পুলিশ বিএনপি সংঘর্ষ

আমান-জুয়েলের জামিন, রিজভীসহ ৪৩৪ জন কারাগারে


Janobani

আজাহারুল ইসলাম সুজন

প্রকাশ: ০৬:৩২ পূর্বাহ্ন, ৯ই ডিসেম্বর ২০২২


আমান-জুয়েলের জামিন, রিজভীসহ ৪৩৪ জন কারাগারে
বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়েছে

রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলায় আমান উল্লাহ ও আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলের জামিন দিয়েছেন আদালত।


বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) ঢাকার অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।


এদিন তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠুতদন্তের জন্য ১৫ আসামির সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। এ সময় আমান উল্লাহ আমান ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল কাদের ভূইয়া জুয়েলের জামিন আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। শুনানি শেষে বিচারক রিজভীসহ ৪৩৪ জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আমান ও হিমেলের জামিন মঞ্জুর করেন। এছাড়া আসামি ১৪ জনের দুই দিনের রিমান্ডমঞ্জুর করেন।


বিএনপি সিনিয়ার যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ ৪৩৪ জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া বিএনপির ১৪ জনের ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সাবেক এমপি সেলিম রেজার রিমান্ড নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।


রিমান্ড আসামিরা হলেন-বিএনপির সহ-জলবায়ু সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলুজ্জামানান সেলিম, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক, বিএনপি নেতা শাহজাহান, এ কে এম আমিনুল ইসলাম, ওয়াকিল আহমেদ, সজীব ভূঁইয়া, সারোয়ার হোসেন শেখ, সাইদুল ইকবাল মাহমুদ, মিজানুর রহমান, আল-আমিন, সাইফুল, শুভ ফরাজি ও মাহমুদ হাসান রনি।


কারাগারে যাওয়া উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান।


রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীরা বুধবার সকাল থেকে জড়ো হতে শুরু করে। দুপুরে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে, বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে। এসময় পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। বিএনপির নেতাকর্মীরাও লাঠিসোঁটা নিয়ে পুলিশকে ধাওয়া করে। দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে নয়াপল্টন রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে বিএনপির নেতাকর্মীরা দফায় দফায় মিছিল করেন। সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে আগুন লাগিয়ে দেন।


পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। মকবুল হোসেন নামে গুলিবিদ্ধ একজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মারা গেছেন।


বিকেল ৪টার দিকে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলে কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে সামনের সড়কে আসেন বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও সদস্য আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলসহ বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। এসময় গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সদস্যরা এ্যানী ও জুয়েলকে তুলে নিয়ে যায়। তবে সাংবাদিকরা ডিবির কর্মকর্তাদের কাছে তাদের আটক করা হয়েছে কি না, জানতে চাইলেও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।


এরপর, কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভেতর থেকে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী-আমান উল্লাহ আমান, বিএনপি চেয়ারপাসনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীসহ শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ।


বুধবার বিকেল ৫টা ২০ মিনিটের দিকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ বিএনপি কার্যালয়ে প্রবেশ করে তাদের বের করে নিয়ে আসে। পরে রিজভীসহ অন্যদের পুলিশ ভ্যানে তুলে নিয়ে যেতে দেখা যায়।


ঘটনার পর তাৎক্ষণিক দলীয় কার্যালয়ে পুলিশের অভিযানের বিষয়ে কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বিএনপি অফিসে তাণ্ডব চালিয়েছে পুলিশ। এসময় তারা দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামানসহ শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করে নিয়ে গেছে।