গম চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকরা


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১০:৪১ অপরাহ্ন, ২৫শে জানুয়ারী ২০২৩


গম চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকরা
গম চাষে ব্যাস্ত কৃষক

দেশের উত্তরের কৃষি প্রধান জেলা ঠাকুরগাঁও। খাদ্য শষ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পুর্ণ বলে উত্তরের শষ্য ভান্ডার নামেও পরিচিত এ জেলা। এ জেলায় সব ধরনের ফসল ও শষ্য উৎপাদন হলেও দেশের মোট উৎপাদিত গম এর সিংহ ভাগই উৎপাদন হয় এ জেলায়। তবে ঠাকুরগাঁওয়ে গম চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে এখানকার কৃষক। ফলে গত কয়েক বছরে ধীরে ধীরে এ অঞ্চলে কমেছে গম চাষ।


জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০১৬-১৭ চাষ মৌসুমে জেলায় ৬৭ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়। ২০১৭-১৮ চাষ মৌসুমে ৬১ হাজার হেক্টর, ২০১৮-১৯ চাষ মৌসুমে ৫০ হাজার ২২০ হেক্টর, ২০১৯-২০ চাষ মৌসুমে ৫০ হাজার ৬৫০ হেক্টর, ২০২০-২১ চাষ মৌসুমে ৪৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর, ২০২১-২২ চাষ মৌসুমে ৪৫ হাজার ১৯২ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়। বিগত বছর গুলির জরিপ দেখলেই বোঝা যায় এ অঞ্চলে গমের চাষ প্রতিবছরই কমছে। এভাবে চলতে থাকলে গম উৎপাদনের এ হার অর্ধেকেরও নিচে নেমে যেতে পারে।


চলতি চাষ মৌসুমে জেলায় ৪৪ হাজার ৬৯৯ হেক্টর জমিতে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮ হাজার ৪২ হেক্টর জমিতে গমের চাষ কমেছে। চলতি মৌসুমে জেলা জুড়ে গম চাষ হয়েছে ৩৬ হাজার ৬৯৯ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৯ হাজার ৬৪৭ হেক্টর, বালিয়াডাঙ্গীতে ১০ হাজার ১৪০ হেক্টর, পীরগঞ্জে আট হাজার ২০০ হেক্টর, রাণীশংকৈলে চার হাজার ৭৫০ হেক্টর ও হরিপুরে তিন হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছে।


দাম ভালো পাওয়ায় এবং ঝামেলা কম থাকায় জেলায় গমের চেয়ে ভুট্টা ও আলু বেশি উৎপাদন হচ্ছে। তাই আলু-ভুট্টা ও সরিষা চাষ করছেন কৃষকরা। এছাড়াও বীজ সংকট, বীজ পেতে ভোগান্তি, বীজ ও সার ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে চড়া দাম, গম ব্যবসায়ীদের অসাধু সিন্ডিকেট সরকারের নির্ধারিত দামে কৃষকদের অখুশিসহ নানা সমস্যা উঠে আসে কৃষকদের মুখ থকে।


ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রহিমানপুর এলাকার কৃষক মকবুল হোসেন বলেন, যেসব জমি আগে গমে ভরে থাকতো সেসব জমিতে এখন ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসল দেখা যায়। আমি এ বছর পাঁচ বিঘা জমিতে গম আবাদ করছি। বীজ কিনতে যে ভোগান্তিতে পড়েছি আর সারের যে সিন্ডিকেট চলছে তাতে আগামী বছর আর গম চাষ করবো কিনা তা জানিনা।


বাংলাদেশ গম-ভুট্টা গবেষণা ইন্সটিটিউটের সহকারী বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম জানান, একজন কৃষক আলু উত্তোলন করেই জমিতে গম চাষ করতে পারেন। গম কাটাইয়ের পর ভুট্টা চাষ করতে পারেন। একই জমিতে বোরো ধানও চাষ করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে কৃষক বেশি লাভবান হতে পারেন।


বিএডিসির বীজ বিক্রয় ও বিতরণ কর্মকর্তা এনামুল হক জানান, জেলায় বিএডিসির ১৬১ জন বীজ পরিবেশক রয়েছেন। যাদের এ বছর ৫৫৭ টন বীজ বরাদ্দসহ বিএডিসির বুথ থেকে ৪০ টন বীজ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।


জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আব্দুল আজিজ বলেন, গম চাষ কমলেও এসব জমিতে সরিষা ও ভুট্টার চাষ হচ্ছে। জমি ফাঁকা নেই। সরিষার পরে কৃষকরা বোরো আবাদ করবে। তবে আমরা কৃষকদের গম চাষে নিরুৎসাহিত না হয়ে আগ্রহী করার চেষ্টা করছি।


জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান জানান, আমাদের এ জেলা গম চাষে দেশের অন্যতম জেলা। বীজ ও সার সিন্ডিকেটের যে কথা কৃষকরা উল্লেখ করেছেন তাতে আমরা নজর দেবো। এছাড়াও আমরা ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা সহ আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে এসব সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়ে থাকি। আগামীতে এ ধরনের পদক্ষেপ আরো জোরালো ভাবে নেবো। কৃষকদের এ ধরনের হয়রানীর শিকার থেকে রক্ষা করতে পারলেই তারা গম চাষে নিরুৎসাহিত হবেননা বলে আশা করি।


আরএক্স/