আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে ছাত্রলীগের দায়িত্বে সৈকত


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬:৩৫ পূর্বাহ্ন, ১০ই ফেব্রুয়ারি ২০২৩


আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে ছাত্রলীগের দায়িত্বে সৈকত
তানভীর হাসান সৈকত

মহামারী করোনা ভাইরাসের শঙ্কায় যখন থমকে গিয়েছিলো পুরো পৃথিবী, স্থবির হয়ে পড়েছিলো জনজীবন, অসহায় হয়ে পড়েছিলো মানুষ। ঠিক তখনি মানবতার ডাকে সাড়া দিয়ে সমগ্র পৃথিবীতে একদল মানুষ এসে দাঁড়িয়েছিলো অসহায়দের পাশে। বাংলাদেশেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। বাংলাদেশে মহামারীর প্রকোপ শুরু হলে ঘরবন্দী হয়ে পড়ে সারাদেশের মানুষ। কিন্তু দুর্ভোগে পড়ে রাজধানী ঢাকার রাস্তায় জীবন কাটানো ভাসমান, ছিন্নমূল মানুষগুলো। করোনার মৃত্যুভয় থেকে ক্ষুধার কষ্ট তাদের কাছে বড় হয়ে দাঁড়ায়। 


আর তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন এলাকায় শত শত মানুষের জন্য মাসের পর মাস খাবারের ব্যবস্থা করেন এক মানবিক ছাত্রনেতা। বলছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার এন্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগের ছাত্র তানভীর হাসান সৈকতের কথা। যিনি দায়িত্ব পালন করেছেন ডাকসুর সদস্য হিসেবে এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সমাজসেবা বিষয়ক উপ-সম্পাদক হিসেবে। পরবর্তীতে দায়িত্ব পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে।


সৈকতের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা লক্ষীপুর সদরে। তিনি ঢাকা সিটি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার এন্ড পারফরমেন্স বিভাগে ভর্তি হন।


করোনার ভয়ে  পুরো পৃথিবী যখন নিজেদেরকে গৃহবন্দী করে নিলো তখন সৈকত বেরিয়ে পড়েছিলো গৃহহীন মানুষের অন্ন যোগাতে।  রাজধানীতে যাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই একমাত্র ফুটপাত, যাদের কপালে জোটে না দুবেলা দু'মুঠো খাবার। ২০২০ সালের ২৪ শে মার্চ নিজের জমানো কিছু টাকা আর কয়েকজন বন্ধুকে সাথে নিয়ে তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেন তিনি। করোনা মহামারীর শুরু থেকে ২ ধাপে প্রথম ১০০ দিন দুইবেলা এবং পরবর্তী ২১ দিন একবেলা করে মোট ১২১ দিন প্রতিদিন গড়ে হাজারেরও বেশী মানুষকে খাবার খাইয়েছেন। শুরুতে নিজের জমানো কিছু টাকা দিয়ে এ মহৎ কাজ শুরু করলেও পরবর্তীতে পাশে পেয়েছেন শিক্ষক, বন্ধু, আত্মীয়-স্বজন, পুলিশ, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের।  সৈকত মনে করেন ভালো কাজে আর্থিক সংকট কখনো বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।


২০২০ সালে সুনামগঞ্জে ভয়াবহ বন্যা শুরু হলে খাদ্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন এই ছাত্রনেতা, ছুটে গিয়েছিলেন সুনামগঞ্জের বন্যার্তদের মাঝে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ৩ নম্বর গেটে মুক্ত জ্ঞান চর্চার জন্য তৈরি করেছেন একটি উন্মুক্ত লাইব্রেরি। ডাকসুর সদস্য থাকা অবস্থায় ছাত্রলীগের এই নেতা লড়েছেন গনরুম সমস্যার সমাধানে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ৬ দফা দাবি সম্মিলিত স্মারকলিপি দিয়েও ফল না পাওয়ার প্রতিবাদে নিজের বৈধ সিট ছেড়ে গনরুমে ওঠেন তিনি।


নাটক, সিনেমাতে সৈকতের মতো এমন মানবিক চরিত্র হাজারো দেখা গেলেও সৈকত যেন বাস্তব জীবনের নায়ক। পেয়েছেন তার স্বীকৃতিও। পরিচিত হয়ে উঠেন জাতিসংঘ স্বীকৃত রিয়েল লাইফ হিরো পরিচয়ে। 


২০২০ সালের ১৯ আগস্ট 'বিশ্ব মানবিক দিবসে' বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তরুনদের মধ্যে 'রিয়েল লাইফ হিরো' বা বাস্তব জীবনের নায়কদের কীর্তিগাথা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। এ তালিকায় জায়গা করে নিয়েছিলো বাংলাদেশের চার তরুণ। তাদের মধ্যে একজন তানভীর হাসান সৈকত। 


