মাঝপথেই কৃষকরা বিক্রি করে দিচ্ছেন ফলন্ত ভুট্টাগাছ


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪:০৫ পূর্বাহ্ন, ১৩ই ফেব্রুয়ারি ২০২৩


মাঝপথেই কৃষকরা বিক্রি করে দিচ্ছেন ফলন্ত ভুট্টাগাছ
মাঝপথেই কৃষকরা বিক্রি করে দিচ্ছেন ফলন্ত ভুট্টাগাছ

চুয়াডাঙ্গা জেলায় মাঝপথেই কৃষকরা বিক্রি করে দিচ্ছেন কাঁচা গাছসহ ভুট্টা। এ গাছসহ ভুট্টা বিক্রির ফলে ধংস হয়ে যেতে পারে পোল্ট্রি শিল্প। 


বর্তমানে মুরগির ডিম, মুরগির মাংসের দাম দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে পোল্ট্রি ফিড। তাই এভাবে কাঁচা গাছসহ ভুট্টা কেটে ফেললে ধংস হয়ে যেতে পারে পোল্ট্রি শিল্পখাত। 


এভাবে গরুর গো খাদ্য হিসাবে ব্যাবহার করলে পোল্ট্রি শিল্প মুখ থুবড়ে পড়বে বলে মনে করছে পোল্ট্রি ব্যাবসায়ী ও খামারিরা। 


এসব উপকরণের দাম বেড়ে গেলে দুধ, ডিম, মাছ ও মাংস সকল জিনিসের দাম বেড়ে যায়। কেননা এটিই খাদ্যের প্রধান ও অন্যতম ফিড ইনগ্রেডিয়েন্ট। বর্তমান ২০২০ সালে করোনা পরবর্তী সময়ে ভুট্টা ৭শ টাকা থেকে ৮শ টাকা মন হিসাবে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে ১৩শ থেকে ১৫শ টাকা করে মন প্রতি দাম যাচ্ছে। এভাবে কাঁচা ভুট্টা কেটে ফেললে সংকটে পড়বে বলে মনে করছে পোল্ট্রি খামারি ও শিল্পের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টরা।


জেলায় মোট আবাদি জমির পরিমান ৯৭ হাজার ৫৮২ হেক্টর। দেশে ভুট্টার চাহিদা এবং দাম থাকায় চলতি বছরে সর্বোচ্চ ৪৯ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। এসব ভুট্টা রোপন করা হয়েছে নভেম্বর মাসের দিকে। এখন ভুট্টার মোচা বের হয়ে সামান্য লালচে আকার ধারণ করছে। ভুট্টা কাটতে এখনও তিন মাস বাকি। 


এরইমধ্যে ঢাকার মেঘডুবি এগ্রো ফার্ম নামের একটি প্রতিষ্ঠান চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন অঞ্চলের গ্রামে কাঁচা গাছসহ ভুট্টা কিনছেন। চাষিরা এক বিঘা ভুট্টার জমি ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি করছেন। 


কোম্পানীর লোকজন ভুট্টা চাষিদের জমি থেকে কেটে এনে মেশিন দিয়ে কেটে সাইলেজ করে বিশেষ ব্যবস্থায় দীর্ঘ মেয়াদি সংরক্ষণ করছেন। 


কৃষক, তৌহিদ, মুলতাব, কাদের, জমির, তোফাজ্জল, সুমনসহ অনেকই বলেন, এখনও ভুট্টা উঠতে তিন মাস বাকি। এরই মধ্যে কাঁচা ভুট্টাসহ গাছ বিক্রি করতে পারছি বলে বিক্রি করে দিয়েছি। কারণ যে ভুট্টা বিক্রি করছি তা পরিচর্চা করে ঘরে তুলতে এখনও ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ আছে। তার চেয়ে মাঝপথে বিক্রি করায় ঝামেলা এড়ানো এবং নতুন ফসল চাষ করার সুযোগ পাচ্ছি। তাই বিক্রি করে দিয়েছি। 


কুষ্টিয়ার হালসা থেকে আসা কোম্পানীর প্রতিনিধি মোস্তফা বলেন, মেঘডুবি এগ্রো ফার্ম নামে আমাদের একটি গরুর খামার আছ। আমাদের এখানে গাছসহ কেনা ভুট্টা প্রক্রিয়াজাত করে তারপর গরুকে খাওয়ানো হয় এবং অবশিষ্টগুলোকে বাজারে বিক্রি করা হয়। 


চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিভাস চদ্র সাহ বলেন, এবছর চুয়াডাঙ্গা জেলাতে সর্বোচ্চ ভুট্টা চাষ হয়েছে। তবে গাছসহ ভুট্রা বিক্রি হচ্ছে কিনা সেটা আমার জানা নেই।


জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ডা. মিহির কান্তি বিশ্বাস বলেন, এটা গরুর জন্য স্বাস্থ্যসম্মত এবং উৎপাদন বৃদ্ধি জাত খাবার। জেলাতে এ খাবার উৎপাদন হয় কিনা আমার জানা নেই। তবে এ সাইলেজ গরুর জন্য খুবই উপকারী। 


দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, আমরা শুনেছি গো খাদ্য হিসেবে সাইলেজ তৈরি হচ্ছে। তবে এ সাইলেজ তৈরি হলে লাভবান হবে কৃষক। লাভবান হবে গরুর খামারিরা। আসলে প্রতি বছরে ভারত থেকে ভুট্টা আমদানী করে থাকে। তারপরেও ঘাটতি থেকেই যায়। কিন্তু ফলন্ত ভুট্টাগাছ এ ভাবে কেটে গো খাদ্য হিসাবে ব্যাবহার করলে মুখ থুবড়ে পড়বে বলে আশা করছে ভুক্তভোগীরা।