দত্তক সন্তানকে মায়ের কুলে ফিরিয়ে দিল পুলিশ


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬:৫৬ পূর্বাহ্ন, ২৭শে জানুয়ারী ২০২৩


দত্তক সন্তানকে মায়ের কুলে ফিরিয়ে দিল পুলিশ
ফাইল ছবি

শিশু জন্মের পর মায়ের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা দিয়ে তিলে তিলে মাতৃস্নেহে ৫৭ দিন লালন করেছেন মা লিমা হনুফা। পাঁচ বছর আগে সড়ক দূর্ঘটনায় শিশুটির বাবা মাসুম পঙ্গুত্ববরণ করেন। এক মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে পাঁচজনের পরিবার তাদের।


পরিবারে বড় মেয়ে মুনমুন, ছেলে হাসান ও ৫৭ দিন আগে তাদের ঘরে জন্ম নেয়া শিশু সন্তান হোসেনকে নিয়ে বাস করেন টঙ্গীর পূর্ব আরিচপুর এলাকার জনৈক আইনুদ্দিনের আধাপাকা বাড়িতে।


মাত্র তিরিশ হাজার টাকা ঋন পরিশোধ করতে না পেরে গত সোমবার(২৩ জানুয়ারী) মা লিমা হনুফার কোল খালি করে দত্তক দেয় শিশুটিকে। বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) শিশু হোসেনকে জন্মদাত্রী মায়ের কোলে ফিরে দিল পুলিশ।


থানার উপপরিদর্শক(এসআই) ইয়াসিন আরাফাত বলেন, সোমবার বিকেলে তিরিশ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রায় দুই মাস বয়সি শিশু সন্তানকে দত্তক দেন মা লিমা হনুফা। পরদিন শিশু সন্তানকে ফিরে পেতে বেকুল হয়ে স্থানীয়দের বিষয়টি জানালে তারা জাতীয় জরুরী পরিসেবা ৯৯৯ কল করেন। পরে ঢাকা জেলার দোহার থানার লারিসা গ্রামের  কাশেম স্বর্ণা দম্পত্তির কাছ থেকে শিশুটিকে ফিরিয়ে আনা হয়। 


মা লিমা হনুফা বলেন, আমি মানুষের বাসায় আয়া হিসেবে কাজ করতাম। শিশু জন্ম নেবার পর কাজ করতে পারছিনা। আমার স্বামী পঙ্গু হওয়ায় তাকে কেউ কাজে দেয় না। আমার তিন মাসের ঘর ভাড়া বারো হাজার টাকা দোকানে বাঁকি দশ হাজার ও ঔষধের দোকানে আট হাজার টাকা ঋন হয়। বাড়ির মালিক পাওনা টাকার জন্য চাপ দিলে আমার শিশুকে তিরিশ হাজার টাকার বিনিময়ে দত্তক দিই আমি।


পরে বাচ্চাকে ফিরে পাবার জন্য বেকুল হয়ে উঠলে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দিলে টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি আশরাফুল ইসলাম ওই তিরিশ হাজার টাকা পরিশোধ করে আমার শিশুকে আমার কাছে এনে দিয়েছেন। সেই সঙ্গে আমার স্বামীকে একটি কারখানায় কাজের ব্যবস্থা করেন ও  আমার ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়েছেন।


দত্তক নেয়া স্বর্ণা আক্তার বলেন, আমরা নিঃসন্তান। তাই একটি শিশু লালন পালনের জন্য নিয়েছিলাম। পুলিশের নির্দেশেই আমরা শিশুটিকে তার (নিজ) মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছি।


হক গ্রুপের মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা হযরত আলী ঈশান বলেন, টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি আমাদের বিষয়টি জানান। আমরা শিশুটির বাবা মাসুমকে আমাদের কারখানায় কাজের সুযোগ করে দিয়েছি।


টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো.আশরাফুল ইসলাম দৈনিক জনবাণীকে বলেন, ঋন পরিশোধ করতেই শিশু সন্তানকে দত্তক দেন মা লিমা হনুফা। পরে তিরিশ হাজার টাকা দিয়েই শিশুটিকে ফিরিয়ে এনেছি। টঙ্গীর হক গ্রুপের একটি কারখানায় বাবা মাসুমকে চাকরির ব্যবস্থা ও দুই সন্তানের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করেছি।


জেবি/এসবি