গত বছরের ৬ ই ডিসেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের ১৩ দিনের মাথায় ২০ ডিসেম্বর রাতে গণভবন থেকে ছাত্রলীগের নতুন শীর্ষ নেতাদের নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এসময় ছাত্রলীগের অন্যতম ইউনিট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার শীর্ষ দুই নেতার নাম ঘোষণা করেন তিনি। কমিটিতে ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পেয়েছেন সৈকত।


সৈকতই প্রথম এবং একমাত্র ছাত্রলীগ নেতা যিনি আন্তজার্তিক অঙ্গন থেকে স্বীকৃতি পেয়ে সংগঠনটির অন্যতম প্রধান ইউনিট ঢাবি শাখার শীর্ষ দায়িত্বে এসেছেন। এ বিষয়ে তার অনুভূতি জানতে চাইলে অনুভূতি প্রকাশ করে তিনি বলেন, 'ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জাতির পিতার আদর্শে উজ্জীবিত এরকম অসংখ্য কর্মী আছে যারা আন্তজার্তিকভাবে স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য। যোগ্যতার মাপকাঠিতে ছাত্রলীগে আমার থেকে অনেক উঁচুমাপের কর্মীও রয়েছে। আল্লাহ হয়তো শ্রমের বিনিময়ে আমাকে এ সুযোগটা করে দিয়েছেন। একটা বড় জায়গা থেকে স্বীকৃতি আসলে সেটা যে কারোর জন্যই আনন্দের, তবে আমি কাজ করার সময় এ আশা নিয়ে কাজ করিনি যে, এ কাজের জন্য স্বীকৃতি পাবো বা বিনিময়ের জন্য কাজ করিনি। তবে জাতিসংঘের থেকে স্বীকৃতি পেয়েছি এটা অনেক ভালো লাগে এবং ছাত্রলীগের জন্য এটা গর্বের যে ছাত্রলীগের একজন নেতা জাতিসংঘ থেকে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সে জায়গা থেকে আমি গর্ববোধ করি।'


ছাত্রলীগ একটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠন। ছাত্রলীগের ঐতিহ্যের সঙ্গে তিনি আর কি কি যুক্ত করতে চান এমন প্রশ্নের জবাবে সৈকত বলেন, 'ছাত্রলীগ বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন এটাই একমাত্র ছাত্রলীগের গুন না, এ ছাড়াও অনেক গুন আছে। ইতিহাস ঐতিহ্যের দিক থেকে বিশ্লেষণ করতে গেলে ছাত্রলীগের বিকল্প কোনো ছাত্র সংগঠন হয়ে দাঁড়াবে না কখনো। ছাত্রলীগ এককভাবে ইতিহাস ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ। ছাত্রলীগ শেখ হাসিনার প্রশ্নে আপোষহীন এবং ছাত্রলীগ মানবিকতা সম্পন্ন একটি সংগঠন।  যেকোনো দূর্যোগ-দূর্বিপাকে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মতো সক্ষমতা একমাত্র ছাত্রলীগেরই আছে। এবং অসাম্প্রদায়িকতা ও প্রগতিশীলতার একমাত্র সঠিক চর্চা ছাত্রলীগই করে থাকে।'


ছাত্রলীগের শীর্ষ দায়িত্বে আসার পর তিনি মানবিক কাজের পরিধি কতটুকু বৃদ্ধি করবেন জানতে চাইলে সৈকত বলেন, 'প্রথমত আমি ছাত্রদের নেতা। আমি ছাত্রদের জন্য কাজ করি। আমি ডাকসুতে নির্বাচিত ছিলাম ছাত্রদের প্রতিনিধি হয়ে। সে জায়গা থেকে সাধারণ ছাত্ররা আমার কাছে প্রথম অগ্রাধিকার। আমি যখন মানুষের জন্য কাজ করেছি সেটা একটা সংকটকালীন মুহুর্ত, দেশের দুঃসময়। স্বাধীনতা সংগ্রামে যারা যুদ্ধ করে তারা সবাই যে রাজনীতি করতো এমনটা না। সাংস্কৃতি কর্মী যুদ্ধ করেছে, চিকিৎসক, প্রকোশলী এবং সাধারণ মানুষ যুদ্ধ করেছে। ঠিক একইভাবে দেশের সংকটকালীন মুহুর্ত যখন আসবে তখন সাধারণ মানুষ সম্পৃক্ত হয়ে যাবে। কিন্তু আমি মূলত ছাত্রদের নেতা। ছাত্রদের নিয়েই কাজ করার আমার অনেক বেশি ইচ্ছা এবং আমি তাদের হয়েই কাজ করতে চাই।'

 

দেশের  ক্লান্তিলগ্ন এবং দেশের যেকোনো দূর্যোগ-দূর্বিপাকে ছাত্রলীগের হয়ে আরো বড় পরিসরে সবার আগে গণমানুষের জন্য কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এই রিয়েল লাইফ হিরো।


আরএক্স/