কদর বাড়ছে বিক্রমপুরের ঐতিহ্যবাহী রেডিমেট ঘরের


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৩৩ পূর্বাহ্ন, ১৫ই ডিসেম্বর ২০২২


কদর বাড়ছে বিক্রমপুরের ঐতিহ্যবাহী রেডিমেট ঘরের
বিক্রমপুরের ঐতিহ্যবাহী রেডিমেট ঘর- ছবি: জনবাণী

টিন ও কাঠের তৈরি বিভিন্ন ডিজাইনের নান্দনিক ঘর যুগযুগ ধরে বিক্রমপুর তথা মুন্সীগঞ্জের জনপথের ঐতিহ্যবহন করে আসছে। দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে এক তলা, দেড় তলা ও দুতলা একাধিক কক্ষবিশিষ্ট চৌচালা টিনের ঘরের জৌলুস। এ অঞ্চলের প্রতিটি বসত বাড়িতেই দেখা মিলবে ঐতিহ্যবাহী কাঠ-টিনের তৈরি বিলাশবহুল নজরকারা এসব ঘরের। কারুকাজ সম্পন্ন রেডিমেট টিনের এসব ঘরের চাহিদা থাকায় এ অঞ্চলে ঘরশিল্প গড়ে উঠেছে। 


মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার বালাশুর, ভাগ্যকুল, কামারগাঁও, রাঢ়িখালের বালাশুর, নতুন বাজার, বাঘড়া, বীরতারার সাতগাঁও, কোলাপাড়ার ফুলকুচি, ষোলঘর, কুকুটিয়া এলাকার বিভিন্ন রাস্তার পাশে উঁচু জমিতে সারিসারি রেডিমেট ফিটিংস ঘরের পসরা সাজিয়ে রাখতে দেখা গেছে। মুন্সীগঞ্জ ছাড়াও রেডিমেট এসব টিনের ঘর যাচ্ছে ফরিদপুর, দোহার, নবাবগঞ্জ, নারিসাসহ দেশের নদীর তীরবর্তী এলাকায়। এসব ঘর শিল্পে শতশত মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে। 


সরেজমিন দেখা যায়, শ্রীনগর-দোহার আঞ্চলিক সড়কের বালাশুর,বটতলা, দক্ষিণ কামারগাঁও ও মধ্য কামারগাঁও সড়কের পাশে রেডিমেট ঘরের মেলা। খোলা আকাশের নিচে সমতল জমিতে ঝকঝকে টিন ও কাঠের কারুকাজ সম্পন্ন রেডিমেট ঘরগুলো মানুষের দৃষ্টি কাড়ছে। 


দেখা গেছে, ঘর তৈরির কাজে কাঠ মিস্ত্রি ও শ্রমিকরা ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। এ শিল্পে প্রায় দুই শতাধিক শ্রমিক কাজ করছেন। জানা যায়, ঘর নির্মাণ কাজে ব্যবহার হচ্ছে ঢেউটিন, প্লেনশিট, লোহা কাঠসহ অন্যান্য কাঠ। 


আজিজুল মোল্লা নামে এক কাঠ মিস্ত্রি বলেন, মহাজনদের চাহিদা অনুযায়ী ঘর তৈরির অর্ডার নেন তারা। সাধারণত ২১, ২৩ ও ২৫ বন্ধরের ঘরের চাহিদা বেশি। একেকটি ঘর তৈরির কাজে ৪-৫ জন শ্রমিক মিলে প্রায় এক মাস সময় লাগে। ঘর ব্যবসায়ীরা তাদের কাজের মজুরী দেন। 


ভাগ্যকুলে লিটন ফকির, শাহ আলম শেখ, মো. শহিদ, মো. দুলাল মিয়া, আনোয়ার শেখসহ বেশ কয়েকজন রেডিমেট ঘরের ব্যবসা করছেন। মো. বাবু সারেং বলেন, গত ২৬ বছর ধরে ঘর তৈরীর কাজ করছি। এ বছর বেশ কয়েকটি ঘর বিক্রি হয়েছে। এখন আবার ৬টি দেড় তলা ঘরের কাজ শেষ হয়েছে। এগুলোও বিক্রির জন্য অস্থায়ীভাবে ফিটিংস করা হয়েছে।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দাম হাকানো হয় ঘরের উচ্চতা, টিন-কাঠের মান এবং ডিজাইন ও সাইজের ওপর ভিত্তি করে। এক তলা একটি ঘরের দাম ধরা হয় ২ লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকা, দেড় তলা ৩ লাখ থেকে ৪ লাখা টাকা, দু’তলা ঘর বিক্রি করা হয় ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত। মহাজন ও ক্রেতাদের আলাপ আলোচনা সাপেক্ষে ঘরের দরদাম কিছুটা কম বেশিও হতে পারে। এছাড়া ক্রেতাদের চাহিদা অনুসারে ঘর তৈরির অর্ডার নেওয়া হয়। প্রতিটি ঘরে একধিক কক্ষ রয়েছে। ঘরের খুঁটি, বেড়া, আড়াসহ অবকাঠামোতে নাইজেরিয়ান, সুপার, বাচালু, ওকান ও মিমবাসু নামক লোহা কাঠের ব্যবহার হচ্ছে। পাটাতনে দেওয়া হচ্ছে কড়ইসহ অন্যান্য জাতের কাঠ। বেড়া প্লেনশিট ও চালে সাদা ঢেউটিনের ব্যবহার করা হয়। বসবাসের জন্য একটি ঘরের স্থায়ীত্ব ধরা হয় ৫০ থেকে ৭০ বছর পর্যন্ত। টিনের ঘর এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় খুব সহজেই স্থান্তর করা সম্ভব বলে নদীভাঙ্গণ এলাকায় টিনের ঘরের চাহিদা বেশি।


দৃষ্টিনন্দন এসব টিনের ঘর বিক্রমপুরের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষের কাছেও প্রিয় হয়ে উঠেছে। পছন্দের রেডিমেট ঘরের সন্ধানে দূরদুরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ আসছেন এ অঞ্চলে। মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী লৌহজং উপজেলায় মালিরঅঙ্ক, ঘৌড়দৌড়, কনকসারসহ বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে রেডিমেট ঘরশিল্পের বাজার।