মিথ্যা তথ্য দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক ও বিয়ে
সাবেক এমপি আরজুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
আজাহারুল ইসলাম সুজন
প্রকাশ: ০৬:০৯ পূর্বাহ্ন, ১৭ই জানুয়ারী ২০২৩
নাম গোপন করে বিয়ে, দ্বিতীয় স্ত্রী ও সন্তানের পরিচয়ের দাবিতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যালে করা মামলায় সরকার দলীয় পাবনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) খন্দকার আজিজুল হক আরজু ওরফে ফারুকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
সোমবার (১৬ জানুযারী)ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৫ এর বিচারক বেগম সামছুন্নাহার এ তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন।
গত বছর মামলাটি দায়ের করা হয়। ট্রাইব্যুনাল মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)কে তদন্তের আদেশ দিয়েছিলেন। পিবিআই তদন্তের পর অভিযোগ প্রমানিত হয়েছে মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করে। সেই প্রতিবেদন সোমবার ট্রাইব্যুনাল আমলে নিয়ে আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। একই সঙ্গে আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি পরোয়ানা তামিল সংক্রান্ত প্রতিবেদন পুলিশকে দাখিল করতে দিন ধার্য করেছেন।
বাদী পক্ষের আইনজীবী মো. লিটন মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গত বছর ২২ এপ্রিল শিক্ষানবিশ এক আইনজীবীর অভিযোগে আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়। ট্রাইব্যুনাল মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)কে তদন্তের আদেশ দেন। খন্দকার আজিজুল হক আরজু মামলার বিপক্ষে রীট পিটিশন করলে আলদালত রীট পিটিশন খারিজ করে ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী গতবছরের ১০ নভেম্বর ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নিজের নমুনা প্রদান করেন আরজু। ৪ ডিসেম্বর ফরেনসিক বিভাগ থেকে ডিএনএ রিপোর্ট পজিটিভ আসে। ঢাকা মহানগর উত্তর পিবিআই এর পুলিশ পরিদর্শক সাব্বির মোহাম্মদ সেলিম ট্রাইব্যুনালে গত ৫ জানুয়ারি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গিয়েছে মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০০০ সালের ডিসেম্বরে বাদীর প্রথম স্বামীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। তখন তিনি একটি ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানীতে চাকুরী করাকালে বাসায় প্রায় নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করছিলেন। তখন তার আত্মীয়-স্বজনেরা তাকে পুনরায় বিবাহ দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। একপর্যায়ে ২০০১ সালের শেষের দিকে বাদীর চাচার মাধ্যমে আসামির সাথে পরিচয় হয় । পরবর্তীতে আসামি নিয়মিত বাদীর সাথে যোগাযোগ রেখে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে এবং একপর্যায়ে সফল হয়। আসামি তাকে জানান, তার প্রথম পক্ষের স্ত্রী মারা গেছেন। তার প্রথম পক্ষের ছেলে সন্তানকে বিভিন্ন প্রলোভনের মাধ্যমে বাদীকে তার প্রতি দুর্বল করে ফেলেন। সামাজিক নির্ভরতার জন্য এবং একাকীত্বের অবসান সহ নতুন সংসার শুরু করার মাধ্যমে তিনি আসামিকে মনে প্রাণে ভালবেসে ফেলে এবং বিবাহের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে বিবাহ করতে মতামত প্রদান করেন।
২০০৩ সালের ১০ ডিসেম্বর আসামির সাথে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন। ২০০৮ সালের ১৬ জানুয়ারি তাদের একটি কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে। সন্তান গর্ভে আসার পর আসামি বিভিন্ন ছলছাতুরীর মাধ্যমে বাচ্চা নষ্ট করার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাদী দৃঢ়তার জন্য বাচ্চা নষ্ট করতে পারেনি। বাচ্চা ভূমিষ্ট হওয়ার পর আসামির আচার-আচরণের পরিবর্তণের লক্ষ্য করেন। বাদীর বাসায় আসা কমিয়ে দেন। ইতিমধ্যে বাদীর নামে ফ্ল্যাট কিনে দেওয়ার কথা বলে তার পিতার নিকট হতে নেওয়া দশ লাখ টাকা এবং জমানো আট লাখ টাকা এবং তার ১৫ ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার নিয়ে বিক্রি করে আসামিকে টাকা দিলেও সে কোনো ফ্ল্যাট কিনে দেয়নি এবং কোনো প্রকার টাকাও ফেরৎ দেয়নি।
এক পর্যয়ে আসামি বাদীর বাসায় আসা বন্ধ করে দেন। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন আসামির প্রথম পক্ষের স্ত্রী জীবিত। সে ঘরে কন্যা সন্তান আছে এবং স্ত্রীর সংসারে বসবাস করেন। আরো জানতে পারেন, বিবাদী ইতিপূর্বে বাদীর নিকট ফারুক হোসেন নাম প্রচার করলেও প্রকৃতপক্ষে তার নাম খন্দকার আজিজুল হক আরজু। মিথ্যা তথ্য ও পরিচয় দিয়ে তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করার জন্যই বাদীকে বিয়ের নামে প্রতারণা করেছেন। এরপর আসামি কয়েকবার নিজে এবং ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী দ্বারা তাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে আক্রমন করেন। এক পর্যায়ে আসামি বাদীর সাথে বিবাহ এবং গর্ভপাত ও ঔরসের কন্যার পিতৃ পরিচয়কেই সরাসরি অস্বীকার করেন।
জেবি/এসবি