মুন্সীগঞ্জে কলকারখানার বায়ুদূষণের কারণে জনজীবন বিপন্ন


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৩৮ পূর্বাহ্ন, ১৫ই ফেব্রুয়ারি ২০২৩


মুন্সীগঞ্জে কলকারখানার বায়ুদূষণের কারণে জনজীবন বিপন্ন
কলকারখানা

মুন্সীগঞ্জে ব্যাঙ্গের ছাতার মতো গড়ে উঠা সিমেন্ট ফ্যাক্টরী ও কলকারখানার কারণে বায়ু দূষণের অসহনীয় মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে রোগবালাইসহ জন জীবন বিপন্ন।  কলকারখানায় সহনীয় মাত্রার চেয়ে আট গুণ বেশি এসপিএম চিহ্নিতের পরও দূষণ রোধে  নেয়া হচ্ছে না কোনো রকম ব্যবস্থা। সরকারী তালিকা হিসাবে জেলার ৭১ কলকারখানায় বায়ুদূষণ করছে। কিন্তু বাস্তবে তা বেড়ে তিন গুণেরও বেশি। বায়ু দূষণের কারণে জেলায় শ্বাসকষ্টের মত রোগের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।


সরেজিমন দেখা গেছে, মুন্সীগঞ্জের ধলেশ্বরী ও শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবস্থিত শাহ সিমেন্ট কারখানাটিতে প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ২০০ মাইক্রোগ্রাম এসপিএমের স্থলে পাওয়া যায় ১ হাজার ৫৫১ মাইক্রোগ্রাম এসপিএম। উক্ত কারখানাটিকে পরিবেশের ক্ষতিসাধনের দায়ে সম্প্রতি ২ লাখ ১৮ হাজার ৪০০ টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছে পরিবেশ অধিদফতর। এরপরও থেমে নেই বায়ুদূষণ। জাহাজ থেকে খোলা ক্রেনে করে রাতদিন ক্লিংকার অপসারণ করা হচ্ছে। মুচলেকা দিয়েও প্রতিষ্ঠানে স্থাপন করা হয়নি ইকো হপার। জেলার ছয়টি সিমেন্ট কারখানার পাঁচটিতে ভয়াবহ বায়ুদূষণ করছে।


অন্যদিকে কালো ধোঁয়ায় বায়ুদূষণ করছে জেলার অসংখ্য বৈধ-অবৈধ ইটভাটাও। এর মধ্যে কালো ধোঁয়ায় বাতাস আচ্ছন্ন করছে ১২ অটোরাইস মিলও। যানবাহনের কালো ধোঁয়া তো আছেই অনবরত। এ জেলায় জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর কারণেও বায়ুদূষণ বেড়েই চলেছে।


স্থানীয়দের সাথে কথা বললে তারা জানান, জেলায় কলকারখানার ধোঁয়ার কারণে বায়ুদূষণ বেড়েছে। এতে অনেকেই শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। এ ছাড়াও অনেকে দীর্ঘমেয়াদি ঠান্ডা-কাশিতে ও ভুগছেন।


পঞ্চাশ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা বলেন, ‘আগে শ্বাসকষ্ট ছিল না। গত বছর থেকে শ্বাসকষ্টে ভুগছি। নিয়মিত ইনহেলার নিতে হয়। এতে আমার চিকিৎসা খরচ অনেক বেড়েছে।’


সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, শিল্পকারখানা পরিবেশবান্ধব না হওয়ায় উৎপাদনের সুফলের চেয়ে ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হচ্ছে। বায়ুদূষণজনিত রোগী জেলায় গত এক বছরে বেড়েছে দ্বিগুণ। আর জীববৈচিত্র্যে ক্ষতি তার চেয়ে বেশি।


বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা)  মুন্সীগঞ্জের সভাপতি অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান জনবানীকে বলেন, কলকারখানা বৃদ্ধি পেলে দেশের জন্য মঙ্গলজনক। কিন্তু বায়ুদূষণের দিকে মনোযোগী হতে হবে। এ ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের নিয়মিত তদারকির অভাবের কারনে বায়ুদূষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।


মুন্সীগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুরুল আলম জনবাণীকে বলেন, বায়ুদূষণ রোধ করতে না পারলে আমাদের শ্বাসকষ্টজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। এ ছাড়াও সংক্রামকজনিত রোগও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।


মুন্সীগঞ্জ পরিবেশ অধিদফতরের উপপরিচালক মিজানুর রহমান জনবানীকে বলেন,জনবলের অভাবে বায়ুদূষণ রোধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। ‘আগে থেকেই জেলায় দূষণ বেড়েছে। কিন্তু আমাদের জনবল না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে  পারছিনা। তাছাড়া বায়ুদূষণ নির্ণয়ে মুন্সীগঞ্জে কোনো ল্যাব নেই। তাই নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠাতে হয় ।


আরএক্স/