অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনার আতুঁড়ঘর ঝিকরগাছা রেলস্টেশন
উপজেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩:৪৫ পূর্বাহ্ন, ৫ই ফেব্রুয়ারি ২০২৩
এ যেন দেখার কেউ নেই। যার যেভাবে ইচ্ছে, সে সেভাবে চলছে। ইচ্ছে হলে ডিউটিতে আসছে, আর ইচ্ছে না হলে আসছে না। অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনায় ধ্বংস হতে বসেছে ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী ঝিকরগাছা রেলস্টেশন।
শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারী) বেলা ১১টায় সাংবাদিকদের একটি প্রতিনিধি দল সরজমিন রেলস্টেশনে গেলে দেখা যায় এ রকমই চিত্র।
স্টেশনের প্রবেশ মুখেই টিনের একচালা টোং দোকান বরাদ্দের বিষয়ে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশের পর কতৃপক্ষ দোকানটি সরিয়ে দেবে বললেও এখনও সেখানে টিনের চাল দাঁড়িয়ে আছে। জনশ্রুতি আছে এই দোকানের জায়গা বরাদ্দ পেতে ভুক্তভোগী সাগর হোসেনের ২ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। জায়গা বরাদ্দের সুপারিশকারী থেকে শুরু করে উপরমহল পর্যন্ত এই টাকার ভাগ পৌঁছে গেছে বলে অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে।
স্টেশনের মুল ভবনের সাথে "ঝিকরগাছা রেলস্টেশন" লেখা একটা লাইটিং বোর্ড ছিলো। বর্তমানে সেটির শুধু খাঁচা আছে। লাইটিং বোর্ডটি উধাও হয়ে গেছে। স্টেশনের খালি জায়গায় অদৃশ্য হাতের ইশারায় বসানো হয়েছে বিভিন্ন দোকান। দেখভাল করার অভাবে স্টেশনটি এখন মুত্রখানা আর আবর্জনার ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে। প্রসাব আর ময়লার দুর্গন্ধে স্টেশনের রাস্তা দিয়ে হাঁটা যায়না।
ঝিকরগাছা স্টেশনে দুজন স্টেশন মাস্টার এবং একজন প্রশিক্ষণার্থী স্টেশন মাস্টারের মধ্যে দুজনকে উপস্থিত পাওয়া গেলেও নিগার সুলতানাকে স্টেশনে পাওয়া যায়নি। অনুপস্থিতির বিষয়ে ফোন করে জানতে চাইলে তার সন্তান অসুস্থ তাই যশোর কুইন্স হসপিটালের শিশু বিশেষজ্ঞ মাহফুজুর রহমানের চেম্বারে আছেন বলে জানান। তবে কুইন্স হসপিটালে খোঁজ নিয়ে জানা যায় উক্ত ডাক্তার বিকাল ৪টায় তার চেম্বারে বসেন।
স্টেশনের টিকেট বুকিং সহকারী এস এম শাহেদকে তার অফিসে পাওয়া যায়নি। বক্তব্য জানার জন্য তাকে কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
ঝিকরগাছা স্টেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মী যশোরের শিমলা অফিসে না এসেই বাড়িতে বসে বেতন তুলছে বছরের পর বছর। তার বদলে মাসিক ৩২০০ টাকায় দায়িত্ব পালন করছে ঝিকরগাছার স্থানীয় একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী। ফোনে শিমলা এই প্রতিবেদককে বলেন, আমি থাইরয়েড এর রোগী। মাঝে মধ্যে সকালের ট্রেনে স্টেশনে যায় আবার ঐ ট্রেনেই ফিরে আসি। আমার বদলে আমার ভাগ্নে শিব ওখানে কাজ করে।
ঝিকরগাছা রেলস্টেশনে পয়েন্ট ম্যান আছে দুইজন। কিন্তু তারাও ঠিকমত কাজে আসেননা। তার বদলে ইমদাদুল নামের একজন বহিরাগত সেই দায়িত্ব পালন করেন। আজ একজন অফিসে উপস্থিত থাকলেও মিলন নামের একজন পয়েন্ট ম্যান স্টেশনে আসেননি। তিনি কবে ডিউটি করেন এবং কতক্ষণ ডিউটি করেন এ বিষয়ে জানতে ফোন করলে তিনি রাগান্বিত হয়ে বলেন এবিষয়ে তার উর্ধতন কতৃপক্ষ জানেন।
এদিকে গত ৩১ জানুয়ারী পত্রিকায় ঝিকরগাছা স্টেশন নিয়ে খবর প্রকাশিত হলে স্থানীয় সুধীজন ও নিয়মিত যাত্রীবৃন্দ সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানান। সেই সাথে এসকল অনিয়ম দুর করে স্টেশনটিকে জনবান্ধব করে গড়ে তোলার জন্য যথাযথ কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার অনুরোধ জানান।
আরএক্স/