বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে সপ্তাহে দুদিন বাঁশের হাট


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩:৫৫ পূর্বাহ্ন, ৫ই ফেব্রুয়ারি ২০২৩


বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে সপ্তাহে দুদিন বাঁশের হাট
বাঁশের হাট

কুষ্টিয়া মিরপুর উপজেলার পোড়াদহ ইউনিয়নের হাজরাহাটী এলাকায় অবস্থিত হাজরহাটী যৌথ উচ্চ বিদ্যালয়। পাশেই রয়েছে হাজরাহাটী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। দুইটি বিদ্যালয়ের মাঝখানে রয়েছে বিশাল আকৃতির একটি খেলার মাঠ। দীর্ঘ দিন যাবত এই মাঠ দখল করে বাঁশের হাট চলার কারনে খেলাধুলা ও এসেম্বলি করতে পারছেনা দুইটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। 


বিদ্যালয় চলাকালীন সময় বাঁশের হাট চলমান থাকার কারনে পাঠদানে চরম অসুবিধা হচ্ছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের। এছাড়াও বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে বাঁশ ফারাই করার কারনে কাঁচা বাঁশের অবশিষ্ট চটা পরে থাকায় ঝুকিপূর্ণ হয়ে পরেছে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা। বেশ কয়েকবার সেই ধারালো বাঁশের চটায় পা কেটে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। 


স্থানীয় সুত্রে জানা যায়,  এই হাটটি পরিচালিত হয় মিরপুর পোড়াদহ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও হাজরাহাটী যৌথ উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি ও হাজরাহাটী বাজার জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি শহিদুল ইসলাম সবেদের নেতৃত্বে। আর এসব হাট থেকে উত্তোলিত টাকা মসজিদের ফান্ডে জমা করা হয় বলে জানা গেছে। যদিও মাঠটি দুইটি বিদ্যালয়ের। স্থানীয় প্রভাব ও ক্ষমতার জোরে এই হাটটি পরিচালিত হচ্ছে বলেও জানা গেছে। 


হাজরাহাটী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেনীর একজন ছাত্রী বলেন, বাঁশের চটায় লেগে অনেক সময় পা কেটে যায়। আবার এসব বাঁশের আগা পরে থাকার কারনে পরে গিয়ে বুকে ব্যাথা লাগে৷ আমরা চাই এই বাঁশ যেনো খেলার মাঠ থেকে উঠে যায়। 


তৃতীয় শ্রেনী পড়ুয়া একজন ছাত্র বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের মাঠে খেলাধুলা করতে খুবই সমস্যা হয়৷ এখানে প্রতি সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবারে বাঁশের হাট বসে। এই হাটটি মসজিদ কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। হাট চলার কারনে কোন ছাত্র-ছাত্রী পরে গেলে কেটে যেতে পারে এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। 


উচ্চ বিদ্যালয়ের আরেকজন শিক্ষার্থী বলেন, এখানে প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবারে খেলার মাঠ দখল করে বাঁশের হাট বন্ধ থাকার কারনে এসেম্বলি বন্ধ থাকে। হাট চলাকালীন সময় বিদ্যালয়ে পাঠদান করতে চরম অসুবিধা হয়। হাটের দিন বাদেও বাঁশের চটা ও আগাছা পরে থাকে। যেগুলো পায়ে লেগে পা কেটে যায় পরে গেলে হাতে ও বুকে ব্যাথা লাগে। আমরা চাই এখানের হাট বন্ধ হয়ে যাক। আমরা আমাদের মাঠে খেলাধুলা করতে চাই। 


হাজরাহাটী যৌথ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বশির আহম্মেদ বলেন, আসলে বিদ্যালয়ের জায়গায় বাঁশের হাট চলার কারনে পাঠদানে চরম অসুবিধা হয়৷ বাচ্চারা খেলাধুলা করার সময় বাঁশের চটায় পা কেটে যাওয়ার মত ঝুকিথাকে। অনেক সময় হাটের কারনে খেলাধুলাও করতে পারেনা। আমি বিষয়টি নিয়ে কয়েকবার ব্যাবস্থা গ্রহনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু স্থানীয় যারা হাট পরিচালনা করে তারা আমার উপর চড়াও হয়ে উঠেছিলো। তাই আমি আর এই বিষয়টি নিয়ে কোন কথা বলিনা। 


হাজরাহাটী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রেহানা খাতুন বলেন, হাটের কারনে আমাদের অনেক অসুবিধা হয়। যদিও হাট আমাদের মাঠে হয়না। একই সাথে মাঠের সিমানা থাকার কারনে হাটের দিন পাঠদানে চরম অসুবিধা হয়। কারন হাটটি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে হয়। এখানকার ইউনিয়ন সহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যাক্তিরা এই হাট পরিচালনা করে। তবে এই টাকা কোন বিদ্যালয়ের ফান্ডে জমা হয় না। 


পোড়াদহ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও হাজরাহাটী যৌথ উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি ও হাজরাহাটী বাজার জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি শহিদুল ইসলাম সবেদের সাথে কথা বললে তিনি জানান, শনিবারে স্কুল বন্ধ থাকে। আর মঙ্গলবারে মাঠের পাশ দিয়ে নদীর ধার দিয়ে হাট বসে। হাটের যে টাকা উঠে সেগুলো মসজিদ ফান্ডে দেওয়া হয় উন্নয়নের জন্য। এলাকার জনগন এইটা করে। আমরা চিন্তাভাবনা করছি আগামীতে একটা জায়গা লিজ নিবো সেখানে হাট বসাবো। অল্পদিনের মধ্যেই এই ব্যাবসঘা নেওয়া হবে। 


কুষ্টিয়া মিরপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ মাসুদ রানার সাথে কথা বললে তিনি জানান,  বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের জায়গায় কোন ব্যবসায়িক কাজের জন্য জায়গা দেওয়া যাবেনা। এর আগে আমাকে কেউ এমন অভিযোগ করেনি। আপনি ফোনে জানালেন। আমি অবশ্যই বিষয়টির বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহন করবো। 


আরএক্স/