মেয়ের সঙ্গে মায়ের এইচএসসি পরীক্ষা, মা পাশ করলেও ফেল মেয়ে


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৭:১১ পূর্বাহ্ন, ৯ই ফেব্রুয়ারি ২০২৩


মেয়ের সঙ্গে মায়ের এইচএসসি পরীক্ষা, মা পাশ করলেও ফেল মেয়ে
পরীক্ষার হলে মারুফ আক্তার

নীলফামারীর ডিমলায় মেয়ের সাথে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন মারুফ আক্তার। তবে ফেল করেছেন মেয়ে শাহী সিদ্দিকা। তিনি চলতি বছর শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব সরকারি মহাবিদ্যালয় থেকে কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পেয়েছেন জিপিএ ৪ দশমিক ৩৮। আর মেয়ে শাহী একই কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অকৃতকার্য হয়েছেন।


বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি)  সকালে গণভবনে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় নিজ নিজ বোর্ডের ফলাফল প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। 


জানা গেছে, ২০০৩ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন মারুফা। কিন্তু পরীক্ষার আগেই পরিবার থেকে তার বিয়ে দিয়ে দেয়। এরপর আর পরীক্ষা দিতে পারেননি । তারপর কেটে গেছে ১৫ বছর। একে একে জন্ম হয় দুই ছেলে ও দুই মেয়ের। কিন্তু বুকের ভেতরের লালন করা ইচ্ছা পূরণে নতুন করে শুরু করেন লেখাপড়া। এরপর ২০২০ সালে মেয়ের সঙ্গে এসএসসি পাশ করেন তিনি। এবার মেয়ের সঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হলেন। 


মারুফার পাসের খবরে দারুণ খুশি পরিবারের সবাই। ভালো ফল করায় তাকে বাহবা দেন সহপাঠী ও কলেজের শিক্ষকরা। মারুফার বাবার বাড়ি উপজেলার নাউতারা গ্রামে। বিয়ে হয় একই উপজেলার খালিশা চাপানি ইউনিয়নের পুন্যাঝার গ্রামের সাইদুল ইসলামের সাথে। স্বামী পেশায় মাছ ব্যবসায়ী। ওই দম্পতির চার ছেলেমেয়ে। এর মধ্যে শাহী সিদ্দিকা বড়। দ্বিতীয় ছেলে দশম শ্রেণি, তৃতীয় ছেলে অষ্টম শ্রেণি ও ছোট মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে।


মারুফা আক্তার দৈনিক জনবাণীকে বলেন, বিয়ের ১৫ বছর পেরিয়ে গেছে। চার ছেলে-মেয়েকে মানুষ করতে গিয়ে নিজের পড়ালেখার সুযোগ হয়নি। এক পর্যায়ে স্বামীর উৎসাহে বড় মেয়ের সঙ্গে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে নতুন করে পড়ালেখা শুরু করি। সমাজে আর দশটা মানুষের মতো যাতে নিজেকে একজন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে পারি, সে কারণেই এই বয়সে কষ্ট করে লেখাপড়া করেছি। এইচএসসি পাশ করে কষ্ট স্বার্থক হয়েছে। ইচ্ছে আছে এখন দেশের ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার।তবে মেয়ে শাহী উত্তীর্ণ না হওয়ায় মন খারাপ তার বলেন তিনি।


মারুফা আক্তারের স্বামী সাইদুল ইসলাম গর্ব করে বলেন, আমার একটু কষ্ট হলেও আমি তার ইচ্ছের মর্যাদা দিয়েছি। বেশ আনন্দ অনুভব করছি।সে যতদূর পড়াশোনা করতে চায় পড়বে। আমার সহযোগিতা থাকবে তার প্রতি। তিনি যোগ করেন, মা ও মেয়ে এক সঙ্গে পাশ করলে আরও ভালো লাগতো।


শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব সরকারি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হাফিজুর রহমান বলেন, মা মারুফা একজন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মানুষের ইচ্ছাশক্তি থাকলে লেখাপড়ায় বয়স কোনো বাধা নয় তিনি  সেটা প্রমাণ করেছেন। মারুফা আকতারের এমন উদ্যোগ অনেককে অনুপ্রাণিত করবে। আমরা তার সাফল্য কামনা করি।


জেবি/এসবি