ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে এরশাদ শিকদারের ‘স্বর্ণকমল’


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৫:২১ পূর্বাহ্ন, ৫ই জানুয়ারী ২০২৩


ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে এরশাদ শিকদারের ‘স্বর্ণকমল’
এরশাদ শিকদারের ‘স্বর্ণকমল’

সারাদেশে আন্ডারওয়ার্ল্ডের গডফাদার হিসেবে এরশাদ শিকদারের নাম ছড়িয়ে পড়েছিল তার উত্থানের পর পরই। সেই প্রতিপত্তির নমুনা হিসেবে তার আস্তানা তৈরি হয় বিশালবহুল এক বাড়িতে, নাম ‘স্বর্ণকমল’। গত মঙ্গলবার থেকে দেখা যায় আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুর সেই ‘স্বর্ণকমল' হঠাৎ করেই ভাঙতে শুরু করেছে শ্রমিকরা। কিন্তু কেন? এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে স্থানীয়দের মনে। এরশাদ শিকদারের বহু অপকর্মের সাক্ষী এই ‘স্বর্ণকমল। কোনো এক সময় দূরদূরান্ত থেকে মানুষ বাড়িটি দেখতে আসত। এখন আর কেউ ফিরেও তাকায় না। বাড়িরর সামনে নামফলকটিও নেই। বাড়িটির সেই জৌলুশ হারিয়েছে অনেক আগেই।


বুধবার (৪ জানুয়ারি) খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গার মজিদ স্মরণিতে অবস্থিত দোতলা এ বাড়িটির একাংশ ভাঙতে দেখা গেছে শ্রমিকদের। তবে এব্যপারে বাড়ির মালিক পক্ষের কারো কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।  ধারনা করা হচ্ছে সেখানে নির্মাণ করা হবে বহুতল ভবন।


একসময় খুলনার সবচেয়ে বিলাসবহুল বাড়ি ছিল স্বর্ণকমল। ভারত থেকে নকশা করে আনা হয়েছিল এই বাড়ির। দেশ-বিদেশের দামী দামী সব আসবাবপত্র দিয়ে সাজানো এই বাড়ির ভেতরেই লুকিয়ে থাকার জন্য ছিল বাংকার। এরশাদের ব্যক্তিগত সংগ্রহে ৭০টি অস্ত্র থাকার তথ্য পাওয়া গেলেও পরে পুলিশ সেই বাংকার থেকে উদ্ধার করেছিল কেবল একটা বিদেশি বন্দুক ও আর একটা পিস্তল।


কথিত আছে, এরশাদ শিকদারের বিলাসবহুল বাড়ি স্বর্ণকমল যে বানিয়েছিল তাকেও নির্মমভাবে প্রাণ দিতে হয়েছিল এরশাদ শিকদারের হাতে। তার অপরাধ ছিল, এ বাড়িটি বানানোর সময় কিছু অংশ ঢুকে গিয়েছিল অন্যের জমিতে।


এক সময় সদম্ভে এরশাদ শিকদার বলতেন, পৃথিবীর কেউই তাকে তার আসন থেকে সরাতে পারবে না। প্রায় ৬০ টিরও বেশী খুনের অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। প্রতিটি হত্যাকান্ডের পর দুধ দিয়ে গোসল করতেন তিনি ও তার সহযোগীরা। অসংখ্য নারী ধর্ষণ, একাধিক বিয়েসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই যা এরশাদ শিকদার তার জীবদ্দশায় করেননি।


১৯৯৯ সালে গ্রেফতার হওয়ার সময় এরশাদ শিকদার ওয়ার্ড কমিশনার ছিলেন। রাজনীতিতে প্রবেশ করার পর আরও ক্ষমতাসীন হয়ে ওঠেন। ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত খুলনার রেলওয়ের সম্পত্তি এবং জোরপূর্বক ব্যক্তিগত সম্পত্তি দখল, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হন। ৬০টিরও বেশি হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন এরশাদ শিকদার। ২৪টি হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দেন তার বডিগার্ড নুরে আলম। ২০০৪ সালের ১০মে মধ্যরাতে খুলনার জেলা কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এরশাদ শিকদারের জন্ম ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার মাদারঘোনা গ্রামে। তার বাবার নাম বন্দে আলী শিকদার। ৮ ভাই বোনের মধ্যে এরশাদ শিকদার ছিল দ্বিতীয়। জীবিত থাকতে তার এলাকায় তিনি ছিলেন ত্রাস। এখন তিনি চিরনিদ্রায় শুয়ে আছেন খুলনার টুটপাড়া কবরস্থানে।