাড়ীতে চাতরার বিলে মাছ ধরা বাওয়া উৎসবে মানুষের ঢল
ছবি: জনবাণী

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে মাছ ধরা উৎসবে মানুষের ঢল নেমেছে। উপজেলার শিমুলবাড়ি ইউনিয়নের চাতরার দোলা-মাথাঢুলারছড়ায় দিনব্যাপী চলে এ মাছ ধরার উৎসব। বাওয়াইতরা পলো, জাল, জালি, শিপজাল, কারেন্ট জাল, ফারাংগি জাল, চাক প্রভৃতি মাছ ধরার উপকরণ নিয়ে কোমরে গামছা বেঁধে নেমে পড়ে। এভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে সবাই সারিবদ্ধভাবে একসাথে একযোগে মাছ ধরাকে স্থানীয়ভাবে বাওয়া উৎসব বলে ।


কাছে-দুরের বিভিন্ন বয়সী মানুষ স্থানীয়দের সহযোগিতায় দিনক্ষণ ঠিক করে মাছ ধরার উৎসবে যোগ দেন। 


মাছ ধরার স্থানটি শিমুলবাড়ি গ্রামের হলেও পলো বাওয়া উৎসবে অংশ নেন আশপাশের গ্রামসহ দুর দূরান্তের শত শত মাছ শিকারি। ধরা পড়ে বোয়াল, শোল, মাগুর, সিং, রুই, মৃগেল কার্পসহ বড় বড় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।শীতের আগমনে আশ্বিনের শেষ থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত সাধারণত এ বাওয়া হয়ে থাকে। এ সময় চারদিকে নদী-নালা, খাল-বিল, ডোবা ও জলাশয়ে যখন পানি কমতে থাকে।


স্থানীয়রা জানান, বাওয়ার প্রচারণা শুনে আগের দিন জাল, চাকসহ বিভিন্ন উপকরণ প্রস্তুত করে । পরদিন নির্ধারিত বিলে বা নদীতে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মাছ ধরে। সাথীদের মধ্যে যদি কারো মাছ ধরা পড়ে সবাই তখন হৈ-চৈ করে সমসুরে ডাক ধরে। মাছ ধরার পর রশি দিয়ে কোমরে বেঁধে আবার সবার সাথে বেয়ে যায় জাল। এভাবে উৎসব মুখর পরিবেশে মাছ ধরে বাওয়াইতরা। বিলে বা নদীতে যেদিন বাওয়া হয় সেদিন স্থানীয়রা ও মাছ ধরতে আসা (বাওয়াইতারা) লোকেরা হৈ-চৈ করে ব্যাপক আনন্দ পায়।স্থানীয়রা জানান, প্রতিবছর এ বিলে দুই থেকে তিন বার বাওয়া উৎসব হয়। তবে বিলে মাছের উপস্থিতি ও পানির পরিমাণের ওপর উৎসবের দিনক্ষণ ঠিক করা হয়। নির্দিষ্ট দিনে মোবাইলে যোগাযোগ করে সকাল থেকে বাওয়ালেরা আসতে শুরু করেন।শীতের তীব্রতা উপেক্ষা করে ঠান্ডা পানির ভয়কে উপেক্ষা করে নেমে পড়ে বিলে। হই-হুল্লোড় শব্দে মুখরিত হয়ে পড়ে পুরো এলাকা। 


চাতরার দোলায় মাছ ধরতে আসা শরীফ মিয়ার চাক জালে বড় একটি বোয়াল মাছ আটকে পড়ে। বোয়াল মাছটি পেয়ে তিনি বেজায় খুুশি। শুধু শরীফ নয় তার মতো আরো অনেকেই বোয়াল, রুই, কাতল মাছ পেয়েছেন। শরীফের আরেক সাথী সোহেল বাড়ি ফিরছেন খালি হাতে। তিনি বলেন,মাছ পাওয়া অনেকটাই ভাগ্যের ব্যাপার। 


শিমুলবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা গনি মিয়া বলেন, ‘প্রতি বছর বিলে মাছ ধরতে আসি, এবারও এসেছি। পাশ্ববর্তী নন্দিরকুটি গ্ৰামের মজনু মিয়া বলেন,মাছ পাওয়া বড় নয়। সবাই মিলে আনন্দ করছি, হৈ–হুল্লোড় করছি, এটাই অনেক। তারপরও আমি একটি শোল মাছ পেয়েছি। আনন্দ লাগছে।’


দুরের গ্রামের শাহিন আলম বলেন, আগে বেশি মাছ পাওয়া যেত। এখন কমে গেছে। তারপরও প্রতিবছরই এ বিলে উৎসব মুখর পরিবেশে পলো বাওয়া উৎসব হয়। রামখানা গ্ৰামের রমজান আলী বলেন একসময় গ্রামবাংলার মানুষেরা দল বেঁধে মাছ ধরতো। সময়ের পরিবর্তনে ঐতিহ্যের মাছ ধরা উৎসবটাও বিলুপ্তপ্রায়। 


স্থানীয় বাসিন্দা জিন্নু মিয়া বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের গ্রামে এই পলো বাওয়াইত উৎসব হচ্ছে। এখন মাছ কমে গেছে। আগে বেশি মাছ পাওয়া যেত। অসুস্থতায় পানিতে নামতে না পারলেও পাড়ে দাঁড়িয়ে দেখি। আনন্দ পাই।


আরএক্স/