রঙিন ফুলকপিতে স্বপ্ন দেখছেন কৃষক লিটন


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬:৩৮ পূর্বাহ্ন, ২৭শে জানুয়ারী ২০২৩


রঙিন ফুলকপিতে স্বপ্ন দেখছেন কৃষক লিটন
রঙিন ফুলকপির ক্ষেত- ছবি: জনবাণী

নেত্রকোনার বারহাট্রার মনাষ গ্রামের কৃষক মোশারফ হোসেন লিটন ব্রুকলি, রঙবাহারি লাল, বেগুনি, হলুদ এবং সাদা রঙের ফুলকপি চাষ করে দিন বদলের রঙিন স্বপ্ন দেখছেন। 


শুধু স্বপ্ন নয়,অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সুনিশ্চিত পথে এগোচ্ছেন সৌখিন এই কৃষক। তার পাশাপাশি এলাকার আরোও অনেক কৃষক রঙিন ভবিষ্যতের প্রত্যাশায় আগ্রহী হয়ে উঠছেন সুস্বাদু রঙিন এই ফুলকপি চাষে।


দেখতে আকর্ষণীয় সুস্বাদু এই ফুলকপি দেখতে আশেপাশের এলাকার মানুষজন প্রতিদিনই ভিড় করছেন বারহাট্রার রঙিন ফুলকপির এই জমিতে। 


পরিদর্শনকালে কথা হয় পাশের উপজেলা মোহনগঞ্জ থেকে রঙিন ফুলকপি কিনতে আসা রফিকুল ইসলামের সাথে, তিনি জানান, খবর পেয়ে দেখতে এসেছিলাম। ভালো লাগলো তাই ১০০ টাকা করে তিন রঙের তিনটি ফুলকপি কিনলাম। দেখি সামনে নিজের জমিতেই চাষ শুরু করবো।


সরজমিনে পরিদর্শনকালে কৃষক মোশারফ হোসেন লিটন ফুলকপি নিয়ে বাজারে ছিলেন ফোন তার সাথে কথা হয়। 


ফুলকপির জমিতে সরাসরি কথা হয় তার ভাই সোহেল মিয়ার সাথে তিনি জানান- অনেক বছর থেকেই তিনি বিভিন্ন ধরনের শাক সবজি চাষ করে আসছেন। এরমধ্যে টমেটো, বিভিন্ন ধরনের শাক এবং সাদা ফুলকপি। এইবার রঙিন ফুলকপি চাষের কথা মাথায় আসলে বারহাট্রা উপজেলা কৃষি অফিসের সাথে যোগাযোগ করলে তাদের সহায়তায় জামালপুর থেকে রঙিন ফুলকপির বীজ আনা হয়। এবং সবজি চাষের ৪০ শতক জমির মধ্যে ২০ শতক জমিতে রঙিন ফুলকপির চাষ করা হয়। এই রঙিন ফুলকপির চাষ করতে সবমিলিয়ে তার লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। তবে সবজি বাজারের বর্তমান অবস্থায় তার রঙিন ফুলকপির যা মূল্য বিক্রি হচ্ছে তাতে করে ৩ লক্ষাধিক টাকার বেশি বিক্রি হবে বলে তিনি আশা করছেন। 


তিনি জানান লাল, বেগুনি, হলুদ ফুলকপি গুলোর দারুণ চাহিদা। ভোক্তারা প্রতিটি রঙিন ফুলকপি আকার ভেদে ৮০-১০০ টাকা ধরে জমি থেকে নিয়ে যাচ্ছেন। আশে পাশের এলাকার বাজারে নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে এসব ফুলকপি। 


কৃষক মোশারফ হোসেন লিটনের ভাইও একই কথা বলেন। তিনি জানান, স্থানীয় কৃষি অফিসের সহযোগিতায় রঙিন ফুলকপির বীজগুলো জামালপুর থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল। ফলন, দাম এবং বিক্রি ভালো হওয়ায় এখন কৃষক মোশারফ হোসেন লিটনের দেখাদেখি আরোও অনেকেই রঙিন ফুলকপি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। সরকারি সহযোগিতা পেলে ভবিষ্যতে তারাও অধিক পরিমাণ জমিতে এই রঙিন ফুলকপির আবাদ করতে চায়। 


মনাষ গ্রামের কৃষক মো. জামরুল ,বীম চন্দ্র দাস এবং মুরশেদ মিয়া প্রতিবেদককে বলেন, মোশারফের রঙিন ফুলকপি চাষ দেখে আমরা আগ্রহী হয়েছি দেখতে সুন্দর সুস্বাদু এই ফুলকপি চাষে। বাজারে এর ডিমান্ড ভালো। ভবিষ্যতে আমরাও চাষ করবো বলে ভাবছি।


পাশেই কয়েকজন কৃষকের সাদা ফুলকপির জমি তারা, বলেন সরকারি সুযোগ সুবিধা পেলে আগামীতে তারাও অধিক পরিমাণ জমিতে এই ফসলের চাষে আগ্রহী।


এ বিষয় বারহাট্রা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান জানান, মোশারফ হোসেন লিটন একজন আদর্শ কৃষক। ইতিমধ্যে উপজেলায় আদর্শ কৃষক হিসেবে তাকে অনেকেই চেনে। তার চাষকৃত রঙিন ফুলকপি পুষ্টি, প্রোটিন এবং ঔষধিগুণে ভরপুর এই রঙিন ফুলকপি মানব স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারি এক সবজি। রঙিন এই ফুলকপিতে ক্যান্সার প্রতিরোধ করার গুণাগুণ বিদ্যমান আছে।দৃষ্টিনন্দন এই ফুলকপির ভোক্তা পর্যায়ে ব্যাপক চাহিদা থাকায় ভবিষ্যতে এই সবজির প্রচুর আবাদের সম্ভাবনা রয়েছে। গেল বছর রঙিন ফুলকপির আবাদ অল্প পরিসরে হলেও চলতি বছর  ১৫০ শতকেরও বেশি জমিতে এই রঙিন ফুলকপির চাষ আবাদ হয়েছে। এই জাতীয় ফুলকপি চাষের পরিমান আগামী বছরগুলোতে আরো বেশি হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তাছাড়া কৃষক পর্যায়ে চাহিদা সম্পন্ন এই রঙিন ফুলকপি আরো বেশি পরিমাণে আবাদে সরকারি সহযোগিতা বৃদ্ধির হবে বলেও তিনি জানান।