খুলনাজুড়ে ইংরেজি ভাষা'র ছড়াছড়ি


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪:৩৪ পূর্বাহ্ন, ২১শে ফেব্রুয়ারি ২০২৩


খুলনাজুড়ে ইংরেজি ভাষা'র ছড়াছড়ি
খুলনাজুড়ে ইংরেজি ভাষা'র ছড়াছড়ি

উদ্যোগ আছে, প্রতিফলন নেই! সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু নিয়ে সামুদ্রিক চিত্র এটাই। সরকারসহ অন্যান্য মহল বিভিন্ন সময়ে বাংলাতে সর্বস্তরের রুপ দেয়ার উদ্যোগ নিয়ে হাজির হলেও ইংরেজিসহ বিদেশী ভাষার দাপট এখন সর্বত্র। বাঙালির ভাষা জয়ের মাস ফেব্রুয়ারি। একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাঙালির মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রাখতে গিয়ে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল রফিক, জব্বার, সালাম, বরকত, শফিউররা। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজব দেশের সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন নিশ্চিত করা যায়নি।


খুলনা জুড়ে ইংরেজিতে লেখা সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড নাম ফলকের ছড়াছড়ি। আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এখন বাংলার পরিবর্তে চলছে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার। দেশের সকল প্রতিষ্ঠানে বাংলা ভাষা সাইনবোর্ড ও বাংলা ভাষার প্রচলন আইনটি ১৯৮৭ সালের ৮মার্চ পাস হয়। কিন্তু দীর্ঘ বছরেও আইনটি অনুসরণ না করাই প্রতিষ্ঠানগুলো এখন ইংরেজি ভাষার ব্যবহার নিয়ে প্রতিযোগিতা নেমেছে। শুধু তাই নয় সম্প্রতি খুলনার ছোট বড় প্রতিষ্ঠানসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধাণ গেইটেই ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে আর এটি বাংলা ভাষার জন্য অপমান আর অবমাননা করা হচ্ছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সচেতন মহল। 


ভাষা আন্দোলনের সাত দশক পার হলেও সর্বস্তরে বাংলা ভাষা ব্যবহার নিশ্চিত হয়নি বরং দিন দিন অবহেলা আর অপেক্ষার পাত্র হচ্ছে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি। শুধু তাই নয় সংবিধান স্বীকৃতি হলেও দোকানপাটের নাম থেকে শুরু করে বিভিন্ন সাইনবোর্ড, চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্র, আদালতের রায়, বিয়ে বা জন্মদিন, বউ ভাত কিংবা কোন কিছুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও চলে ইংরেজির খবরদারিত্ব। 


ভাষা আন্দোলনের সাত দশক পেরীয় প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির হিসাব নিকাশ করতে গেলে তাই প্রত্যাশার তুলনায় প্রাপ্তি বড়ই কম। স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা বাংলা হওয়া সত্ত্বেও রাষ্ট্রীয় জীবনে সর্বস্তরের তথা উচ্চশিক্ষা সহ প্রশাসনে, আদালতে মাতৃভাষা বাংলার ব্যবহার অতি সীমিত। ১৯৪৭ সালে ভারত বর্ষ ভাগ হয়ে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর প্রথম আঘাতটাই আসে বাংলা ভাষার ওপর। মাতৃভাষার অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত ৫২-এর ভাষা আন্দোলন। মাতৃভাষার জন্য এমন বিড়াল আত্মদানের দৃষ্টান্ত পৃথিবীর ইতিহাসে আর দ্বিতীয় টি নেই। 


খুলনা পাবলিক কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ তাকদীরুল গণী বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাঙালি এনে দিয়েছে বিশ্বজুড়ে সবার মাতৃভাষার মর্যাদা। যে জাতির ইতিহাসে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের জন্ম হয়েছে সে জাতির অভ্যন্তরে সর্বত্র বাংলা ভাষার প্রচলন নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। পৃথিবীর ইতিহাসে মাতৃভাষার জন্য রাজপথে বুকের রক্ত ঢেলে দেয়ার প্রথম নজির এটি এবং একই সাথে স্বীকৃতি ও পেয়েছে। উর্দু হটিয়ে ভাষা আন্দোলনের সাত দশক পার হলেও ইংরেজি ভাষার আধিপত্য ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ফেব্রুয়ারি এলে আমাদের মাতৃভাষার চেতনা দেখা দেয়, অথচ বছর জুড়ে চলে বিভিন্ন ভাষার উৎসব। এগুলো দেখে বোঝার উপায় নাই বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের রয়েছে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম আর তাজা রক্ত ঢেলে প্রাণ উৎসর্গ করার ইতিহাস। বাংলা শুধু আমাদের মাতৃভাষায় নয় আমাদের গৌরব অহংকারের প্রতিচ্ছবি।


পৃথিবীতে একমাত্র ভাষায় যার জন্য অকাতরে রক্ত দিয়েছে এদেশের বীর সন্তানেরা। বাংলা ভাষাকে আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে সারা বিশ্ব স্বীকৃতি দিয়েছে। অথচ ভাষা আন্দোলনের সাত দশক পা ও স্বাধীনতার পাঁচ দশক পর দেশে সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন নিশ্চিত করা যায়নি। দেশের সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রয়োগ নিশ্চিতকরণের জন্য রাষ্ট্রকেই দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি সচেতন মহলের।