ফারইস্টের সেই খালেকের ১৩৫ কোটির বাড়ী জব্দ
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬:২৯ পূর্বাহ্ন, ১৩ই জানুয়ারী ২০২৩
অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইনের এক মামলায় কারাবন্দী ফারইস্টের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ খালেকের বিরুদ্ধে ৫১৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে সিআইডি। এমএ খালেক ও তার পরিবারের সদস্যরা প্রতিষ্ঠানটি থেকে লুটপাটের টাকায় দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদ ও আলিশান বাড়ি করেছেন। তারা লুটপাটের টাকায় ঢাকার বারিধারায় গড়ে তুলেছেন ১৩৫ কোটি টাকা মূল্যের চারতলা বাড়ি। যে কোন সময় সেই বাড়ি বিক্রি করে টাকা পাচারের শঙ্কায় জমিসহ বাড়িটি ক্রোকের আবেদন করেন সিআইডির অনুসন্ধান কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান।
১ জানুয়ারির আবদনটি আমলেনিয়ে বাড়িটি ক্রোক করে সিআইডিকে রক্ষণাবেক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর স্পেশাল জজ আদালত। প্রতিষ্ঠানটি থেকে ১৩৫ কোটি টাকারও বেশি লুটপাটের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। জালিয়াতি ও লুটপাটের টাকায় নামে-বেনামে আরও সম্পদ রয়েছে কিনা সে বিষয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
সআিইডরি অনুসন্ধানরে তথ্য থেকে জানা যায়, ২০১০ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত খালেক ও তার পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন কৌশলে প্রতিষ্ঠান থেকে বিপুল অর্থ লুটপাট করেছেন। টাকার একটি বড় অংশ তারা দেশের বাইরে পাচার করেন। ফারইস্ট স্টক অ্যান্ড বন্ডস লিমিটেড ছাড়াও অনেক প্রতিষ্ঠান যেমন, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, প্রাইম ফাইন্যান্সিয়াল লিমিটেড ও প্রাইম এশিয়া লিমিটেড থেকে একই প্রক্রিয়ায় আরও প্রায় ২০০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এসব টাকা দিয়ে তিনি কানাডায় সেকেন্ড হোম গড়েছেন। তার স্ত্রী-সন্তানরা কানাডায় পালিয়েছেন। শিগগিরই তাদের নামে মানিলন্ডারিংয়ের মামলা হচ্ছে।
ঢাকার আদালতে সিআইডির দেওয়া আবেদনে বলা হয়, সংঘবদ্ধ প্রতারণার মাধ্যমে ২০১০ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডস লিমিটেডের চেয়ারম্যান পদে থেকে এমএ খালেক প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ১৩৫ কোটি বা ততোধিক টাকা নিজ ও স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে গ্রহণ করেন। যা তিনি বিদেশে (কানাডা) পাচার করে বাড়ি ক্রয় ও সম্পদ করেছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। সেই অপরাধলব্ধ অর্থ পাচারের মাধ্যমে সম্পত্তি করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়। আসামির জমিসহ বাড়ি বিক্রি করে সেই অর্থ কানাডায় পাচার করে স্থায়ীভাবে দেশ ত্যাগের সম্ভাবনা রয়েছে।
জানা গেছে, গুলশানের বারিধারা আবাসিক এলাকার কে ব্লকের ৬ নম্বর রোডের ২ নম্বর বাড়িটি এমএ খালেকের। গুলশান সাবরেজিস্ট্রি অফিসের বাড়িটির দলিল নম্বর ৬২১। ৮ শতাংশ ৮ ছটাকের ওপর ৪ তলা আলিশান বাড়িটি ২০১৩ সালের ২৪ জানুয়ারি কেনেন এমএ খালেক। বাড়িটির দলিল মূল্য ছিল ৬৫ কোটি টাকা। তবে পুলিশ বলছে, বর্তমানে বাড়িটির মূল্য অন্তত ১৫০ কোটি টাকা।
সিআইডির তদন্ত অনুসন্ধান ও আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল কোর্টের পারমিশন পিটিশনে বলা হয়, বাড়িটি ক্রোক করা হলো। সেই সঙ্গে স্থাবর সম্পত্তি জমিসহ বাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সিআইডির অতিরিক্ত আইজিপিকে তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করা হলো।
প্রতিষ্ঠানটি থেকে লুটপাটের কৌশল বিষয়ে জানা গেছে, কোনো রকম অর্থ পরিশোধ না করেই খালেকের পরিবারের সদস্য ও সহযোগীদের বিও অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা জমা দেখানো হতো। খালেকের নির্দেশে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা এভাবে কোটি কোটি টাকা জমা করতেন। এর পর সেই টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নিতেন। ফলে প্রতিষ্ঠানের কাছে জমা থাকা শেয়ার ব্যবসায়ীদের শতশত কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে।
সআিইডরি র্অগানাইজড ক্রাইম বভিাগরে পরর্দিশক মো. মনরিুজ্জামান বলেন, প্রতিষ্ঠানের সাবেক চেয়ারম্যান খালেকের স্ত্রী সাবিনা খালেক, ছেলে শাহরিয়ার খালেক, মেয়ে শরৎ খালেক, মেয়ের স্বামী তানভীর হক ও মেয়ের শশুর ফজলুল হকসহ স্বজন ও সহযোগীদের মাধ্যমে বিপুল অর্থ লুটপাট করা হয়েছে। স্বজন ছাড়াও খালেক তার সহযোগীদের বিও অ্যাকাউন্টে ফেক ডিপোজিট দেখিয়ে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। এ আত্মসাতের টাকার একটি অংশ সহযোগীদের ভাগ করে দিতেন খালেক। কৌশলে বিভিন্নজনের জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে ফেক বিও অ্যাকাউন্ট খুলে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে খালেক। অনেকেই জানতেই পারেনি তাদের নামে কোটি কোটি টাকা লেনদেন করা হয়েছে। খালেকের লুটপাটের ফলে প্রতিষ্ঠানটির বিপুলসংখ্যক বিনিয়োগকারী সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসেছেন।