জবি ছাত্রীকে প্রশ্ন দিলেন শিক্ষক, পরীক্ষায় নকলসহ ধরা
ক্যাম্পাস প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫:৫৬ পূর্বাহ্ন, ১২ই ফেব্রুয়ারি ২০২৩
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার প্রশ্ন সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে। বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থীকে অনৈতিকভাবে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার প্রশ্ন সরবরাহের অভিযুক্ত জুয়েল কুমার সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। এ ঘটনায় বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাঞ্চল্য কাজ করছে।
সংশ্লিষ্ট বিভাগের একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অভিযুক্ত শিক্ষক জুয়েল কুমার সাহা বিভাগের স্নাতক পর্যায়ের চূড়ান্ত বর্ষের এক নারী শিক্ষার্থীকে তার নিজের কোর্স ‘ক্লাসিকাল ইলেকট্রো ডাইনামিকস: ১’সহ আরও কয়েকটি কোর্সের অভ্যন্তরীণ প্রশ্ন পরীক্ষার আগে সরবরাহ করেন।
জানা যায়, গত ৪ ডিসেম্বর ২য় বর্ষের 'ক্লাসিকাল ইলেকট্রো ডাইনামিকস: ১' কোর্সের ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে নকলসহ ওই নারী শিক্ষার্থীকে আটক করে দায়িত্বরত শিক্ষকরা। পরে তার সঙ্গে থাকা নকলের অধিকাংশ প্রশ্নের মিল থাকায় বিভাগের শিক্ষকরা ওই শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে প্রশ্ন পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে এবং প্রশ্ন সরবরাহকারী হিসেবে জুয়েল সাহার নাম বলে।
এদিকে জানুয়ারির শুরুতে বিভাগ থেকে নিজেরাই তদন্ত কমিটি গঠন করে। পরবর্তীতে অভিযোগটির সত্যতা পাওয়া গেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে না জানিয়ে বিভাগের মধ্যে রেখেই চেয়ারম্যান ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। এঘটনায় পরে বিভাগীয় একাডিমেক কাউন্সিলের বৈঠকে এজেন্ডার মধ্যে না রেখেই আলোচনা ছাড়াই ঐ শিক্ষককে সকল-ক্লাস পরীক্ষা থেকে ৩ বছরের জন্য অব্যাহতি দেয়া হয়। তবে সেই কপি পরীক্ষা কমিটি কিংবা বিভাগের অন্য কোনো শিক্ষককে দেয়া হয়নি। এমনকি শাস্তির সিদ্ধান্তের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেও অবগত করেনি বিভাগ।
এবিষয়ে ছাত্রীর নকল ধরা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আঞ্জুমান আরা জানান, 'এমন একটি ঘটনা ঘটেছে। তাকে আমি নকল সহ ধরি এবং তা প্রশ্নের সাথে অনেকটাই হুবহু মিলে যায়। পরে বিভাগীয় প্রধানকে সাথে নিয়ে ঐ ছাত্রীর খাতা কেটে দিয়েছি। আমরা জিজ্ঞাসাবাদের সময় ঐ ছাত্রীকে প্রশ্ন সরবরাহের প্রমাণ পেয়েছি।'
এবিষয়ে বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. কানিজ ফাতেমা কাকলী বলেন, পরীক্ষার হলে ওই ছাত্রীকে নকল সহ ধরার পর প্রশ্নের সাথে তা অনেকটাই মিলে যায়। পরবর্তীতে জিজ্ঞাসাবাদে ওই শিক্ষক তাকে প্রশ্ন দিয়েছেন বলে স্বীকার করেন। তাকে দেয়া ওই শিক্ষকের করা অভ্যন্তরীণ প্রশ্নের হুবহু মিল পাওয়া যায়। পরীক্ষার আগে এটি কোনো শিক্ষার্থীকে দেয়া কোনোভাবেই ঠিক নয়।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শিক্ষক জুয়েল কুমার সাহাকে অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, 'না এমন কোনে ঘটনায় ঘটেনি। এটা ভুল তথ্য। আমি এমন কোনো ঘটনার ব্যাপারে জানি না।'
ঘটনাটি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন বিভাগের চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. নূরে আলম আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, 'এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। তথ্য প্রমাণের কথা বললে তিনি বলেন, এমন কিছু ঘটে থাকলে জানাবো।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, 'এধরণের ঘটনা ঘটলে অবশ্যই শাস্তির আওতাভুক্ত হবে। সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটি সিদ্ধান্ত নিবে।'
এদিকে বিভাগ কোনো শাস্তির সিদ্ধান্ত নেয়ার একতিয়ার নেই বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান। সিন্ডিকেট সভায় শাস্তির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, 'আমি এবিষয়ে অবহিত নই। এমন ঘটনা হলে সেটাতো গুরুতর অপরাধ, অভিযোগ আসলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।'
আরএক্স/