সুন্দরবনের করমজলের কুমির রপ্তানিতে সম্ভাবনার হাতছানি


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১২:৫২ পূর্বাহ্ন, ১০ই জানুয়ারী ২০২৩


সুন্দরবনের করমজলের কুমির রপ্তানিতে সম্ভাবনার হাতছানি
কুমির

পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজলের প্রজনন কেন্দ্রের কুমির রপ্তানির সম্ভাবনা বাড়ছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, এই প্রজনন কেন্দ্রে জন্ম নেওয়া কুমিরই সুন্দরবনে কুমিরের বিলুপ্তি ঠেকাতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। ২০৬টি বড় কুমিরের বাচ্চা সুন্দরবনে অবমুক্ত করা হয়েছে।

 

আরও ৫টি কুমির চট্টগ্রামের ডুলাহাজরা সাফারি পার্কে এবং ৩টি পাঠানো হয়েছে ভোলায়। এখনো প্রজনন কেন্দ্রে ৪টি বড় কুমিরসহ ৯২টি বাচ্চা রয়েছে।  এই প্রজনন কেন্দ্র থেকে কুমির বিদেশে রপ্তানির স্বপ্ন দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। বনবিভাগ-সূত্রে জানা গেছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ সিডরে ভেসে গেছে ৭৫টি কুমির,  বিভিন্ন কারণে কুমির মারা গেলেও চিতা বিড়াল মেরে ফেলেছে ৬২টি বাচ্চা। 


খাদ্যে পর্যাপ্ত বরাদ্দ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। তবুও প্রজনন বাড়ায় এই কেন্দ্রের কুমির রপ্তানির সম্ভাবনা বাড়ছে। তথ্য বলছে, সুন্দরবনের দুবলারচরে ১৯৯৭ সালে  লবণ পানি প্রজাতির কুমির ধরা পড়ার পর স্বপ্ন দেখা শুরু করে বনবিভাগ। তারা তখন কুমিরের বংশ বৃদ্ধির প্রাথমিক কাজ শুরু করে। 


এরপর ২০০২ সালে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজলে ৮ একর বনাঞ্চলে কুমির প্রজনন কেন্দ্র চালু করে। বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই প্রজনন কেন্দ্রের জন্য সেসময় ব্যয় ধরা হয় ২৩ লাখ টাকা। 


২০০২ সালে প্রজনন কেন্দ্রটি আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করলেও বাচ্চা দেয় তিন বছর পর ২০০৫ সালে। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সুপার সাইক্লোন সিডরে এই কেন্দ্রের ৭৫টি কুমিরকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এরইমধ্যে ২০৬টি বড় কুমিরের বাচ্চা সুন্দরবনে অবমুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও পাঁচটি কুমির চট্টগ্রামের ডুলাহাজরা সাফারি পার্কে ও তিনটি পাঠানো হয় ভোলায়। 


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২০১৭ সালের ফেরুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে দুই রাতে এই প্রজনন কেন্দ্রের সেডের নেট ভেঙে একটি ‘চিতা বিড়াল’ ৬২টি কুমিরের বাচ্চা মেরে ফেলে ও খেয়ে ফেলে। এর পরের বছর এই কেন্দ্র দুটি মা কুমির জুলিয়েট ও পিলপিল ৯১টি ডিম পাড়লেও তা থেকে একটিও বাচ্চা ফোটেনি। পুরুষ কুমির মা কুমিরের ডিম খেয়ে ফেলার স্বভাবগত আচরণ কুমিরের সংখ্যা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ বলে জানা গেছে। কুমির প্রজনন কেন্দ্র সূত্র জানায়, এই কেন্দ্রের প্রতিটি প্রাণীর জন্য ২৪ ঘণ্টায় সরকারি খাদ্য বরাদ্দ রয়েছে ৬ টাকারও কম। এই অপর্যাপ্ত খাদ্য বরাদ্দের পাশাপাশি নেই পর্যাপ্ত ওষুধের ব্যবস্থা। এমনকি কুমিরগুলো দেখভালের জন্য লোকবল সংকটের পাশাপাশি নেই কোনো প্রশিক্ষিত কুমির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। 


এমনই অবস্থায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে সরকারিভাবে দেশের একমাত্র হরিণ ও কুমির প্রজনন কেন্দ্র। এরপরও করমজল প্রজনন কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এসব প্রাণীকে বাঁচিয়ে রাখতে। কুমির প্রজনন কেন্দ্র করমজলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, এই কেন্দ্রে বর্তমানে রোমিও ও আলেকজেন্ডার নামে দুইাট পুরুষ এবং জুলিয়েট ও পিলপিল নামের দুটি মা কুমির ও ৯২টি বাচ্চা কুমির রয়েছে। রোমিও-জুলিয়েটের বয়স এখন ৪০ বছর। 


এ কর্মকর্তা আরো বলেন, এই কেন্দ্রের প্রাণীর খাদ্য বরাদ্দ খুবই অপ্রতুল। একইসঙ্গে সরকারিভাবে প্রশিক্ষিত কুমির বিশেষজ্ঞ ও বন্যপ্রাণী চিকিৎসকসহ প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। নেই পর্যাপ্ত ওষুধ ও খাবারের সরকারি বরাদ্দ। লোকবলসহ এসব সংকট দূর হলে কুমির রক্ষায় এই কেন্দ্রটি আরও বেশি ভূমিকা রাখতে পারবে। এই প্রজনন কেন্দ্রে জন্ম নেওয়া কুমিরই সুন্দরবনে কুমিরের বিলুপ্তি ঠেকাতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। হাওলাদার আজাদ কবির আরো বলেন, খাদ্য বরাদ্দ, লোকবল ও চিকিৎসাসেবা বাড়ালে এ প্রজনন কেন্দ্র থেকেই কুমির রপ্তানি সম্ভব।