এক বাগান থেকেই ২৫ লক্ষাধিক টাকার কমলা সংগ্রহ
ঠাকুরগাঁওয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে কমলা চাষ
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫:০৯ পূর্বাহ্ন, ৯ই জানুয়ারী ২০২৩
কৃষিতে স্বনির্ভর দেশের উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁও। দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় এখানে সব ধরনের ফসল উৎপাদন হয় এবং মানেও বেশ ভালো হয়। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবং এ জেলার মাটি উপযুক্ত হওয়ায় এখানে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে কমলা ও মাল্টার চাষ। সে সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে নতুন নতুন উদ্যোক্তা এবং সফলও হচ্ছেন তারা।
এমনি একজন সফল উদ্যেক্তা জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার বিরহলী গ্রামের ইবনুল ইকরাম জুয়েল। গত ১১ বছর আগে উপজেলার কোষারাণীগঞ্জ ইউনিয়নের মালঞ্চা গ্রামে ৩ বিঘা জমির উপরে গড়ে তোলেন ভারতীয় দার্জিলিং জাতের কমলার বাগান ‘অরেঞ্জ ভ্যালী’। বাগানটিতে এ জাতের আড়াইশ গাছ রয়েছে। জেলা হর্টিকালচার থেকে চারা গুলো তিনি সংগ্রহ করেন ৫টাকা দরে। গত মৌসুমে এ বাগান থেকে ১৫ লক্ষাধিক টাকার কমলা বিক্রি করছেন তিনি। এবারও চলতি মৌসুমে গত ১ ডিসেম্বরে শুরু করেছেন গাছ থেকে কমলা সংগ্রহ করা এবং তা চলবে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত।
বাগানের গাছের ডালে থোকায় থোকায় ঝুলছে বড় বড় কমলা। কমলার ভারে নুয়ে পড়েছে গাছের ডালপালা। এ যেন এক নয়নাভিরাম ও মনমুগ্ধকর দৃশ্য। আর এই প্রাকৃতিক পরিবেশে এমন অপরূপ দৃশ্য দেখতে শীতকে উপেক্ষা করে স্থানীয়দের মতো প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ আসছেন এই বাগানে। এতে দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখোরিত হয়ে উঠেছে বাগানটি। বাগানটি দেখে অভিভূত ও অনুপ্রাণিত হচ্ছেন অনেক মানুষ।
বাগানের এসব কমলা বাগানেই বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজি দরে। কমলার বাগানটি হওয়ার ফলে যেমন পুষ্টি ও ভিটামিনের চাহিদা পুরণ হচ্ছে তেমনি বাগান রক্ষণাবেক্ষণে স্থানীয়দের হয়েছে কর্মসংস্থান।
‘অরেঞ্জ ভ্যালী’ নামের এ বাগানটি দেখতে আসা দর্শনার্থীদের সাথে কথা হলে তারা জানান, দেখে খুবি অভিভূত হলাম যে, আমাদের দেশে এমন কমলা হতে পারে ভাবাই যায় না। খেয়ে দেখেছি এখানকার কমলা ও দার্জিলিং এর কমলা স্বাদে গুণে প্রায় একই। এ বাগান দেখে আমাদেরও কমলার চাষ করতে ইচ্ছে হচ্ছে। এখান থেকেই কমলা গাছের চারা নিয়ে যাবো ভাবছি।’
উদ্যোক্তা ও অরেঞ্জ ভ্যালির স্বত্বাধিকারী ইবনুল ইকরাম জুয়েল বলেন, অর্গানিক পদ্ধিতিতে এ বাগান করেছি। এখানে কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। গত মৌসুমে আড়াইশ গাছে ৩শ মন কমলা ১৫ লাখ টাকা বিক্রয় করেছি। এবার আশা করছি ২৫ লক্ষাদিক টাকার কমলা বিক্রয় করতে পারবো।’
আমি আরও দুই বিঘা জমিতে নতুন করে মালটার চাষ শুরু করেছি এবং দুই বিঘা জমিতে ২ শ গাছ রোপন করেছি। আশা করছি আগামি বছরে মালাটা বাজার জাত করতে পারবো। এসব কমলা ও মালাটা চাষ খুবই সহজ ও স্বল্প খরচে চাষ করা যায়। কেউ যদি এমন বাগান করতে চায়, তাহলে তার পক্ষ থেকে সর্বপ্রকার সহযোগিতা করবেন বলে জানান সফল এই উদ্যোক্তা।’
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘দেশের একমাত্র দার্জিলিং জাতের কমলার বাগান এটি। উত্তরবঙ্গে কমলা চাষ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বাগানটি ইতিমধ্যে মানুষের কাছে পরিচিতি পয়েছে অনেক। এখানে শীত মৌসুমে অনেক দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন কমলা কিনতে ও খেতে আসছেন। তাই এটিকে কেন্দ্র করে পর্যটনেরও সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। জুয়েল সাহেবর এমন উদ্যোগে জেলা প্রশাসন পাশে আছে ও থাকবে। এছাড়াও অন্যরাও জুয়েল সাহেবর কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে এমন কাজে লাগাতে পারেন।’