হাজার বিঘা জমিতে বিষমুক্ত সবজি আবাদ, লাভবান কৃষক
উপজেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২:০৯ পূর্বাহ্ন, ৫ই জানুয়ারী ২০২৩
চুয়াডাঙ্গার দমুড়হুদায় এক হাজার বিঘা জমিতে নিরাপদ (বিষমুক্ত) সবজির আবাদ করা হয়েছে। উপজেলার সীমান্তবর্তী পারকৃষ্ণপুর-মদনা আইপিএম মডেল ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে নেট বা সেক্স ফেরোমন পদ্ধতির মাধ্যমে বেগুন,কুমড়া,পাতাকপি,ফুলকফিসহ বিভিন্ন সবজির আবাদ সমিতির মাধ্যমে করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানাগেছে, পরিবেশ বান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্প সারা দেশে ২০টি আইপিএম মডেল ইউনিয়ন নির্বাচন করা হয়েছে। উপজেলার এই ইউনিয়নে প্রচুর পরিমান সবজির আবাদ হওয়ায় ইউনিয়নটি আইপিএম মডেল ইউনিয়ন হিসাবে স্থান পায়। পরে সেখানে কৃষি অফিসের সহায়তায় ২০টি সমিতি গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি সমিতিতে নারী পুরুষ মিলে ২৫জন করে সদস্য রয়েছে।২০টি সমিতির ৫০০জন সদস্য মিলে ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মাঠে ১০০ একর জমিতে (বিষ মুক্ত) নিরাপদ সবজির আবাদ হয়েছে।
ইউনিয়নের বাড়াদি গ্রামের কৃষণী শাহানারা খাতুন বলেন, তিনি ২০শতক জমিতে নেট পদ্ধতিতে বেগুন রোপন করেছে। কৃষি অফিসের পরামর্শে জমির চারিদিকে বাশের খুটি ও উপরে কাবারি দিয়ে মাচা করে নাইলনের নেট দেওয়া হয়েছে। চারা রোপনের পর থেকে কোন ধরনের কিটনাশক ব্যবহার না করে ক্ষেতে সেচ দেওয়ার সময় পানির সাথে সেচ নালায় সামান্য পরিমাণ ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে দেওয়া হয়। যাব পোকা দমনে ঘলুদ রঙের আঠা ফাঁদ ব্যবহার করা হয়। আলোর ফাঁদ ব্যবহার করে পোকা দমন করা হয়। তার ক্ষেতে ৮হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ৬মাসের ফসলে তিন মাস বয়সি গাছ থেকে ইতোমধ্যে ১৮ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করেছে। বিষমুক্ত হওয়ায় তাদের এসব সবজি হাট বাজারে নিতে হয় না। ফড়িয়ারা ক্ষেত থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। তার খেতে আর ২হাজার টাকার মত খরচ হবে। গাছে য়ে ভারে ফুল ফল আসছে বাকি চার মাসে আরো চল্লিশ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করতে পারবে। বাজার দর এমন থাকলে সকল খরচ বাদে তার এই জমি থেকে ৫০হাজার টাকা লাভ হবে বলে আশা করছেন।
হৈবতপুর গ্রামের কৃষক আশাদুল হক বলেন, তিনি ২০ শতক জমিতে পেয়ারা বাগান করেছে। কৃষি অফিসের পরামর্শক্রমে ঐ ক্ষেতে সাথী ফসল হিসাবে কুমড়ার চারা ও রসুন রোপন করেছে। পেয়ারায় কোন ধরনের বালাই নাশক ব্যবহার করা হচ্ছে না। ক্ষেতে জৈব বালাই নাষক ব্যবহার ছাড়া ও আলোর ফাঁদ,সেক্স ফেরোমন,আঠালো ফাঁদ,হাত জাল,সুসম সার ব্যবহার করে পোকা দমন করা হচ্ছে। তার গাছে বিপুল পরিমান পেয়ারা হয়েছে। সাইজ ও বেস ভালো। ছোট ছোট চারা গাছ থেকে ইতোমধ্যে তার ৩০ হাজার টাকার পেয়ারা বিক্রি হয়েছে। পেয়ারর চারা গাছ হওয়ায় সে একই ক্ষেতে সাথী ফসল হিসাবে কুমড়া ও রসুন চাষ করেছে। একই ভাবে কুমড়ার পরিচর্যা করা হচ্ছে। এতে সে পেয়ারা ও একই ক্ষেতে সাথী ফসল কুমড়া ও রসুন চাষ হওয়ায় একই ক্ষেত থেকে একই সময়ে তিনটি ফসল উৎপাদন হওয়ায় বাড়তি উৎপাদন হবে তেমনি ভালো লভবান হবে বলে আশা করছেন তিনি।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মনিরুজ্জামান,বলেন, চলতি বছরের অক্টোবর মাসে উপজেলার সীমান্তবর্তী এই ইউনিয়ন টি আইপিএম মডেল ইউনিয়ন স্থান পাওয়ার পর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ২০টি সমিতি করা হয়েছে। প্রতি সমিতিতে কৃষক কৃষানী মিলে ২৫জন সদস্য। এই সমিতির মোট সদস্য সংখা ৫০০জন। এই সকল সমিতির মাধ্যমে ১০০০বিঘা জমিতে নিরাপদ (বিষমুক্ত) সবজির আবাদ করানো হয়েছে। এদেরকে প্রশিক্ষন দেওয়া হয়েছে। কৃষি বিভাগ থেকে বিনামূলে বীজ,সার নগদ অর্থসহ পোকা মাকড় দমনের যন্ত্র সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তেমনি উৎপাদন বৃদ্ধির সার্থে নিয়মিত তাদের ক্ষেত পরিদর্শন করে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বালাই নাশক ছাড়াই সব্জী উৎপাদন করায় খরচ অনেকাংশে কম হবে তাতে কৃষকরা ভালো লাভবান হবে।
আরএক্স/